ঢাকা, শনিবার, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ৩১ মে ২০২৫, ০৩ জিলহজ ১৪৪৬

রাজনীতি

‘দেশের মানুষ শহীদ জিয়াকে হৃদয়ে ধারণ করে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২:০০, মে ২৯, ২০২৫
‘দেশের মানুষ শহীদ জিয়াকে হৃদয়ে ধারণ করে’ বিএনপির আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি প্রধান বক্তা ছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: জান্নাতুল ফেরদাউস

‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শুধু একজন সৈনিক বা স্বাধীনতার ঘোষক নন, একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি ছিলেন জুলিয়াস সিজারের মতো।

এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। বর্তমান রাজনীতিতেও শহীদ জিয়া প্রাসঙ্গিক। তার রাজনীতি ও রাষ্ট্রপরিচালনার নীতি এখনো অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। বাংলাদেশের মানুষ শহীদ জিয়াকে হৃদয়ে ধারণ করে। ’

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাজধানীর রমনার আইইবি মিলনায়তনে দলটির এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। সভায় স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ভাবনা এবং ভবিষ্যতের সংগ্রামের রূপরেখা উঠে আসে বক্তাদের বক্তব্যে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল হাসান, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ প্রমুখ।

সভা সঞ্চালনা করেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। সভার শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন।  

‘বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক অবিচ্ছেদ্য নাম শহীদ জিয়াউর রহমান’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, ‘প্রতিবছর এই দিনটি আমাদের পরিবারে আসে এক বেদনাবিধূর স্মৃতি নিয়ে। এই দিনে শুধু আমাদের পরিবার নয়, বরং সমগ্র দেশের মানুষ হয়ে পড়েছিল বেদনার্ত ও অভিভাবকহীন। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক অবিচ্ছেদ্য নাম শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। ’

চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা করে তিনি এ দেশের সঙ্গে তার নাম অবিচ্ছেদ্য করেছিলেন। সেই চট্টগ্রামেই এক সফল, সৎ, দূরদর্শী ও প্রকৃত দেশপ্রেমিক প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। ’

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘এ দেশে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বনির্ভরতা ও উন্নয়ন এবং নিজস্ব জাতীয়তাবাদ সৃষ্টির অনন্য রূপকার শহীদ জিয়া। যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা আর সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াইয়ে তিনি শাহাদাতবরণ করেছেন—সেই গণতন্ত্রের নিরবিচ্ছিন্ন যাত্রা আজও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রতি পদে পদে। ’

সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘খুব শিগগিরই আমরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরায় প্রতিষ্ঠিত দেখতে পাব—এই হোক শহীদ জিয়ার শাহাদাতবার্ষিকীতে আমাদের অঙ্গীকার। এই লক্ষ্যে সুশৃঙ্খলভাবে এগিয়ে চলার জন্য আমি বিএনপির সব পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে জানাচ্ছি। ’

তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘মনে রাখবেন, সবার জন্য গণতন্ত্র ও উন্নয়নের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধানের যে রাজনীতি শহীদ জিয়া রেখে গেছেন তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে। আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। ’

বর্তমান রাজনীতিতেও শহীদ জিয়া প্রাসঙ্গিক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘আজকে সবার আলোচনায় একটি বিষয় পরিষ্কার, আজকের দিনে বর্তমান রাজনীতিতেও শহীদ জিয়া প্রাসঙ্গিক। শহীদ জিয়ার রাজনীতি ও রাষ্ট্রপরিচালনার নীতি এখনো আমাদের জন্য অনুসরণীয় এবং অনুকরণীয়। ’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষককে জানতে বা বুঝতে হলে কারও সঙ্গে তুলনা করার কোনো প্রয়োজন নেই। শহীদ জিয়া মানেই একটি স্বনির্ভর, আত্মমর্যাদাশীল এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। ’

শহীদ জিয়া তার কর্মের মধ্যেই বেঁচে আছেন জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ শহীদ জিয়াকে হৃদয়ে ধারণ করে। ’

তিনি নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ১০ মাসেও নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা না করায় দেশে ও রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এতে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। ’

অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে জানিয়ে তিনি দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করার আহ্বান জানান।

জিয়াউর রহমানকে সফল রাষ্ট্রনায়ক আখ্যা দিয়ে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতির পথ এ দেশকে দেখিয়েছেন জিয়াউর রহমান। ’

তার জানাজার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, মুসলিম বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রনায়কের জানাজায় এর আগে এত মানুষের উপস্থিতি কোথাও দেখা যায়নি।

ড. আবদুল মঈন খান জিয়াউর রহমানের স্মৃতিচারণ করেন এবং নেতাকর্মীদের খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক আদর্শ অনুসরণ করে তারেক রহমানের নেতৃত্বে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

‘জিয়াউর রহমান এলেন দেখলেন জয় করলেন’
৩০ মে জাতি শুধু একজন রাষ্ট্রপতিকেই হারায়নি, বাংলাদেশকেই হারিয়ে ফেলেছিল উল্লেখ করে ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, জিয়াউর রহমান ছিলেন জুলিয়াস সিজারের মতো। এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। তাকে জনপ্রিয়তার জন্য কখনো চেষ্টা করতে হয়নি। বরং জনপ্রিয়তাই তাকে অনুসরণ করেছে।

‘দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে হবে’
প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ টেনে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘উনি বলেছেন, মাত্র একটি দল ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বলছে। উনি বলছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হলে খুব তাড়াহুড়ো করে নাকি দিতে হবে। কিন্তু আমরা তাকে বলতে চাই, চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম। আমরা তাকে বলেছি, আপনি আগে আপনার উপদেষ্টাদের সংস্কার করুন। আপনার উপদেষ্টা পরিষদ নিরপেক্ষ নয়। ’

বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘একটা ন্যাশনাল কনসেনসাস করে সংস্কার এক মাসের মধ্যে করে দেওয়া সম্ভব। যদি আপনি না পারেন, আমাদের বলেন, আমরা করে দিই। সংস্কারের জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, নির্বাহী আদেশে সেসব সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে হবে। ’

হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার সিদ্ধান্ত এবং পঁচাত্তর পরবর্তী তার রাষ্ট্র পরিচালনার দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেন। তিনি এ সময় বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন নির্লোভ ও সাদামাটা মানুষ। ক্ষমতার প্রতি তার কোনো লোভ ছিল না। জিয়াউর রহমানের সৈনিক হিসেবে আমরা গণতন্ত্রকে শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত করবো। ’

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘জিয়াউর রহমান শুধু একজন সৈনিক বা স্বাধীনতার ঘোষক নন, একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। কূটনৈতিক দক্ষতায় তিনি অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে চমৎকারভাবে সমৃদ্ধ করেছিলেন। অত্যন্ত সফলভাবে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক রক্ষা করেছিলেন, যে পররাষ্ট্রনীতি বাংলাদেশের জন্য এখন খুব প্রয়োজন। ’

রুহুল কবির রিজভী তার ভার্চুয়াল বক্তব্যে বলেন, ‘জিয়াউর রহমান শুধু নিজের দেশেই নয়, পুরো বিশ্বে সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি তার মহিমান্বিত আত্মদানের মধ্য দিয়ে একটি জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে কীভাবে রক্ষা করতে হয়, তা আমাদের শিখিয়ে গেছেন। দেশি-বিদেশি যে চক্রান্ত চলছে, জিয়াউর রহমানের আদর্শ ধারণ করে সেসব চক্রান্তকে উৎখাত করতে একতাবদ্ধ হতে হবে। ’

‘যতবার বাংলাদেশের গণতন্ত্র হোঁচট খেয়েছে, বিএনপি তা পুনরুদ্ধার করেছে’
সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, ‘স্বাধীনতার মহান ঘোষক, যার ঘোষণার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, যিনি বাকশাল থেকে বাংলাদেশের মানুষকে বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছেন, যিনি বাংলাদেশের মানুষকে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ঐক্যের দর্শন দিয়েছেন, যিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বাংলাদেশের মানুষকে উপহার দিয়েছেন, যে দল গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছে। যতবার বাংলাদেশের গণতন্ত্র হোঁচট খেয়েছে, বিএনপি তা পুনরুদ্ধার করেছে। দীর্ঘ নয় বছর দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানুষ এই দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘নব্য ফ্যাসিবাদকে এ দেশ থেকে মানুষ আন্দোলন করে বিদায় করেছে এ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে। আজকে নির্বাচন না দিয়ে এই গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। অনির্বাচিত সরকার দিয়ে দেশ পরিচালনা করতে চাইছে। অনির্বাচিতভাবে দেশ পরিচালনা করে কেউ কিন্তু বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। ’

এসবিডব্লিউবি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

রাজনীতি এর সর্বশেষ