ঢাকা: ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরের ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে এর শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং দোষীদের বিচার করাসহ ৭ দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক।
এ সময় এসব দাবি আদায়ে তিনি কর্মসূচিও ঘোষণা করেন।
শনিবার (২৪ মে) রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘শাপলা চত্বরে: শাহদতের রক্তে রাঙ্গা অবিনাশী চেতনা’ শীর্ষক কনফারেন্সে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক সাত দফা দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো-শাপলা চত্বরে শহীদ ও আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে। শহীদ পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসা এবং পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসনের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। বিশেষ করে শহীদ পরিবার ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের নিয়মিত ভাতা দিতে হবে; শাপলা চত্বরের ঘটনার ইতিহাস জাতীয় শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; 'জুলাই ঘোষণাপত্রে শাপলা চত্বরের ঘটনাকে জাতীয় ট্রাজেডি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে; রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে যাচাইকৃত শহীদ তালিকা প্রস্তুত করে তা জাতীয় নথিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনকারী এ গণহত্যার দায়ীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; হেফাজতে ইসলাম ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে; আইনজ্ঞ ও নিরপেক্ষ নাগরিকদের সমন্বয়ে ‘শাপলা গণহত্যা’ তদন্ত কমিশন গঠন ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের সুপারিশ প্রকাশ করতে হবে।
মামুনুল হকের ঘোষণা দেওয়া কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী শনিবার (৩০ আগস্ট) শাপলা চত্বরের ঘটনায় যারা সংবাদ, প্রতিবেদন ও গবেষণা, সাহিত্য-রচনা, চিকিৎসা সহায়তা, আইনগত লড়াই কিংবা স্মৃতি সংরক্ষণমূলক উদ্যোগ নিয়েছেন তাদের সম্মাননা প্রদানের জন্য একটি সম্মিলনীর আয়োজন করা হবে।
এ সময় ককনফারেন্সে শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে হেফাজত নেতাকর্মীদের সাক্ষী দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, শাপলা চত্বরে গণহত্যায় খুনি হাসিনাসহ তার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যারা হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল তাদের সবার নামে মামলা দিতে হবে। বাংলাদেশের মাটিতে শাপলা ‘গণহত্যা’র বিচার হতে হবে। এজন্য সব আলেমদের অনুরোধ করব আপনারা মামলার সাক্ষী দেন। শুধু ফেসবুকে লড়াই করলে হবে না।
তিনি বলেন, পাশাপাশি আমরা দেখেছি বাংলাদেশে কোন ঘটনা ঘটলে এর ইতিহাস সংরক্ষণ করা হয়। তাই আমাদের দাবি থাকবে শাপলার ইতিহাসকে সংরক্ষণ করে এটিকে পাঠ্যপুস্তকে লিপিবদ্ধ করতে হবে। আর শাপলা চত্বরে গণহত্যায় নিহতদের শহীদের মর্যাদা দিতে হবে।
কনফারেন্সে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, শাপলা চত্বরে যে গণহত্যা হয়েছিল সে দিন আমি আর মাহমুদূর রহমান ভাই দুইজনই জেলে ছিলাম। সেদিন দুজনই পিজি হাসপাতালে ছিলাম। সে সময় মাহমুদুর রহমান ভাই সাতদিন অনশন করছিলেন। আমি তখন ভাইকে বলেছিলাম অনশন করে লাভ নেই, আপনি মারা গেলে হাসিনা খুশি হবে। কোনো সময় জেলখানায় কোনো সময় আয়না ঘরে আবার কোনো সময় মৃত্যু গহব্বরে আমার নিজেরই সময় কেটেছে দীর্ঘ ১৬টা বছর। শাপলা চত্বরে শহীদদের বিচার দেখার জন্য আল্লাহ যেন আমাকে অনেকদিন বাঁচিয়ে রাখে।
তিনি বলেন, আমি হেফাজতে ইসলামের নেতাদের বলতে চাই আপনারা এখন পর্যন্ত একটা পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতে পারলেন না শহীদদের। শাপলা চত্বরে শহীদদের তালিকা হেফাজতের পক্ষ থেকে কেন করছেন না। প্রতিটি শহীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা আপনারা নিজেরা করুন, আর সেখানে প্রত্যেক শহীদের নাম ছবিসহ যেন উল্লেখ করা থাকে। তাহলেই এদেশের মানুষ তাদের চিরকাল স্মরণ করবে।
বিএনপির এ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, শেখ হাসিনা এমন জঘন্য হত্যাকারী যে সে রাতের অন্ধকারে সমস্ত আলো পানি নিভিয়ে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। এত পরিমাণ নিরীহ আলেমদের হত্যা করল তারপরও ফ্যাসিস্ট হাসিনা তাদের নিয়ে তার আমলে তামাশা করে গেছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার রাজনৈতিক এবং দলীয় সিদ্ধান্তে এসব হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল। আসমান থেকে হেলিকপ্টার দিয়ে এদেশের নিরিহ শিশু-নারীসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে খুনি হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, এরপরও বাংলাদেশের সব হত্যাকাণ্ড নিয়ে তারা (আওয়ামী লীগ) ন্যূনতম অনুশোচনাবোধ করে না। দোষ শিকার করেন ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু এসব না করে উল্টো এদেশের কোন উদ্বোধনকারীদের তারা দোষী বলে দাবি করছেন।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আমরা এখন যেই অবস্থায় আছি তাতে যদি আমরা সব শহীদদের বিচার চাই তাহলে এ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মতো আরো ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। তা না হলে দ্রুত এ বিচার কাজ সম্পন্ন করা যাবে না। তবে বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত কোন বিচার কাজ দৃশ্যমান নয়। তবে আমরা আশা করব, বিচার কাজ যেহেতু সময় সাপেক্ষ তবুও খুনি হাসিনার আমলে সংঘটিত একটি মামলা হলেও যেন বিচার কাজ শেষ হয়েছে এটা যেন আমরা দেখে যেতে পারি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা বশিরউল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমাদ, এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান মো. দিদারুল আহমেদ, মাওলানা রুহুল আমিন সালেহ, গণঅধিকার পরিষদ সভাপতি নুরুল হক নূরসহ শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডে নিহত শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
ইএসএস/জেএইচ