ঢাকা: চার দফা দাবিতে বেশ কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির সব কার্যক্রম ‘শাটডাউন’ ঘোষণা করেছেন তারা।
এমন পরিস্থিতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোকে যৌক্তিক আখ্যা দিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। ‘যৌক্তিক’ দাবিগুলো মেনে নিতে এত গড়িমসি কেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন এনসিপির এই নেতা।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সারজিস আলম বলেন, ‘তাদেরকে (জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থী) আবার রাস্তায় নামতে হলো কেন? বছরের পর বছর ধরে পুরো দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাষ করা হয়েছে। অথচ ঢাকার বুকে দেশের প্রথম সারির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো আবাসিক হল নেই। মেয়েদের জন্য নামমাত্র একটি আবাসিক হল আছে। একাডেমিক স্পেসও চাহিদার তুলনায় নেই বললেই চলে। অথচ যেই সদরঘাট এলাকায় এই বিশ্ববিদ্যালয়টি অবস্থিত সেটি ঢাকার বসবাসের সবচেয়ে অনুপযোগী একটি জায়গা। সেখানে হাজার হাজার শিক্ষার্থী কীভাবে থাকবে কিংবা থাকে এগুলো নিয়ে কি কারো মাথাব্যথা নাই?’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের অনেক জায়গা এবং ভবন এতদিন ধরে দখল করেছিল আওয়ামী লীগের দখলদাররা। কিন্তু এখনো কেন তারা তাদের জায়গা কিংবা ভবনগুলো ফিরে পাচ্ছে না? কেন তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসের কাজ সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দিয়ে দ্রুতগতির সঙ্গে করা হচ্ছে না? কেন একনেকে এখনো সেই বিল পাস হচ্ছে না?’
সারজিস আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তো বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিল। তাদের জন্য আলাদা করে কি হলো? কোন সংস্কারটা করা হলো? কোন সুযোগ সুবিধাটা বাড়লো? জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌক্তিক দাবিগুলো অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হোক। নামকাওয়াস্তে নয় বরং বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপে প্রতীয়মান হোক। ’
প্রসঙ্গত, গত বুধবার (১৫ মে) বেলা ১১টায় চার দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’ অভিমুখে লংমার্চ শুরু করেন জবির শিক্ষার্থীরা। লংমার্চটি গুলিস্তান হয়ে মৎস্য ভবন পার হয়ে কাকরাইল মসজিদের সামনে পৌঁছালে দুপুর পৌনে ১টার দিকে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে গরম পানি ছোড়া হয়। শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জও করে পুলিশ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
পরে রাতে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম শিক্ষার্থীদের কাছে আসেন। সেসময় তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফ করছিলেন। কিন্তু তার ব্রিফিংয়ে অসন্তুষ্ট হন শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপদেষ্টা মাহফুজকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেওয়া হতে থাকে। বক্তৃতার এক পর্যায়ে তাকে লক্ষ্য করে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে বোতল ছুড়ে মারা হয়। উপদেষ্টা ব্রিফিং বন্ধ করে চলে যান।
এদিকে উপদেষ্টা মাহফুজের বক্তব্যে অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান নেন।
জবি শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি হলো—বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি চালু করা, জবির প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করে অনুমোদন, দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ একনেক সভায় পাস ও বাস্তবায়ন, ১৪ মে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের অতর্কিত হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
এসএএইচ