ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

‘৯ হাজার ভোট পিটাইয়া দেব’ আ.লীগ নেতার ভিডিও ভাইরাল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০২৩
‘৯ হাজার ভোট পিটাইয়া দেব’ আ.লীগ নেতার ভিডিও ভাইরাল

মাদারীপুর: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একটি ইউনিয়নের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ৯ হাজার ভোট পিটাইয়া (সীল মেরে) দেবে, আওয়ামী লীগ নেতার এমন বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।  

মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে মাদারীপুরের কালকিনির মিয়ারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে এ বক্তব্য দেন কালকিনি উপজেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি সিরাজুল আলম মৃধা।

তিনি কালকিনির শিকারঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।

ভাইরাল হওয়া ২৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একটি কক্ষে বেশ কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছেন। চেয়ারে বসে আছেন আরও কয়েকজন। এ সময় সামনে থাকা লোকজনের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন সিরাজুল আলম মৃধা।  

বক্তব্যের একপর্যায়ে নির্বাচনের দিন তার ইউনিয়নে ৯ হাজার ভোট সিল মেরে দেওয়ার গ্যারান্টি নেন তিনি।

২৬ সেকেন্ডের ভাইরাল হওয়া বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো - 

‘এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি শিকারমঙ্গল ইউনিয়নের ভোট আমি, ৯ হাজার ভোট আমি পিটাইয়া দেব। আমি শিওর দিলাম। ভাই-ব্রাদারকে নিয়া। সবার সামনে প্রতিশ্রুতি দিলাম। হাতেপায়ে ধরিয়া লাগলেও আমি পিটাইয়া দেব। আমি একা নয়, ভাই-ব্রাদারকে সাথে নিয়া ভোট পিটাইয়া দেব। এখানে এমপি হইলে আরো ৫-৭ টা ইউনিয়নও পিটাইতে হবে। ’

এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত সিরাজুল আলম মৃধার ব্যক্তিগত মোবাইল কল দিলে তিনি বলেন, ‘আমি একাধিকবার ওই বিদ্যালয়ে গিয়েছি। তবে, কখন কোন ভিডিও কে করছে জানি না। আমি এতো বোকা নয়, যে প্রকাশ্যে এমন বক্তব্য দিব। কিছু লোক আমার পেছনে লেগেছে, তারা এসব ভিডিও এডিট করে ভাইরাল করেছে। আমি ভোট পিটাইয়া দেব, এমন কোনো বক্তব্য দেই নাই। ’

এ ব্যাপারে মাদারীপুর-০৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম বলেন, ‘এভাবে প্রকাশ্যে ভোটে সিল মারবে - এমন বক্তব্যে সাধারণ ভোটাররা আতঙ্কিত হচ্ছেন। সুষ্ঠু ভোট হবে, এটা নিয়ে এখন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সিরাজুল আলম মৃধা যে, বক্তব্য দিয়েছে এটা নিয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে নির্বাচন কমিশনে। আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। ’

মাদারীপুর-০৩ আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ জানান, ‘কোন প্রার্থীর পক্ষে এমন বক্তব্য কেউই দিতে পারে না। যদি ভোটের ব্যালট পেপারে সিল মেরে দেবে, এমন কোনো ভিডিও থাকে তবে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

মাদারীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহাম্মেদ আলী জানান, লিখিত অভিযোগ আমাদের দপ্তরে এখনো আসেনি। তবে, নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ চেয়ারম্যান, রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রথমে লিখিত যাবে। নির্বাচন অফিসে অনুলিপি আসতে পারে। কাগজ হাতে পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করা হবে।

প্রসঙ্গত, মাদারীপুর-০৩ আসনে ৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এই আসনের সকল প্রার্থী মনোনয়ন বৈধতা পেয়েছেন। তারা হলেন - আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. আবদুস সোবহান গোলাপ মিয়া, স্বতন্ত্রপ্রার্থী কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসা. তাহমিনা বেগম, সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহীন, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী প্রবীণ হালাদার, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির নিতাই চক্রবর্তী, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের মনোনীত প্রার্থী নকুল কুমার বিশ্বাস, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. আব্দুল খালেক, জাকের পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন।  

কালকিনি ও ডাসার উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং মাদারীপুর সদরের পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-৩ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৮শ’ ৫৬ জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮৬ হাজার ৮শ’ ৯৩ ও নারী ভোটার ১ লাখ ৭০ হাজার ৯শ’ ৬০ জন। এছাড়া হিজড়া ভোটারের সংখ্যা ৩ জন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।