ঢাকা: সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে কারাবন্দি ও সাজাপ্রাপ্ত নেতাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানববন্ধন করেছে বিএনপি। মানববন্ধন শেষে প্রধান বিচারপতির কাছে স্মারকলিপি দিতে যাত্রা শুরু করেন বিএনপির নেতা-কর্মীদের স্বজনেরা।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) বেলা দেড়টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন শেষে প্রধান বিচারপতি বরাবর স্মারকলিপি দিতে যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে বেলা ১১টায় মানববন্ধনে অংশ নিতে বিএনপি নেতাদের স্বজনেরা প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হতে থাকেন।
এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খানসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
এতে সংহতি প্রকাশ করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।
কর্মসূচিতে কারাগারে মারা যাওয়া বিএনপি নেতা আবুল বাসারের স্ত্রী বলেন, আমার সন্তানকে এতিম করেছে, পুলিশ আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে অমানবিক নিষ্ঠুর নির্যাতন করেছে, যার ফলে আমার স্বামীর মৃত্যু হয়। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।
ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা লিয়ন হক ও রাজিব হাসানের এক স্বজন বলেন, আমার দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, এক ভাইকে পুলিশ এক মাস গুম করে পরে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। এক বছর আগে আমার ভগ্নিপতিকে লক্ষ্মীপুরে র্যাব গুলি করে মেরে ফেলেছে, তিনি বিএনপি করতেন, পরে আমরা ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিলে র্যাব আমাদের লাশটা দেয়। তারা প্রথমে লাশ পর্যন্ত দিতে চায়নি।
যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনের স্ত্রী বলেন, আমার কোথায় যাব? আমার স্বামীর মামলার বাদী পুলিশ, মামলা করলোও পুলিশ,সাক্ষী দিলও পুলিশ- এটা কেমন বিচার!
ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা আবদুল হাই ভুঁইয়া বলেন, আমার তিন ছেলে ও এক ছেলের বউকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করে অমানুষিক নির্যাতন করছে জেলে, যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের দেখতে গেলেও আত্মীয় স্বজনকে আটকে থানায় হয়রানি করছে পুলিশ।
২০১৩ সালে ‘গুম হওয়া’ বিএনপি নেতা কাউসার হোসেনের স্ত্রী মিনা আক্তার বলেন, আমার সন্তানের বয়স ১৩ বছর, সে এখনো বুঝ হওয়ার পর বাবাকে দেখেনি। যখন সে বলে মা আমার বাবার মুখ কি আর দেখতে পারবো না? তখন আমার বুকটা ফেটে যায়। ’
রুহুল কুদ্দুস তালুকদারের ছেলে ব্যারিস্টার তাবাসসুম বলেন, আমার বাবা গুরুতর অসুস্থ, তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত! অথচ তাকে মুক্তি না দিয়ে জেলে ভরে রেখেছে- আমার বাবার মুক্তি চাই।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা অনেক নির্যাতিত উল্লেখ করে মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস বলেন, আমার বাড়িতে কিছুদিন আগে বোমা হামলা চালানো হয়েছিল। সে যে কী ভয়াবহ দৃশ্য। সৌভাগ্যক্রমে সেদিন আমার নাতি-নাতনিরা বাসায় ছিল না, তারা সবাই স্কুলে ছিল। সেদিন পুলিশ যত রকমের অ্যাভিডেন্স ছিল সব কিছু নিয়ে গেছে। এমনকি সিসিটিভির ফুটেজ পর্যন্ত নিয়ে চলে গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, গত ২৮ তারিখের পর থেকে আমাদের বিএনপির প্রায় ২০ হাজারের বেশি নেতা-কর্মী কারাগারে আটক। আজকে এসব নেতা-কর্মী রিমান্ডে নির্যাতনের এবং পরিবারের সদস্যরা হয়রানি শিকার। তাদের অবস্থা আজকে করুণ।
সেলিমা রহমান বলেন, আমরা লড়াই করছি জনগণের জন্য, জনগণের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য। আপনারাও নেমে আসুন। দেখা যাক কতজনের রক্তের ওপর দিয়ে বর্তমান সরকার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আবারও ক্ষমতায় যান।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২৩
ইএসএস/এমএম