ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

রাজনীতি

ফখরুলের মতো মিথ্যাচার করা রাজনীতিবিদ দেখিনি: তথ্যমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২৩
ফখরুলের মতো মিথ্যাচার করা রাজনীতিবিদ দেখিনি: তথ্যমন্ত্রী

ঢাকা: বাংলাদেশের রাজনীতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের মতো এমন জঘন্য, কুৎসিত, বীভৎস্য, ঘৃণ্য মিথ্যাচার করা রাজনীতিবিদ আমি দেখিনি বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, সম্ভবত তার মহাসচিবের পদটা একটু নড়বড়ে হয়ে গেছে, যে কারণে মিথ্যাচারের মাত্রাটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ পরিচালনা ও নির্দেশনায় এবং খালেদা জিয়ার অনুমোদনক্রমে একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা পরিচালনা করা হয়েছিল। শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে, পুরো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে নিচিহ্ন করার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল।

হাছন মাহমুদ আরও বলেন, আমি পত্রপত্রিকায় দেখলাম মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব গতকাল গ্রেনেড হামলা নিয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন। তিনি বলেছেন, যে জায়গায় অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, সেই জায়গায় না করে অন্য জায়গায় কেন করল? আসলে আমরা সেদিন অনুমতি চেয়েছিলাম মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ করার জন্য কিন্তু মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ করার অনুমতি আমাদের দেওয়া হয়নি। আগের দিন রাতের বেলা আমাদের পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশ করার জন্য বলা হয়। শেষ মুহূর্তে আমাদের পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশ করার জন্য মৌখিক অনুমতি দেওয়া হয়। সে কারণে আমরা মুক্তাঙ্গন বাদ দিয়ে পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশ করেছিলাম।

তিনি বলেন, মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ করার অনুমতি না দেওয়াই প্রমাণ করে গ্রেনেড হামলা পরিচালনা করার সুবিধার্থেই মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। কারণ মুক্তাঙ্গনে গ্রেনেড ছোড়ার সুবিধা সেভাবে নেই। আমাদের দলীয় কার্যালয়ের চারপাশে বিল্ডিং, সেসব বিল্ডিং থেকে গ্রেনেড ছোড়া যায়। সেজন্য সেখানে সমাবেশ করতে বলা হয়। যখন আমরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করি তখন সেখানে বিল্ডিংয়ের ওপর সাদা পোশাকে বা পোশাকধারী পুলিশ থাকে, কিন্তু সেদিন কেউ ছিল না। একুশে আগস্ট কোনো পুলিশ পাহারা ছিল না। পুলিশ পাহারার পরিবর্তে বিএনপি সরকার, তারেক রহমান সেখানে জঙ্গিদের অবস্থান নিশ্চিত করেছিল এবং সেখান থেকে গ্রেনেডগুলো ছোড়া হয়েছিল।

এটি নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মিথ্যাচার করেছেন উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের মতো একটি লোক এরকম ন্যক্কারজনক, জঘন্য, কুৎসিত, বীভৎস্য, ঘৃণ্য মিথ্যাচার করতে পারে। তিনি যেহেতু বিএনপির মহাসচিব, তার প্রতি সম্মান রেখেই বলতে চাই, আসলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার মতো এমন জঘন্য, কুৎসিত, বীভৎস্য, ঘৃণ্য মিথ্যাচার করা রাজনীতিবিদ আমি দেখিনি। একুশে অগাস্টের মতো এমন একটি ঘটনাকে তিনি বলেছেন, এটা আওয়ামী লীগের সাজানো নাটক। কী রকম জঘন্য, ঘৃণ্য, বীভৎস্য মিথ্যাচার একটি দলের মহাসচিব করতে পারে।

তিনি বলেন, আজকে দিবালোকের মতো স্পষ্ট তারা এটি ঘটিয়েছে। আমি গ্রেনেড হামলা মামলার সাক্ষী, দুই দফা সাক্ষী দিয়েছি। সাক্ষী-প্রমাণে সবকিছু স্পষ্ট হয়েছে। সে মামলায় আসামিরা কনটেস্ট করেছে, এরপর তাদের শাস্তি হয়েছে। বিএনপি তো হত্যার রাজনীতি করে, যে দল হত্যার রাজনীতি করে সেই দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

একুশে আগসের রায় বাস্তবায়ন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিচার হয়েছে, শাস্তি হয়েছে। আসামিদের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে আপিল হয়েছে। উচ্চ আদালতে বিচার হয় না, বিচারে কোনো ভুল হয়েছে কিনা সেটি বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়। উচ্চ আদালতে প্রক্রিয়া শেষ হলেই সাজা কার্যকর হবে। অনেক আসামি গ্রেপ্তার আছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন আওয়ামী লীগ সরকার কিছু একটা ঘটিয়ে সেটার দায় বিএনপিকে দিতে চায়, এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, মির্জা ফখরুল কাল যেটি বলেছেন, ওনার কথার মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়, তারা কিছু ঘটাতে চাচ্ছেন। কাল মুখ ফসকে তিনি বলেছেন। তারা এমন একটা কিছু ঘটাতে চাচ্ছেন, যাতে দেশে নির্বাচন ভণ্ডুল করা যায় এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা যায়।

তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, সরকার ব্রিটিশ সরকারের সাথে আলাপ-আলোচনা করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটি দেখছে।

ভারতের পত্রিকাগুলো প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, বাংলাদেশে বর্তমান সরকারকে সরিয়ে দিলে আবার জঙ্গিবাদ মাথাচারা দিয়ে উঠবে, এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, এটা ভারতীয় পত্রিকার বিশ্লেষণ। তবে এটি তো সত্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্ব সম্প্রদায় তার প্রশংসা করছে। বিপরীতে যারা ক্ষমতায় আসতে চায়, তাদের সাথে জামায়াতে ইসলামী, তাদের মধ্যে আছে জঙ্গিরা, জোটে আছে জঙ্গিরা। মৌলবাদী অপশক্তির প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারা। একই সাথে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যারা একুশে আগস্ট ঘটিয়েছে, মানুষের ওপর পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করেছে, তারা তাদের সাথে আছে। তারা যদি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায়, গতবার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বে ছিল তখন ৫০০ জায়গায় একসাথে বোমা ফুটেছিল, এবার ৫ হাজার জায়গায় ফুটবে। দেশটা পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তানের পর্যায়ে চলে যাবে, সেই বিশ্লেষণই ভারতীয় পত্রিকায় এসেছে।

টেলিগ্রাফও লিখেছে বাংলাদেশের কোন দল ক্ষমতায় থাকবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে কারা সরকারে থাকবে বা থাকবে না সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক বাংলাদেশর জনগণ। জনগণেই ক্ষমতার মূল মালিক, তারা সরকার পরিচালনার জন্য তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে আমাদের এখানে কারা ক্ষমতায় থাকবে, থাকবে না, আছে এগুলো নিয়ে তাদের চিন্তা থাকতেই পারে। সেই বিশ্লেষণ ভারতীয় পত্রিকায় এসেছে।

ভারতের পত্রিকায় বলা হয়েছে ইসলামপন্থীদের যেন মনোনয়ন দেওয়া না হয়, সেই বার্তা শেখ হাসিনাকে দেওয়া হবে। এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, একটি পত্রিকায় লিখেছে, সে বিষয়ে তো আমি মন্তব্য করতে পারি না। এটি নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসা করুন কেন লিখেছে। এদেশের অভ্যুদয় হচ্ছে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবার মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে। সংবিধান সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২৩
জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।