ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

মুক্তমত

সাদাসিধে কথা

বিক্ষিপ্ত ভাবনা

মুহম্মদ জাফর ইকবাল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৫
বিক্ষিপ্ত ভাবনা

কেউ যদি কখনো কোনো ভবিষ্যৎবাণী করে আর সেই ভবিষ্যৎবাণী মিলে যায় তাহলে ‍তার এক ধরনের আনন্দ হয়। আমি ভবিষ্যৎবাণী করেছিলাম এসএসসি পরীক্ষার সময় হরতাল অবরোধ তুলে দেওয়া হবে না এবং আমাদের ছেলেমেয়েরা ঠিক করে পরীক্ষা দিতে পারবে না।

আমার ভবিষ্যৎবাণী মিলে গেছে। কিন্তু আমি সেজন্য বিন্দুমাত্র আনন্দ অনুভব করছি না।

বড় মানুষেরা নানা ধরনের অর্থহীন রুঢ় কাজ করে। একে অন্যের সঙ্গে নিষ্ঠুরতা করে কিন্তু সারা পৃথিবীর একটা অলিখিত নিয়ম কোমলমতি ছেলেমেয়েদের সব নিরানন্দ নিষ্ঠুরতা থেকে আড়াল করে রাখা হবে। এবার আমার সেই ধারণায় চোট খেয়ে গেল। দেশের প্রায় ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীকে হরতালের আওতার বাইরে রাখা হলো না। একটি একটি করে পরীক্ষা পিছিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কবে পরীক্ষা হবে সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তা তো আছেই। তার সাথে ছেলেমেয়েদের কপালে নতুন দুর্ভোগ যোগ হয়েছে, দুটি পরীক্ষার মাঝখানের বিরতিগুলো কমে আসছে।

ছেলেমেয়েদের মাঝে হতাশা আর ক্ষোভ। যেহেতু এই আন্দোলন আসলে মানুষ পুড়িয়ে ক্ষমতা দেখানোর আন্দোলন, তাই পরীক্ষা দিতে যাওয়া ছেলেমেয়েদের ভেতরে এক ধরনের আতঙ্ক, তাদের বাবা মায়েদের মাঝে আশঙ্কা।

আমি আসলে ব্যাপারটা বুজতে পারি না। এমন তো নয় যে আন্দোলন করে সরকারের পতন করে জামায়াত বিএনপি নতুন সরকার গঠন করার পর এই দেশের সব মানুষকে দেশ থেকে বের করে দিয়ে নতুন কিছু আমদানি করা হবে এবং সেই মানুষগুলোকে নিয়ে দেশ চালানো হবে। যারা পরীক্ষা দিতে পারছে না, তারা তাদের বাবা মা ভাইবোন আত্মীয় স্বজন নিয়েই তো এই দেশ। কারো মনের ভেতর কি এই আন্দোলনের জন্য বিন্দুমাত্র অসহানুভূতি আছে, নাকি থাকা সম্ভব?

যখনই দেশে কোনো বড় পরীক্ষা হয় তখনই আমি ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে অনেক ফোন পাই, ই-মেইল পাই, ‍এসএমএস পাই।    
সবাই আমাকে তাদের জন্য দোয়া করতে বলে, আমি তখন সত্যি সত্যি খোদার কাছে তাদের জন্য দোয়া করি, মনে মনে বলি, ‘খোদা এই ছেলে কিংবা মেয়েটার পরীক্ষাটা ভালো করে দিও। ’

এই বছর আমার কাছে যখন টেলিফোন, এসএমএস আর ই-মেইল আসছে আমি পরীক্ষার জন্য দোয়া না করে মনে মনে বলছি, ‘খোদা এই ছেলে কিংবা মেয়েটা যেন পরীক্ষা দিয়ে সুস্থভাবে নিরাপদে ঘরে ফিরে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দাও। ’ ভালো পরীক্ষা এখন এই দেশের মূল বিষয় নয়, নিরাপদে পরীক্ষাগুলো শেষ করা এখন মূল বিষয়! কিন্তু এমনটি তো হওয়ার কথা ছিল না।

২.
গত সপ্তাহে টানা পাঁচদিন হরতাল ছিল তারপর দুইদিন শুক্র শনিবার একটু বিরতি তারপর আবার পাঁচদিনের একটা হরতাল। পরের সপ্তাহে কী হবে আমরা এখনো জানি না। শুধ‍ু অবরোধে আর হচ্ছিলো না তাই অবরোধের সাথে হরতালজুড়ে দেওয়া হচ্ছে। হরতাল দেওয়া খুবই সহজ- শুধুমাত্র একটা ঘোষণা দেয়া। সাথে সাথে বাস পোড়ানো, ট্রাক পোড়ানো এবং মানুষ পোড়ানোর একটা অধিকার জন্মে যায়। কোনো রকম অপরাধবোধ ছাড়া মানুষকে পুড়িয়ে মারার এতো সহজ অধিকার আর কোথাও কেউ পায় কী না আমার জানা নেই।

মাঝে মাঝে আমার মাথার মাঝে একটি বিচিত্র চিন্তা খেলা করে। পত্রপত্রিকা বা সংবাদ মাধ্যমগুলো তো অনেক সময়েই কিছু খবরাখবর একটু রয়ে সয়ে ছাপান। আমেরিকার একজন ধর্মযাজক একবার ঘোষণা দিয়ে পবিত্র কোরান শরীফ পুড়িয়েছিল, আমাদের সংবাদমাধ্যম এই খবরটা সেভাবে প্রচার করেনি। কারণটা খুবই সহজ, দেশের সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ খবরটা পড়ে বিচলিত হয়ে যেন হাঙ্গামা শুরু না করে আর সেই হাঙ্গামার কারণে যেন অন্য ধর্মের নিরপরাধ মান‍ুষেরা বিপদে পড়ে না যান। সোজা কথায় বলা যায় যে খবর ছাপা হলে দেশের কিংবা দেশের মানুষের ক্ষতি হয় সেই খবর না ছাপানো কিংবা প্রচার না করা এমন কিছু অবাস্তব কিংবা অযৌক্তিক ব্যাপার নয়।   

হরতালের খবর ছাপা হলে দেশের মানুষের ক্ষতি হয়। স্কুল কলেজে ছেলেমেয়েরা যেতে পারে না, দিনমজুরের সন্তানেরা না খেয়ে থাকে, লোকজন যাতায়াত করতে পারে না, ব্যবসা নষ্ট হয় এবং এই সবগুলোর সাথে এখন যুক্ত হয়েছে মানুষকে পুড়িয়ে মারা! কাজেই যদি দেশের সব পত্রিকার সম্পাদক ও সব টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকেরা বসে ঠিক করতেন, এখন থেকে তারা কবে হরতাল ডাকা হয়েছে সেই খবরটি প্রকাশ করবেন না। রাজনৈতিক দলগুলোকেই দায়িত্ব দেবেন তাদের নিজেদের দায়িত্বে যেন সেই খবরটি প্রচার করতে হবে। তাহলে কেমন হতো?

আমি কল্পনায় দেখতে পাই একটা হরতাল ডাকার পর রাজনৈতিক দলের কর্মীরা পোস্টার ছাপাচ্ছেন, লিফলেট ছাপাচ্ছেন, ঘুরে ঘুরে সেগুলো বিতরণ করছেন। সবার টেলিফোন নম্বর জোগাড় করে তাদের এসএমএস পাঠাচ্ছেন। ফেসবুকে খবরটা প্রচার করার চেষ্টা করছেন। মাইক ভাড়া করে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে খবরটা প্রচার করার চেষ্টা করছেন। সারা দেশে শুধুমাত্র হরতালের দিনক্ষণটি জানাতে গিয়েই তাদের কালোঘাম ছুটে যেতো- টাকা পয়সার কথা ছেড়েই দিলাম! লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে, দলের সব কর্মীদের ব্যবহার করেও তারা নিশ্চিত হতে পারতেন না হরতালের খবরটা সবার কাছে পৌঁছেছে কী না! একটা হরতালের কারণে দেশের মানুষের কষ্টের কোনো সীমা থাকে না। তাহলে যারা হরতাল ডাকে তারা কেন একটু কষ্ট করবে না? সবকিছু তাদের জন্যে কেন এত সহজ করে দেয়া হবে?

৩.
খবরের কাগজ পড়ে আমরা সবাই জেনেছি বিএনপি-জামায়াত মানুষকে পুড়িয়ে মারার যে আন্দোলন শুরু করেছে সেটি থেমে যাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত না এই সরকারের ‘পতন’ হবে ততদিন এই মানুষ পুড়িয়ে মারা চলতে থাকবে।

আমি চিন্তা করে বের করার চেষ্টা করছিলাম আমাদের দেশে কতোবার আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটনো হয়েছিল। বোঝার বয়স হওয়ার পর প্রথম সরকার পতন দেখেছি ১৯৬৯ সালে। আমি তখন ঢাকা কলেজে পড়ি, আয়ূব সরকারের বিরুদ্ধে সারা দেশে আন্দোলন হচ্ছে। আমাদের কলেজেও তার ছোঁয়া লেগেছে। আমার মত যে দুর্বলচিত্ত নিরীহ মানুষ- আমিও কলেজ ক্যাম্পাসের নিরাপদ অবস্থানে থেকে রাস্তায় মোতায়েন করা ইপিআরদের দুই/চারটা ঢিল মেরেছি। আমার স্পষ্ট মনে আছে ইপিআরের মানুষগুলো আমাদের ডেকে বলল,  ‘আমাদের শুধু শুধু ঢিল মারছ কেন? আমরা বাঙালি- আমরাও তোমাদের সাথে আন্দোলনে যাচ্ছি। নেহায়েত চাকরি করি বলে এখানে ডিউটি করছি। ’

আমরা তখন ঢিল ছোড়া বন্ধ করেছিলাম। তবে সারা দেশের সব মানুষ মিলে বিশাল আন্দোলন শুরু করেছিল বলে আয়ূব খান পদত্যাগ করেছিল- সরকারের পতন হয়েছিল। এখন যে গেটটাকে আমরা আসাদ গেট বলি ঊনসত্তরের আগে সেই গেটের নাম ছিল আয়ূব গেট। জানুয়ারির ২০ তারিখ আসাদ গুলি খেয়ে মারা যাওয়ার পর এই গেটটার নাম দেয়া হয়েছিল আসাদ গেট।

ঊনসত্তরের পর সরকারের ‘পতন’ দেখেছি একাত্তরে! অবশ্য একাত্তরকে কেউ সরকারের পতন হিসেবে দেখে না। সেটা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, রীতিমত যুদ্ধ করে পাকিস্তান সরকারকে ঝেটিয়ে বিদায় করে আমরা বাংলাদেশ পেয়েছিলাম। (পাকিস্তান বিদায় হয়েছে কিন্তু পাকিস্তানের ভূত
এখনো বিদায় হয়নি। ) এই দেশ এখনো পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ করা জামায়াতে ইসলামী রয়ে গেছে। যারা এখন বিএনপির হয়ে দেশের মানুষকে পুড়িয়ে মারার দায়িত্ব নিয়েছে।

একাত্তরের পরে সরকারের পতনটি ছিল এই দেশের সবচেয়ে হৃদয় বিদারক ঘটনা। সেটি কোনো গণ-অভ্যুত্থান ছিল না। সেটি ছিল একটা সেনা অভ্যুত্থান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে একেবারে সপরিবারে হত্যা করে সরকারের পতন করা হয়েছিল। আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের এই সামরিক শাসন তার আসন গেঁড়ে বসল।

১৯৭৬ সালে আমি দেশের বাইরে চলে যাই। তাই ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করার খবরটি পাই দূর থেকে। ১৯৮২ সালে সেনা অভ্যুত্থানের কারণে চতুর্থবার সরকারের পতন হলো। এবারে ক্ষমতায় এলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এই মানুষটি প্রচণ্ড দাপটে দেশ শাসন করেছিল আট বছর। ১৯৯০ সালে তার সরকারের পতন হলো গণঅভ্যুত্থানে! দেশে গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হলো।

আমি দেশে ফিরে এসেছি ১৯৯৪ সালের শেষে এবং ১৯৯৬ সালেই আবার সরকারের পতন দেখলাম। সরকারে থাকা বিএনপি তাদের ভোটারবিহীন নির্বাচন করে গণঅভ্যুত্থানের কারণে নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহের ভিতরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ক্ষমতা দিয়ে সরে গিয়েছিল।

২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি আরেকটা নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১১ জানুয়ারি আবার একটা সরকারের ‘পতন’ হলো। এটাও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের কারণে।

এই হচ্ছে খুব সংক্ষেপে এই দেশে সরকার ‘পতনের’ ইতিহাস। নির্বাচন হয়ে যদি সরকার পরিবর্তনগুলোকে হিসেবে না আনি তাহলে জোর করে সরকারের পতন হয় দুই কারণে, হয় গণঅভ্যুত্থানে না হয় সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে। নিজ থেকে হাসি মুখে কোনো সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দেয়নি।

বিএনপি-জামায়াত ঘোষণা দিয়েছে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। তাদের কাছে যেটা আন্দোলন এই দেশের মানুষের কাছে সেটা শুধু যে দুর্ভোগ তা নয়, সেটা হচ্ছে মানুষ পুড়িয়ে মারার একটা অবর্ণনীয় নৃশংসতা।

তাদের মানুষ পোড়ানোর আন্দোলনে এক সময় দেশের সাধারণ মানুষ যোগ দিয়ে বিশাল একটা গণঅভ্যুত্থান গড়ে তুলবে সেটি ভাবার কোনো কারণ নেই। আমরা বরং উল্টোটা হতে দেখছি, যতই দিন যাচ্ছে ততই দেখছি পাবলিক তাদের রাজনৈতিক কর্মীদের হাতেনাতে ধরে শক্ত পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে।

শুক্র শনিবার বিরতি দিয়ে টানা দশদিন হরতাল ডেকে রাখলে সাধারণ মানুষ উৎসাহে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই। শুধু যে বাংলাদেশের মানুষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের অবর্ণনীয় নৃশংসতা দেখে হতবুদ্ধি হয়েছে তা নয়, নানা দেশের কূটনীতিকেরাও আতংকিত হতে শুরু করেছে।

এই দেশের মানুষ দাঁতে দাঁত চেপে এর মাঝে এক মাস থেকে বেশি সময় সরকার পতনের আন্দোলন সহ্য করে গেছে। যদি কোনো সমাধান না হয়, যদি তাদের বাধ্য করা হয় তাহলে তারা হয়তো আরো সহ্য করবে। কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির তখন কী অবস্থা হবে? তারা কী আদৌ একটা রাজেনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকবে?

আমি মোটেও বিশ্লেষক নই, আমার বিশ্লেষণ কাউকে মেনে নিতে হবে না। কিন্তু এই কথাটা তো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না পৃথিবীর যে কোনো কিছুর শতকরা নব্বই ভাগ কমন সেন্স দিয়ে বোঝা যায় না। শুধু তারা যে ধরনের গোলমাল আছে সেটা বোঝার জন্যে আইনস্টাইন হতে হয় না। সেনা অভ্যুত্থান হয়ে সরকার পতন হয়ে যাবে সেটাও মেনে নেওয়া কঠিন। অনেকগুলো সুযোগ ছিল, পুত্রের অকালমৃত্যুও তার মধ্যে একটি। কিন্তু কোনো সুযোগ গ্রহণ করা হলো না। যার অর্থ অবরোধ হরতাল চলতেই থাকবে।

কয়েকদিনের মাঝে ভ্যালেন্টা‌নস ডে চলে আসবে, আমাদের দেশে এই দিবসটা আজকাল খুব হৈচৈ করে পালন করা হয়। ধরা যাক এই ভ্যালেন্টা‌নস ডে কিংবা ভালোবাসা দিবসের কারণে হঠাৎ করে সরকারের বুকের মাঝে ভালোবাসা উথলে উঠল এবং তারা ঘোষণা দিলো কয়েকদিনের মাঝে আবার নতুন করে নির্বাচন হবে, তাহলেই  কী সমস্যা মিটে যাবে? গত বছরেই তো একটা নির্বাচন হয়েছিল। মনে আছে? যদি আবার নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হয় তাহলে কী তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আবার সেই তাণ্ডব, সেই মানুষ পোড়ানো সেই পোড়ানো শুরু হয়ে যাবে না?

এটা ফেব্রুয়ারি মাস। আমাদের বাংলা ভাষার মাস, পৃথিবীর আর্ন্তজাতিক  মাতৃভাষা দিবসের মাস। আমরা যারা বই পড়ি বা বই লিখি তাদের জন্যে আরো একটা বাড়তি আনন্দের বইমেলা দেখার জন্যে সিলেট থেকে ঢাকা যেতে হয়। এই বছর হরতাল অবরোধের কারণে ইচ্ছে হলেই সিলেট থেকে ঢাকা চলে আসতে পারি না। খবরের কাগজের বইমেলার খবর পড়ি। কষ্ট করে হলেও কোনো এক সময় সিলেট থেকে ঢাকার বইমেলায় যাব। কিন্তু যাদের সখের বইমেলা নেই কিন্তু জীবন মরণ সমস্যা আছে তারা কী করবে?

যে দিনে মানুষটিকে ঘর থেকে বের হয়ে সারাদিন কাজকর্ম করে দিনের শেষে সন্তানদের জন্যে খাবার কিনে আনতে হয়। তারা যখন তাদের অভুক্ত সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে তাদের কেমন লাগে? আমরা বাংলাদেশের মানুষেরা এর থেকেও অনেক ভয়াবহ অবস্থা পার হয়ে এসেছি। কাজেই নিশ্চিতভাবেই একদিন এই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে পার হয়ে আসব। শুধু দুঃখ, অখন আগুনে পুড়ে বোমার আঘাতে কিংবা গুলির আঘাতে মারা যাওয়া অনেকগুলো মানুষ থাকবে না। তাদের আপন মনের আবাক হয়ে ভাববে পৃথিবীটা আমাদের জন্যে এতো নিষ্ঠুর কেন? তাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই সেই অবরোধ বোধের দায়ভার থেকে আমাদের কারো মুক্তি নেই।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।