ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

আওয়ামী লীগ ত্যাগ ও অনুভূতির নাম

ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হাওলাদার (সিআইপি) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৪ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৩
আওয়ামী লীগ ত্যাগ ও অনুভূতির নাম

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন জন্ম নেয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ একটি ত্যাগের নাম, আওয়ামী লীগ একটি অনুভূতির নাম।

ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, লাখো মানুষের রক্ত, বঙ্গবন্ধুর রক্তের একটি অনুভূতির নাম আওয়ামী লীগ। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে আওয়ামী লীগের ত্যাগ রয়েছে।

বাঙালি জাতির মুক্তির মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গণতান্ত্রিকভাবে জন্ম নেয় আওয়ামী লীগ। পৃথিবীতে অনেক রাজনৈতিক দল আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো এতো ত্যাগ আর কারও সঙ্গে তুলনা করা যায় না। ভাষা আন্দোলন থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কর্মীরা যে পরিমাণ রক্ত দিয়েছেন, পৃথিবীর আর কোনো দল এমন রক্ত দেয়নি ও এতো ত্যাগ স্বীকার করেনি। আওয়ামী লীগ পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ। দেশের প্রতিটি আন্দোলনে যেমন আওয়ামী লীগের অবদান রয়েছে, তেমনি টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার রেকর্ড কেবলমাত্র এই দলেরই। আওয়ামী লীগ এখন বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগই ছিল প্রথম বিরোধী দল। দলটি জন্মলগ্নেই প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে ৪২ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করে। পাকিস্তানি শাসনের সূচনালগ্ন থেকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাভাষাকে স্বীকৃতি, এক মানুষ এক ভোট, গণতন্ত্র, শাসনতন্ত্র প্রণয়ন, সংসদীয় সরকার পদ্ধতি, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন এবং দুই প্রদেশের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ ইত্যাদি ছিল আওয়ামী লীগের প্রধান দাবি। ১৯৪৮-৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে আওয়ামী লীগ এবং এর ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ (১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র হত্যার পূর্বে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠনে আওয়ামী লীগ মুখ্যভূমিকা পালন করে।

জেনারেল আইয়ুবের স্বৈরাচারি শাসনামলে (১৯৫৮-১৯৬৯) বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন লাভের সংগ্রামে প্রধান দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১৯৬৩ সালে মৃত্যুর পূর্বে সোহরাওয়ার্দী প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল নিয়ে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) নামে আইয়ুব বিরোধী একটি মোর্চা গঠন করেন। এই ফ্রন্ট গণতন্ত্র ও আইনের শাসন পুনরুদ্ধারের আহবান জানায়। সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের প্রধান নেতা হন। ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তার ধানমন্ডিস্থ বাসভবনে কেন্দ্রীয় সদস্যদের সভায় তিনি আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করেন।

১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে অভূতপূর্ব বিজয় অর্জন করে এবং কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দকৃত ১৬২ আঞ্চলিক আসনের (৭২.৫৭% ভোট) মধ্যে ১৬০টি আসন লাভ করে। পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের (৮৯% ভোট) মধ্যে ২৮৮টি আসনে জয়লাভ করে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। দলটি জাতীয় পরিষদেও মোট সাতটি মহিলা আসন ও প্রাদেশিক পরিষদের মোট ১০টি মহিলা আসনের সবগুলো আসনেই জয়লাভ করে। এই নির্বাচনের অর্থ এই দাঁড়ায় যে, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ এবং আওয়ামী লীগ অভিন্ন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়ঙ্কর রাতে ঢাকাসহ পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের ফলে পাকিস্তানের ভবিষ্যতের পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তথাকথিত রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বিচারের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আওয়ামী লীগের নেতা বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি (বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন) এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে প্রবাসী সরকার গঠন করেন। এই প্রবাসী সরকার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে।

১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন ছিল। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯ সাল থেকে পরপর তিনবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সম্ভাবনার দিগন্তে পত পত করে উড়ছে পতাকা। তার একনিষ্ঠ তত্ত্বাবধানে দেশের উন্নয়ন প্রকল্প একের পর এক পেখম মেলে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। চার লেন মহাসড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পানগাঁও নৌ-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, গ্যাস সংকট নিরসনে এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা সমুদ্রবন্দর, রাজধানীর চারপাশে স্যুয়ারেজ ট্যানেল নির্মাণের মতো অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে।

উন্নয়নের এ কর্মযজ্ঞে যোগ হয়েছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প এবং দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুমধুম প্রকল্প। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি অঞ্চলের কাজের উদ্বোধনও করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ নিরাপদ এবং পণ্য পরিবহন-খালাস সহজীকরণ করতে নেয়া আরও কিছু অবকাঠামোর সংস্কার হচ্ছে। একই সঙ্গে তথ্য-প্রযুক্তি খাতেও এগিয়েছে দেশ।

লেখক: চেয়ারম্যান, বিবিএস গ্রুপ ও নাহী গ্রুপ। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ভোলা-৩, সাবেক ভিপি সোহরাওয়ার্দী হল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।