ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

মাসে ‘চাঁদা আদায়’ ৭৫ লাখ টাকা, সকালে উচ্ছেদ-দুপুরে দখল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২২
মাসে ‘চাঁদা আদায়’ ৭৫ লাখ টাকা, সকালে উচ্ছেদ-দুপুরে দখল

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা-গোলাকান্দাইল এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কের দুই পাশের ফুটপাতের অবৈধ স্থাপনা ও দোকানপাট উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল হকের নেতৃত্বে চলে এ উচ্ছেদ অভিযান।

তবে, সকালে উচ্ছেদ হলেও দুপুরেই ফের দখল হয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালীদের তদবিরে ফুটপাতের কিছু কিছু অংশ উচ্ছেদ করা হয়নি।

ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রতিদিন প্রায় আড়াই লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয় তাদের কাছ থেকে। ওই হিসেবে মাসে চাঁদার আয় হয় প্রায় ৭৫ লাখ টাকা। আর এই চাঁদার টাকা ওঠানো হয় উপজেলা প্রশাসন, ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ি, ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্প ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের নামে।  

এরপর আবার চোর-পুলিশ খেলা হয় এসব নিরীহ ফুটপাত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। যারা চাঁদা আদায় করেন, তারা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন, ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ি, ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্প ও দলের নেতাকর্মীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কের ভুলতা-গোলাকান্দাই এলাকাটি ব্যস্ততম, শিল্প ও ব্যবসায়িক এলাকা। এই এলাকায় মার্কেট ও হাটবাজার রয়েছে। রয়েছে পাইকারি কাপড়ের বাজারও। সড়কের উভয় পাশের জায়গা দখল করে ফুটপাতে প্রায় এক হাজারের মতো দোকানপাটসহ ভ্যানে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়েছে কয়েকটি চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট।  

এই সিন্ডিকেট উপজেলা প্রশাসন, ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ি, ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্প ও দলীয় নেতাকর্মীদের নামে প্রতিদিন প্রায় আড়াই লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে। চাঁদা আদায়ের বিষয়ে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে প্রশাসনের টনক নড়ে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে কয়েকজন ফুটপাত ব্যবসায়ী জানান, তারা প্রতিদিন চাঁদা পরিশোধ করে আসছেন। মাঝে মাঝে প্রশাসনের উপর মহলের চাপে উচ্ছেদ করা হলেও যারা চাঁদা আদায় করেন, তারা বলে দেন আগের মতো যাতে ফের দখলে চলে যায়। এ জন্য উচ্ছেদ করার পর পরই ব্যবসায়ীরা আবারো ফুটপাত ও সড়কের একাংশ দখল করে ব্যবসা শুরু করেন।  

তারা জানান, চাঁদা আদায়কারীরাও নিয়মিত উল্লিখিত স্থানে মাসোহারা দিয়ে আসছে। যার ফলে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। তারা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অথচ হয়রানির শিকার হচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এসব বিষয়ে তদন্ত করে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান তুহিন বলেন, দলের কেউ চাঁদাবাজি করে না। যারা চাঁদাবাজি করে, তাদের বেঁধে রেখে আমাদের খবর দিন।

ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান ও হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ওমর ফারুক বলেন, পুলিশের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা আদায়ের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। কেউ যদি পুলিশের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা আদায় করে, তাকে খুঁজে বের করা হবে এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল হক বলেন, আমাদেরও ফুটপাতে গিয়ে উচ্ছেদ করতে ভালো লাগে না। যখন উপর মহল থেকে চাপ আসে, তখন আমাদের উচ্ছেদ করতে যেতে হয়। আমরাও তো চাকরি করি।

ফুটপাতে বিশেষ তদবিরে কিছু দোকান উচ্ছেদ না করার অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও বলেন, উচ্ছেদ অভিযানটি ছিল সড়ক ও জনপদ বিভাগের। সড়ক ও জনপদের সাব ডিবিশনাল ইঞ্জিনিয়ার যেগুলো উচ্ছেদ করতে বলেছেন, আমি সেগুলোই উচ্ছেদ করেছি।  

তিনি বলেন, ফুটপাত উচ্ছেদের পর ফের দখল হলে আবারো উচ্ছেদ করা হবে। উপজেলা প্রশাসন ফুটপাত থেকে চাঁদা পায় বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যে। কেউ উপজেলা প্রশাসনের নামে টাকা তোলে, এমন অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২২
এমআরপি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।