ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ভবদহ সমস্যা সমাধানের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২২
ভবদহ সমস্যা সমাধানের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি

যশোর: যশোরের ভবদহ সমস্যা সমাধানে ছয়দফা দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন ভবদহ পানি নিস্কাশন সংগ্রাম কমিটি।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে যশোর কালেক্টরেট চত্বরে মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়।


স্মারকলিপি গ্রহণ করেন যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। পরে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রতিনিধি দল ঘটনা ও বর্তমান পরিস্থিতি তাকে অবহিত করেন।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ভবদহ জনপদের ২০০ গ্রামের প্রায় প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষভাবে ১০ লাখ মানুষ একটি কুচক্রী সিন্ডিকেটের লুটপাটের লালসার শিকার হয়ে স্থায়ীভাবে পানিতে ডুবে যেতে বসেছে। উদ্ভব হয়েছে মহাবিপর্যয়কর পরিস্থিতি। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, ঠিকাদার, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত ও ঘের মালিকরা সিন্ডিকেট করে প্রতি বছর জনগণকে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা লুটের স্থায়ী ব্যবস্থা করে নিয়েছে। তাদের কাছে ভবদহ হলো- ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’।

নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, দীর্ঘ আন্দোলনের পর ১৯৯৮ সালে তৎকালীন পানিসম্পদ মন্ত্রীর উপস্থিতিতে এক কনভেনশনে নীতিগতভাবে ভবদহ অঞ্চলের বিলগুলোতে পর্যায়ক্রমে টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট-জোয়ারাধার প্রকল্প) প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০০২ সালে বিল কেদারিয়ায় এবং এরপর বিল হিসেবে ২০০৬ সালে বিল খুকশিয়ায় টিআরএমের সফলতায় স্রোতের ভরবেগ বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্রুত নদীগর্ভের পলি কেটে কাট পয়েন্ট থেকে নদী ২৫/৩০ ফুট গভীর ও মোহনা সচল হয়েছিল। এরপর নির্ধারিত বিল কপালিয়ায় টিআরএম কার্যকর করতে গেলে প্রকাশ্য দিবালোকে সশস্ত্র আক্রমণে ২০১২ সালে হুইপ ও পাউবো কর্মকর্তারা আহত হন এবং সরকারি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে টিআরএম প্রকল্প বাতিল করে দেয়। ফলে ওই চক্র ও সিন্ডিকেট স্থায়ী লুটপাটের সরকারি মদদ পেয়ে বসে।

এরপর ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একটি জাতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় আইডব্লিউএম কর্তৃক ব্যাপক জরিপ ও জনমত যাচাই করে প্রস্তাবিত বিল কপালিয়া ও পর্যায়ক্রমে বিলে বিলে টিআরএম প্রকল্প নেওয়া হয়। যা ডেল্টা প্লান ২১০০ এর সুপারিশের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতাদের উপস্থিতিতে পুনঃপর্যালোচনার পর পানিসম্পদ মন্ত্রী টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তা গভীর ষড়যন্ত্রের রোষালনে পড়ে।

২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আকষ্মিকভাবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ওই প্রকল্প  বাতিল করে নতুন প্রকল্প প্রণয়নের নির্দেশ দেয়। এরপর হঠাৎ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ভবদহ গেটে এসে টিআরএম হবে না এবং ওই প্রকল্প এলাকাকে জলাভূমি ঘোষণা দেন। তিনি ডেল্টা প্লান-২১০০ এর অজুহাত দেখালে উপস্থিত জনগণ আপত্তি জানায়। তখন তিনি তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। প্রকৃত সত্য হলো- ভবদহ এলাকা কখনোই জলাভূমি বা জলাশয় ছিল না। এমন তথ্য রাষ্ট্রীয় নথিপত্রেও দেখা যায় না। বরং ডেল্টা প্লান-২১০০ এ ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ রয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পাউবো ডেল্টা প্লান-২১০০ এর বৈজ্ঞানিকভাবে যথার্থ সুপারিশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যা সরকার বিরোধী অবস্থান বলে প্রতিয়মান হয়। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীসহ স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সরকারকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে এবং জনমতকে উপেক্ষা করে পাম্পের মাধ্যমে সেচ দিয়ে জলাবদ্ধতা মুক্ত করার অবিবেচনাপ্রসূত প্রকল্প দিয়ে অর্থ অপচয় করেছে। পাউবো মিথ্যা তথ্য দিয়ে বলেছে যে, এবার পাম্পের মাধ্যমে সেচ দেওয়ার ফলে এলাকায় ব্যাপক ফসল উৎপাদন হবে এবং এলাকা জলাবদ্ধ হয়নি, মানুষের বাড়িঘর-রাস্তা এবং কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ওঠেনি।

এরপর ফেরপাউবো জনমত উপেক্ষা করে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার সেচ প্রকল্প নিয়েছে এবং ৪৫ কোটি টাকার সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে। যে অর্থ সম্পূর্ণ অপচয় হবে এবং বরাবরের মতো জনদুর্ভোগ মারাত্মক আকার ধারণ করবে।

জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের বরাদ্দ একনেকে পাস হলেও বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে অহেতুক বিলম্ব করে গণদুর্ভোগ জিইয়ে রাখা হয়েছে।

পাউবোর অনৈতিক জনস্বার্থবিরোধী কার্যকলাপে ২১ ভেন্ট থেকে বারোয়াড়ি মোহনা পর্যন্ত ৫০-৬০ কিলোমিটার নদী হত্যা করা হয়েছে। তাদের ভূমিকা সরকারের বিরুদ্ধে উষ্কানিমূলক। ফলে অনভিপ্রেত যে পরিস্থিতির উদ্ভব হতে যাচ্ছে তার সমস্ত দায় তাদেরকেই নিতে হবে। এই গণবিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্রের দায় সরকারের ওপরও বর্তাচ্ছে।

এর আগে, যশোর কালেক্টরেট চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন ভবদহ পানি নিস্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতারা।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ভবদহ সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালী, যুগ্ম আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আব্দুল হামিদ, সদস্য সচিব অধ্যক্ষ চৈতন্য কুমার পাল, শিবপদ বিশ্বাস, অনিল বিশ্বাস, রাশিদা বেগম, রাজু আহম্মেদ, নাজিম উদ্দিন, জিল্লুর রহমান ভিটু, তসলিম-উর-রহমান, হাসিনুর রহমান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৯ ঘন্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২২
ইউজি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।