ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সমকামিতায় বাধ্য করতেন প্রভাষক!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০২২
সমকামিতায় বাধ্য করতেন প্রভাষক! আমিনুল ইসলাম

সাভার, (ঢাকা): পেশায় তিনি শিক্ষক হলেও সমকামিতার মতো নোংরা কাজে বাধ্য করতেন ছাত্রদের। রাজি না হলে তাদের মারধর ও পরীক্ষায় কম নম্বর পাইয়ে দেওয়ার ভীতি প্রদর্শন করতেন।

আবার শিক্ষার্থীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কুরুচিপূর্ণ আলাপচারিতা ও মেসেঞ্জারে নগ্ন ছবি চাইতেন ওই প্রভাষক।

দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার ধামরাইয়ে ভালুম আতাউর রহমান খান ডিগ্রি কলেজের ভুগোল বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক আমিনুল ইসলামের নির্যাতনের শিকার প্রায় ৩০ ছাত্র অবশেষে মুখ খুলেছেন। প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে।

এ ঘটনায় ৩ অক্টোবর তদন্ত কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এক মাস অতিবাহিত হলেও অদৃশ্য কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষ কার্যত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিগগির ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, ভুগোল বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছাত্রদের যৌন ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠে। পরে ধামরাই উপজেলা ইউএনও ও কলেজটির গভর্নিং বডির সভাপতি হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পেয়ে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন।  

ভুক্তভোগীদের বক্তব্য নেওয়ার পর ৩ অক্টোবর কলেজের আরেক প্রভাষক তদন্ত কমিটির প্রধান হাবিবুর রহমান হাবিব প্রতিবেদন জমা দেন। তবে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার একমাস পার হলেও অদৃশ্য কারণে অভিযুক্ত প্রভাষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র বলেন, ওই স্যার তাদের হয়রানি করেন। মেয়েদের করে না শুধু ছেলেদের। সে অনেক আগে থেকেই এটা করেছেন। পড়ালেখার কথা চিন্তা করে কেউ মুখ খোলেনি। আর আমরা যারা অভিযোগ করছি, তারা পড়ালেখার কথা চিন্তা করিনি। কারণ আমরা কলেজ শেষ করার পর তো চলে যাবো, কিন্তু ওই শিক্ষক ছোট ভাইদের সাথেও একই কাজ করবেন। এই কথা চিন্তা করেই আমরা অভিযোগ দিয়েছি। প্রায় একমাস আগে আমরা অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু এখনও কোনো বিচার হয়নি।  

ওই বিভাগের আরেকজন বলেন, আমিনুল স্যার আমাকে কন্ট্রোলরুমে ডেকে নিয়ে যায়। পরে জোরপূর্বক আমার কাপড় খুলে যৌন নির্যাতন করেন। এ কথা কাউকে বললে আমাকে পরীক্ষা দিতে দেবেন না এমন ভয়ভীতি দেখান।

তদন্ত কমিটির প্রধান ভালুম আতাউর রহমান খান ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, তদন্তে যা পেয়েছি সেটাতো ভাষায় প্রকাশ করা করা যায় না। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সাক্ষাতে কথা বলে ১৫/২০ দিন আগে আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। ওই প্রভাষকের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি।

অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটাতো প্রিন্সিপাল দেখবেন। কলেজের পরিচালনা কমিটি এটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে অভিযুক্ত শিক্ষক এখন কলেজে আসেন না।

অভিযুক্ত ভালুম আতাউর রহমান খান ডিগ্রি কলেজের ভুগোল বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক আমিনুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। এমএমএস করেও কোনো সাড়া মেলেনি। পরে কল করলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ধামরাইয়ে ভালুম আতাউর রহমান খান ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাইন উদ্দিন বলেন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ১০ ছাত্র লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ইউএনওর স্যারের কাছে। তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন দিয়েছি। সেই স্যার আর কলেজে আসেন না।

এতদিন পরেও কেনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটাতো ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ করছেন। সেই এটার সিদ্ধান্ত নেবেন। আমার কাছে তো অভিযোগ নেই। ইউএনও স্যারতো ব্যবস্থা নেবেই। এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি এটার সিদ্ধান্ত দেবেন।

ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কলেজটির গভর্নিং বডির সভাপতি হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকি বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এটি প্রক্রিয়াধীন। শিগগিরই আপনারা ফলাফল জানতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০২২
এসএফ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।