ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ইটভাটা পরিবেশ দূষণের বড় কারণ: মেয়র আতিক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২২
ইটভাটা পরিবেশ দূষণের বড় কারণ: মেয়র আতিক

ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সিমেন্ট ব্লকের ব্যবহার বাড়াতে হবে। ঢাকার অদূরে ইটের ভাটাগুলো আমাদের বন্ধ করতে হবে।

বায়ুদূষণের ৫৬ শতাংশ হয় ইটভাটা থেকে।

সোমবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) উদ্যোগে আয়োজিত ‘গ্রিনিং সিটিস থ্রো রিডিউসিং এয়ার অ্যান্ড প্লাস্টিক পল্যুশন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মেয়র বলেন, ঢাকায় তেমন খোলা জায়গা নেই। মিরপুরে একটা খোলা জায়গা ভরাট করে আমি চেয়েছিলাম ঘাস লাগিয়ে দেবো, যাতে মানুষ হাঁটতে পারে, খেলাধুলা করতে পারে। কিন্তু, বালু ভরাট করার পরই মানুষ সেখানে চলাচল শুরু করেছে।

তিনি বলেন, গুলশান, বনানী, বারিধারা লেকে আমি কোনো মাছের চাষ করতে পারছি না, দূষণের কারণে। এখানে মশার চাষ হচ্ছে। প্রত্যেকটি বাড়িতে যে পয়ঃবর্জ্য বের হচ্ছে, সেটি সরাসরি লেকে গিয়ে পড়ছে। আপনারা বাড়িতে যদি জেনারেটর লাগাতে পারেন, তাহলে কেন এডসোর্স ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট লাগাতে পারবেন না?

মেয়র আরও বলেন, আজকে মোট বায়ুদূষণের ১০ শতাংশ হচ্ছে যানবাহনের ধোঁয়া থেকে। এ বিষয়ে আমরা প্রথমে স্কুলের গার্ডিয়ানদের সঙ্গে কথা বলেছি। স্কুলের প্রিন্সিপালের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের অতিরিক্ত স্কুল গাড়ি বন্ধ করতে হবে, পরিবর্তে স্কুল বাস ব্যবহার করতে হবে। যারা রাইড শেয়ারিং করেন, তাদের সাথেও আমার কথা হয়েছে। পাশাপাশি স্কুলবাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা নেব। ঢাকা শহরকে বায়ুদূষণমুক্ত করতে হলে স্কুলবাস চালু করতে হবে।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ড্রেন ভরে যাওয়। এর বড় কারণ বড়-বড় যে বিল্ডিংগুলোর পাইলিং হচ্ছে, এগুলোর ময়লা-কাদা কোথায় যাচ্ছে? ড্রেনেই যাচ্ছে। পুরোনো বিল্ডিংগুলো যে ভাঙা হয়, সে বর্জ্য কোথায় যায়? এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। প্রত্যেকদিন ড্রেন পরিষ্কার করা আসলে সম্ভব না। আরেকটা বিষয় হলো, বিয়ের কার্ডে প্লাস্টিকের ব্যবহার করা হচ্ছে। যত বেশি টাকা, তত বেশি মোটা বিয়ের কার্ড। এটি বন্ধ করা দরকার।

আতিকুল ইসলাম বলেন, সি-৪০ সম্মেলনে গেছি আমি। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আজকে বিশ্ব ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য কি আমরা দায়ী? আমরা তো সবচেয়ে কম কার্বন নিঃসরণ করি। এ জন্য উন্নত দেশগুলো দায়ী। এ জন্য সি-৪০ সম্মেলনে বলে এসেছি ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

মেয়র বলেন, পলিথিনের পরিবর্তে যে ব্যাগ আবিষ্কৃত হয়েছে, সেটির দাম অনেক বেশি। আমি সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করব, এটির দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য। আরেকটি ঘোষণা দিতে চাই, যারা ছাদ বাগান করবেন, তাদের করের ১০ শতাংশ বাট্টা দেওয়া হবে। এ সংক্রান্ত একটা নীতিমালা আমরা তৈরি করছি। আমরা ইনোভেটিভ কিছু করার চেষ্টা করছি। শহরকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বসবাসযোগ্য উপযোগী করে রেখে যেতে চাই।

এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, আমার আশ্চর্য লাগে আমাদের দেশে কিন্তু শিল্পায়ন সেভাবে হয়নি। তারপরও আমাদের বায়ুদূষণ এত বেশি কেন বুঝলাম না। কপ-১৯ সম্মেলনে ছিলাম আমি। সেখানে দেখলাম, স্কটল্যান্ডের মতো দেশে বায়ুদূষণ মান ছিল ২ শতাংশ। ঢাকায় যেটা ১০ শতাংশ প্রায়। ঢাকার আশেপাশে প্রচুর ইটভাটা আছে, এটা বায়ুদূষণের একটা বড় কারণ। ৭-৮ টাকা করে আমরা যে সিমেন্টের ব্লক পাই, যা আমাদের ইটের চেয়ে ভালো মানের। কনভেনশনাল ব্লকের দাম বেশি, যে কারণে আমরা ইটভাটাগুলো বন্ধ করতে পারছি না। সুতরাং এটার দাম কমানো দরকার।

তিনি বলেন, আমাদের সরকারের টার্গেট আছে ১০ শতাংশ এলাকা সৌরবিদ্যুতের আওতায় আনার। কিন্তু, পারছে না। বায়ূদূষণ রোধে পৃথিবীতে ইলেকক্ট্রিক কার আসছে। কিন্তু বাংলাদেশে বিআরটিএ ইলেকট্রিক গাড়ির  অনুমোদনই দেয় নাই। তাহলে কীভাবে হবে? আমাদের পরিকল্পনা আছে, বাস্তবায়ন নাই।

জসিম উদ্দিন বলেন, ২০৩০ সালে বাংলাদেশের ইকোনমিক যে অবস্থা দাঁড়াবে, তখন ৪০ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্যে দাঁড়াবে। এখন তো ৯.২ কেজি। তখন কী হবে? কাজেই বিদেশে কীভাবে ১০০ কেজি-১৫০ কেজি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করছে, সেটা বুঝতে হবে। উন্নত দেশ হতে হলে মূল থেকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। দেশে মাত্র ৪০ শতাংশের উপর প্লাস্টিক রি-সাইক্লিং হচ্ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্ব হচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের, কিন্তু তাদের কোথাও পাওয়া যায় না।

ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার বলেন, ৩টি ধাপে প্লাস্টিক দূষণ কমাতে চাই। প্রথমে, বেটার প্লাস্টিক অর্থাৎ রি-সাইক্লিং প্লাস্টিক তৈরি করা। ২০২৫ সালের মধ্যে আমরা ১০০ ভাগ রি-সাইক্লিং প্লাস্টিক ব্যবহার করব। দ্বিতীয়ত কম প্লাস্টিক ব্যবহার করা। আমাদের পণ্যের ক্যাটাগরি অনুযায়ী কম প্লাস্টিক ব্যবহার করা। তৃতীয়ত, কোনো প্লাস্টিক ব্যবহার না করা। পাশাপাশি, প্লাস্টিক ব্যবহারে ক্রেতাদের সচেতনতা তৈরি করা।

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সৈয়দ ইউসুফ সাদাত। আলোচনা করেন বায়ু মান বিশেষজ্ঞ মাসুদ রানা, দুস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিচালক ডা. দিবালোক সিংহ প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২২
এমকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।