ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে বাগেরহাটে ২ হাজার ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২২
সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে বাগেরহাটে ২ হাজার ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত

বাগেরহাট: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে বাগেরহাটে ২ হাজার ১৪০টি ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে ঘেরের মাছ, ক্ষতিস্ত হয়েছে ক্ষেতের ফসল।

জেলার বিভিন্ন উপজেলায় উপড়ে পড়েছে বিপুল পরিমাণ গাছ। সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ভারি বর্ষণ ও ঝড়ে এসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

মোংলা আবহওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী সোমবার একদিনে জেলায় ২১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর প্রভাবে প্লাবিত হয়েছে জেলার নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বসতবাড়ি। মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে জেলার বেশিরভাগ এলাকা। তবে এবারের ঝড়ে কেউ হতাহত হয়েছেন এমন খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে সুন্দরবনের কোনো বন্যপ্রাণির ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বাগেরহাটে ২ হাজার ১৪০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে ৭৫০টি ঘের ও পুকুরের মাছ। এতে প্রায় ৮৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ৮৫০ হেক্টর রোপা আমনের জমি, ৩৭৫ হেক্টর শীতকালিন সবজি, ১৭ হেক্টর পান বরাজ, ১১০ হেক্টর কলা, ২০ হেক্টর মরিচ, ৭ হেক্টর পেঁপে ও ৬ হেক্টর বিভিন্ন শীতকালিন সবজির বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিম্নাঞ্চলে জমে থাকা পানি দ্রুত অসরণ না হলে কৃষি খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান।

অন্যদিকে বাগেরহাট শহরের মাঝিডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকার বেশকিছু রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া, পঞ্চকরণ, বারুইখালী, বাগেরহাট সদরের মাঝিডাঙ্গা, কার্তিকদিয়া, যাত্রাপুর, কচুয়ার নরেন্দ্রপুর, পদ্মনগর, গোপালপুর, ভান্ডারখোলা, শরণখোলার সাউথখালী, খোন্তাকাটা, রায়েন্দা, ধানসাগরসহ বিভিন্ন এলকার অন্তত ২শ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের ২ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঝড়ের কারণে বাগেরহাট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির অন্তত ৩৫টি খুঁটি ও বেশকিছু সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে জেলার বেশির ভাগ এলাকা এখনো বিদ্যৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

বাগেরহাট শহরের মাঝিডাঙ্গা এলাকার শামীম হাসান বলেন, বেরিবাঁধ ভেঙে রাতে পানি প্রবেশ করে আমাদের বাড়িঘর সব ডুবে গেছে। মাছের ঘের, সবজি ও ধানক্ষেত সব এখন পানির নিচে রয়েছে। আমাদের গ্রামের অন্তত ৪শ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। এক কথায় আমাদের জনজীবন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

কচুয়া উপজেলার পদ্মনগর গ্রামের ফরমান শিকদার বলেন, গাছ পড়ে আমার বসত ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এই ঘরে আর বসবাস করার মতো অবস্থা নেই। শ্রমিক দিয়ে যে গাছ কেটে সরাবো সেই আর্থিক সক্ষমতাও নেই আমার।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল বলেন, বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলার ৭৫০টি ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। এতে চাষীদের প্রায় ৮৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাদের দ্রুত ঘের সংস্কার করে পুনারায় মাছ চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে জেলায় বেশকিছু আমনের ক্ষেত, মৌসুমি সবজি ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পানি নেমে না গেলে কৃষকদের আরও বেশি ক্ষতি হবে।

বাগেরহাট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মহা-ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ নুরুল হোসাইন বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ফলে আমাদের অনেক খুঁটি ও তার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ফলে গ্রাহকরা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেল। ক্ষতিগ্রস্ত বৈদ্যুতিক লাইন সংস্কার করতে ঠিকাদার ও আমাদের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে শতাধিক টিম গঠন করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, যতদ্রুত সম্ভব বাগেরহাটে বিদ্যুৎ সঞ্চালন স্বাভাবিক করা হবে।
 
জেলা প্রশাসক মো. আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ২ হাজার ১৪০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি ও মৎস্য খাতেও বেশকিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদেরকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।
 
বাংলাদেশ  সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, ২৫ অক্টোবর ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।