ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

মামলা জটে হতাশ হাজারো বিচার প্রার্থী

শাহিদুল ইসলাম সবুজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২২
মামলা জটে হতাশ হাজারো বিচার প্রার্থী

জয়পুরহাট: হাজার হাজার মামলার জট লেগে আছে জয়পুরহাটের জেলা জজ আদালতে। বাদি-বিবাদীরা বছরের পর বছর হাজিরা দিলেও মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না।

এতে হতাশ তারা। আইনজীবীরা বলছেন, তদন্ত প্রতিবেদনের ধীরগতি, বিচারক সংকটসহ নানা কারণে এ অব্যবস্থাপনার সৃষ্টি হয়েছে।

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বহরমপুর গ্রামের আবু নাছের এ আদালতের একজন বিচারপ্রার্থী। তার বেঁচে থাকার সময় ১০ শতাংশ জমি কেনা নিয়ে একটি মামলা হয়। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে মামলাটি চলে আসছে। বাবা বেঁচে না থাকলেও তাকে এ মামলায় প্রতিমাসে হাজিরা দিতে হচ্ছে নাছেরকে। দীর্ঘদিন ধরে হাজিরা দিতে দিতে এখন তিনি ক্লান্ত।

আবু নাছের বলেন, জমি কেনা নিয়ে এক প্রতিবেশীর সঙ্গে আমার বাবা মামলায় জড়ান। তিনি বেঁচে থাকা অবস্থায় কোনো সুরাহা হয়নি। তাই এর খেসারত দিতে হচ্ছে আমাকে। মনে হচ্ছে আমার জীবদ্দশায় এ মামলা শেষ হবে না।

আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, জমি সংক্রান্ত জেরে ২০০৮ সালে একটি মামলা দায়ের করেছিলাম। সেটি এখনও চলছে। মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়ায় আমি হয়রানি হচ্ছি প্রতিনিয়ত।

শুধু রবিউল ইসলামই নন, এমন হয়রানির শিকার হচ্ছেন জেলার বিভিন্ন মামলায় হাজার হাজার বিচারপ্রার্থী। তাদের অভিযোগ, বছরের পর বছর আদালতে ঘুরেও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় তারা অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন।

ভারত সীমান্তবর্তী উত্তরের ছোট জেলা জয়পুরহাটে মাদক, চোরাচালান, খুন, গুম, হত্যাসহ জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিনিয়ত মামলা হচ্ছে। এসবের মধ্যে ফৌজদারি মামলাই রয়েছে বেশি। মিথ্যা মামলার ভুক্তভোগীও অনেক।

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন জয়পুরহাট জেলা শাখার আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. নূর আলম মল্লিক বলেন, হাজার হাজার মানুষ বছরের পর বছর আদালতে হাজির হলেও নানা কারণে খুব সহজে তারা রায় পাচ্ছেন না। ফলে তারা যেমন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের মানসিক ক্ষতিও হচ্ছে। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা জরুরি।

জয়পুরহাট জজ কোর্টে অনুশীলনকারী আইনজীবী মানিক হোসেন বলেন, দ্রুত রায় না হওয়ায় বাদি-বিবাদীরা অনেক সময় মামলায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। যে কারণে তারা অনেক সময় এসব মামলার খোঁজ খবরও নেন না। এছাড়াও স্পর্শকাতর মামলাগুলোয় কখনো কখনো ৩০/৪০ জনেরও বেশি সাক্ষী করা হয়। তাদের অনেকেই হাজির হতে চান না। ফলে মামলার রায় প্রদানে দীর্ঘসূত্রিতা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জয়পুরহাট জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌশলী (পিপি) অ্যাডভোকেট নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল জানান, নিয়মিত সাক্ষীদের হাজিরা না দেওয়া, বিচারক সংকট, পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন সময়মতো আদালতে জমা না হওয়াসহ নানা কারণে প্রায় ৪০ হাজার মামলার জট রয়েছে। এসবের দ্রুত সমাধান দরকার। নতুন মামলাও যোগ হচ্ছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য তিনি সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।