ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নাটোরের আলোচিত কলেজ শিক্ষিকা সাথী সাময়িক বরখাস্ত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২
নাটোরের আলোচিত কলেজ শিক্ষিকা সাথী সাময়িক বরখাস্ত

নাটোর: নৈতিক স্খলনের দায়ে নাটোরের আলোচিত কলেজ শিক্ষিকা নাজমুন নাহার সাথীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে এ বরখাস্তের আদেশ কার্যকর হবে।

গত তিন মাস ধরে জেলা জুড়ে তাকে নিয়ে চলছিল ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।

বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন নাটোর সিটি কলেজ পরিচালনা পরিষদ। এদিন বিকেলে কলেজ পরিচালনা পরিষদ সভাপতি ও নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইসতিয়াক আহমেদ ডলার বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, গত জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে এই শিক্ষিকার সঙ্গে নাটোরে বসবাসকারী কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আমিনুল ইসলাম লিপনের ৪০ মিনিটের একটি পর্ণ ভিডিও শহরের লোকজনের মোবাইলে মোবাইলে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার দেড় মাস পর কলেজের ৭০ জন শিক্ষক-কর্মচারী, কিছু শিক্ষার্থী ও অন্য একজন নারী ভুক্তভুগি শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কলেজের অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন খানের কাছে লিখিত আলাদা তিনটি আবেদন করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার দাবি করেন।

বিষয়টি নিয়ে কলেজ পরিচালনা পরিষদের মিটিংয়ে আলোচনা হওয়ায় পর তাকে তিন বার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এসব নোটিশের জবাবে শিক্ষিকা ওই ডাক্তারকে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে করার দাবি করলেও তার স্বপক্ষে কোনো প্রমান উপস্থাপন করতে পারেননি।

এদিকে গত ১২ আগস্ট তারিখ ব্যবহার করে ওই শিক্ষিকা ঢাকা জজ কোর্টের মরহুম প্রবীণ আইনজীবী এম এ রেজার সিল স্বাক্ষর জাল ও স্ট্যাম্প ক্রয়ের তারিখ জালিয়াতি করেন। সেটি ব্যবহার করে তালাকের একটি হলফনামা ও তালাকের নোটিশের অনুলিপি হিসেবে কারণ দর্শানোর প্রথম নোটিশের জবাবের সঙ্গে গত ২৫ আগষ্ট কলেজে জমা দেন।

বিষয়টি কলেজের নজরে আসায় এবং তাকে পরবর্তি নোটিশে জালিয়াতির কারণ ব্যাখা করতে বলায় তিনি মরহুম প্রবীণ আইনজীবী এম এ রেজার সিল স্বাক্ষর জালিয়াতির কথা স্বীকার করেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর পুনরায় একই আদালতের আইনজীবী সোলায়মান হোসেনের সাক্ষরে নতুন আরেকটি হলফনামা জমা দেন।

কলেজ পরিচালনা পরিষদ সভাপতি ও নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইসতিয়াক আহমেদ ডলার বাংলানিউজকে বলেন, ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আসা অনৈতিক যৌনাচারের অভিযোগের সঠিক ব্যাখা এবং বিয়ের সঠিক প্রমান তিনি উপস্থাপন করতে পারেননি। উল্টো বিষয়টি ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য তিনি শেষ নোটিশের জবাবে নিজেকে বঙ্গবন্ধুর আর্দশের সৈনিক দাবি করে ব্যক্তি স্বার্থে জাতির জনকের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্ঠা করেছেন।

তিনি আরও বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করে বিষয়টি চুড়ান্তভাবে নিস্পত্তি করবেন।

কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা যদি স্বামী-স্ত্রী হবেন, তাহলে শহরের সবচেয়ে নিম্নমানের একটি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের চেম্বারে কেন যৌন সর্ম্পক স্থাপন করতে হবে।

নাটোর সিটি কলেজের সমাজকর্ম বিষয়ের বহুল আলোচিত ওই শিক্ষিকা নাজমুন নাহার সাথী ফোনে বাংলানিউজকে জানান, তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। প্রতিহিংসা বশত তাকে কলেজ থেকে সরানোর উদ্দেশে এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে।

সাময়িক বরখাস্ত প্রসঙ্গে তিনি জানান, এখনও ডাকযোগে বরখাস্তের কোনো চিঠিপত্র তিনি পাননি। তবে হোয়াটস্পটে একটি কপি তিনি পেয়েছেন। বিষযটি আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে মোকাবিলা করবেন বলেও জানান তিনি।

নাটোর সিটি কলেজের অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, জেলার অন্যতম প্রধান ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন একজন শিক্ষিকা গত ছয় বছর থেকে কর্মরত ছিলেন এটা ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে। কলেজের সব শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রী এমন শিক্ষিকার জন্য লজ্জিত ও বিব্রত।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।