ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এম এ পাসের অপেক্ষায় দিনমজুর বকুল

শাহিদুল ইসলাম সবুজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২
এম এ পাসের অপেক্ষায় দিনমজুর বকুল ছবি: শহরের বাটার মোড়ে কাজের সন্ধানে বসে আছেন বকুল চন্দ্র সরকার। 

জয়পুরহাট: বকুল চন্দ্র সরকার। বয়স ২৭।

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার বগড়া গ্রামের রমেন সরকার ও শেফালী সরকারের ছেলে। জন্মের মাত্র তিন মাসের মাথায় মা মারা গেলে বাবা তাকে লালন পালনের জন্য পার্বতীপুরের চাচেয়া গ্রামের ফুফু মিনা দেবীর কাছে পাঠিয়ে দেন।

এরপর সেখানেই আনন্দ বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে পিএসসি, ২০০৯ সালে পাটকা ঘাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি, ২০১১ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি এবং ২০২৩ সালে নবাবগঞ্জের আফতাবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পাশ করেন।  

এরপর ২০১৭ সালে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি হাজী মহসীন সরকারি কলেজ থেকে বাংলা বিভাগে বিএ অনার্স পাশ করেন। সর্বশেষ তিনি ২০১৮ সালে জয়পুরহাট সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হয়ে ২০২২ সালে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্টের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন।

দরিদ্র পালিত মা-বাবার কাছে বেড়ে ওঠা বকুল চন্দ্র সরকারকে প্রাইমারি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত লেখাপড়া করতে গিয়ে প্রচণ্ড লড়াই সংগ্রাম করতে হয়েছে এবং এই সংগ্রাম এখনো তিনি করে যাচ্ছেন। লেখাপড়ার প্রতি প্রবল ইচ্ছা শক্তি থাকা এই যুবক গত ৪ বৎসর ধরে জয়পুরহাট শহরের নতুন হাট এলাকার একটি গ্যারেজে মালিকপক্ষের আশ্রয়ে রাত্রীযাপন করছেন। আর সকাল হলেই শহরের পুরনো বাটার মোড়ে এসে বিভিন্ন বয়সী অন্তত ৫০ জন শ্রমিকের পাশে বসে থাকেন কাজের সন্ধানে।

সম্প্রতি কথা হয় সংগ্রামী এই যুবকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি আমার বেশ আগ্রহ ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আপন ফুফা-ফুফুর সহায়তায় এবং নিজের প্রচেষ্টায় এতোদূর পর্যন্ত লেখাপড়াটা চালিয়ে এসেছি। এখন মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছি।

তিনি আরও বলেন, আমি বাংলা বিষয়ের ছাত্র বিধায়, কেউ আমার কাছে প্রাইভেট পড়তে চায় না। এ জন্য বাধ্য হয়ে বাটার মোড়ে থাকা শ্রমিকদের সঙ্গে গত ৪ বৎসর ধরে আমিও শ্রমিকের কাজ করে লেখাপড়াটা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে বর্তমানে বাজারে কাজ কমে যাওয়ায় অধিকাংশ দিনই খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। আর সপ্তাহে যে দুই তিনদিন কাজ হয়, তা দিয়ে দ্রব্য মূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে টিকতে পারছি না। এরপরও ভাল কিছু হওয়ার আশায় দিন গুনছি।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত হোসেন বলেন, এই ধরনের অদম্য যুবকদের জন্য আমরা সমাজসেবা ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রেখেছি। প্রশিক্ষণ শেষে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে তারা সহজ শর্তে ঋণও গ্রহণ করতে পারেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২              
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।