ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলাদেশের কোনো দুর্বলতা নেই, মিয়ানমারকে সুস্পষ্ট বার্তা

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২
বাংলাদেশের কোনো দুর্বলতা নেই, মিয়ানমারকে সুস্পষ্ট বার্তা

ঢাকা: সীমান্তে মিয়ানমারের মর্টার শেল নিক্ষেপ ও গুলির ঘটনায় শক্ত অবস্থানে থেকেই প্রতিবাদ করছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে এ ঘটনায় বাংলাদেশের যে কোনো ধরনের দুর্বলতা নেই, সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে মিয়ানমারকে।

এছাড়া বাংলাদেশের সকল এজেন্সিকে সজাগ থাকতে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।

মিয়ানমার বার বার সীমান্তে মর্টার শেল নিক্ষেপ করলেও বাংলাদেশ এ ঘটনায় ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সীমান্তের ঘটনা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তুলতে চাইছে বাংলাদেশ। আর এই সুযোগে মিয়ানমার কোনো রোহিঙ্গাকে যেন পাঠাতে না পারে, সেই বিষয়েও সতর্ক রয়েছে সরকার।

মিয়ানমার সীমান্তের ঘটনায় রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সরকারি দলের শীর্ষ নেতা ও সরকারি কর্মকর্তারা নিজেদের অবস্থান সুস্পষ্ট করেছেন।

মিয়ানমারের ঘটনায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ভুলক্রমে ঘটেছে, নাকি উস্কানিমূলক তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, মিয়ানমার সীমান্তে আমাদের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) যথেষ্ট শক্তিশালী। তারা আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সজ্জিত রয়েছে এবং মনোবল শক্ত আছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রিয়ার অ্যডমিরাল (অব.) খুরশেদ আলম বলেছেন, আমাদের কোনো দুর্বলতা নেই, শক্ত অবস্থানে থেকেই তাদের সতর্ক করেছি।

সীমান্তে মিয়ানমারের মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনায় রোববার দেশটির রাষ্ট্রদূত উ অং কিয়াউ মোকে তলব করা হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশের সীমানায় মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনায় মিয়ানমারের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের ফলে ভুলক্রমে ঘটেছে, নাকি উস্কানিমূলক তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সীমানায় মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনায় শুরুতেই বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে জবাব চেয়েছিল এবং তাদের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। তখন মিয়ানমার জানিয়েছিল মর্টার শেলটি ভুলক্রমে বাংলাদেশের সীমানায় পড়েছে। ভবিষ্যতে তারা এ বিষয়ে সতর্ক থাকবে।  

ওবায়দুল কাদের বলেন, আবারও একই ঘটনা ঘটায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইন ও প্রটোকলের আলোকে খতিয়ে দেখছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মিয়ানমার সীমান্তে আমাদের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) যথেষ্ট শক্তিশালী। তারা আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সজ্জিত রয়েছে এবং মনোবল শক্ত আছে।

মিয়ানমারের ঔদ্ধত্যে বাংলাদেশ কীভাবে জবাব দেবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এর ভেতরের কাহিনীগুলো আপনারা সবাই জানেন। তারা এগুলো যে করছে তার ভেতরেই একটি কাহিনী আছে, আপনারা লক্ষ্য করবেন। তাদের সীমানা পেরিয়ে আমাদের সীমানায় তাদের গোলাবারুদ আসছে।

তিনি বলেন, আমাদের এখানে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যারা একদম জিরো লাইনে অবস্থান করছিল, সে এলাকার ক্যাম্পের ভেতরে যে গোলাবারুদগুলো এসে পড়ে, এর মধ্যে দুটো বিস্ফোরিত হয়েছে। এতে একজন নিহত হয়েছে এবং কয়েকজন আহত হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের বিজিবি কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজিপিকে। এখানেই আমরা ক্ষান্ত নই, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও তাদের কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে আমাদের আপত্তির কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল আছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রিয়ার অ্যডমিরাল (অব.) খুরশেদ আলম জানিয়েছেন, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদলিপি দিয়েছি। সীমান্তে যেসব ঘটনা ঘটছে, সেগুলোর পুনারাবৃত্তি যতে না হয় সেজন্য তাদের ডেকে সতর্ক করেছি। মিয়ানমারে কী হচ্ছে, সেটা দেখা আমাদের দায়িত্ব না। সেটা দেখার দায়িত্ব তাদের। মিয়ানমারের গোলা আমাদের এখানে যেন না পড়ে, সেটা বলা হয়েছে।

সীমান্তে মিয়ানমারের মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ অং কিয়াউ মোকে তলবের বিষয়ে খুরশেদ আলম বলেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিকামী রাষ্ট্র, অনেক দিন ধরেই আমরা ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছি। আমরা তাদের বলেছি, আপনারা আপনাদের সমস্যার সমাধান করুন, যাতে আমাদের এখানে কোনো রক্তারক্তি না হয়।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের সব এজেন্সির সাথে সভাও করেছি। বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে সজাগ থাকতে নির্দেশনা দিয়েছি। কোনো রোহিঙ্গা যেন বাংলাদেশে না ঢোকে, সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলেছি।

খুরশেদ আলম আরও বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে নিয়মমাফিক যা করা যায়, আমরা দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে সেটাই করছি। আমাদের কোনো দুর্বলতা নেই, শক্ত অবস্থান থেকেই তাদের সতর্ক করেছি। আমরা চেষ্টা করছি, আসিয়ান দেশগুলোর কূটনীতিকদেরও বিষয়টি অবহিত করতে। তাদেরকে ব্রিফ করা হবে।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের তেমন কোনো জবাব নেই। তিনি বলেছেন, এই তথ্যগুলো তিনি নেপিদোকে জানাবেন। ওনার একটি বক্তব্য আছে, এটা হয়তো আরাকান আর্মির গোলাগুলি হতে পারে। তবে আমাদের বক্তব্য ছিল, আপনাদের অভ্যন্তরে যা ঘটছে, সেটা আপনাদের দায়িত্ব। আমাদের এপারে যেন কিছু না হয়, সেটা আপনারা নিশ্চিত করবেন।

এর আগে রোববার সীমান্তে মিয়ানমারের মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনায় ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত তলব করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ওই কূটনীতিককে তলব করে সীমান্তের ঘটনায় কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়।

এদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের কোনাপাড়ার শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বাসিন্দা মো. ইকবালের মরদেহ শনিবার রাতে দাফন করা হয়েছে। রাতে পরিবারের সদ্যস্যরা শূন্যরেখার পাশে রোহিঙ্গাদের জন্য নির্ধারিত কবরস্থানে ইকবালের লাশ দাফন করেন।

এছাড়া মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে আহত পাঁচজন কক্সবাজারসহ ও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্যদিকে স্থলমাইন বিস্ফোরণে আহত বাংলাদেশি যুবক উনুসাই তংচঙ্গ্যা পায়ে আঘাত পেয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

গত কয়েকদিন ধরে মর্টার শেল ও স্থল-মাইন বিস্ফোরণের ঘটনায় সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত বাসিন্দাদের মধ্যে নতুন করে আবার আতঙ্ক বিরাজ করছে। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে থেমে থেমে বিস্ফোরণের শব্দ আর মাঝে মধ্যে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়ার ঘটনায় এপারের বাসিন্দাদের ভয় এখন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় ঘর থেকে বের হচ্ছেন না অনেকেই।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২
টিআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।