ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

শ্যামনগরে উপকূল রক্ষা বাঁধে মারাত্মক ধস

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২
শ্যামনগরে উপকূল রক্ষা বাঁধে মারাত্মক ধস

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ও আটুলিয়া ইউনিয়নের দুটি অংশে উপকূল রক্ষা বাঁধে মারাত্মক ধস দেখা দিয়েছে।

একদিকে টানা বৃষ্টি, অন্যদিকে নদীতে জোয়ারের উচ্চতা বাড়ার সময়ে বাঁধে এ ধরনের ফাটল ও ধস দেখা দেওয়ায় এলাকাজুড়ে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার করা না হলে যে কোন মুহূর্তে বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ এসব অংশ নদীতে বিলীন হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।  

যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানিয়েছে, ধস নামা অংশে বালু ও মাটি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ শুরু হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার আটুলিয়ার ইউনিয়নের বিড়ালাক্ষ্মী কুনের মাথা এলাকায় উপকূল রক্ষা বাঁধের প্রায় ১১০ ফুট পাশের খোলপেটুয়া নদীতে ধসে পড়েছে। সাতক্ষীরা পওর বিভাগ-১ এর অন্তর্ভুক্ত ৫নং পোল্ডারের ওই অংশ প্রায় মধ্যভাগ থেকে নদীতে দেবে যাওয়ায় সেখানকার বাঁধ সরু আইলে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ভাটার টানে পানি নেমে যাওয়ার সময় আকস্মিকভাবে বিকট শব্দে সেখানকার বাঁধের বাইরের অংশ ধসে পড়ে। এসময় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় সন্ধ্যার দিকে পাউবো কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

বিড়ালাক্ষ্মী গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, টানা তিনদিনের বৃষ্টির সঙ্গে গত কয়েকদিন ধরে নদীতে জোয়ারের পানি মারাত্মকভাবে বেড়েছে। এক পর্যায়ে মঙ্গলবার ভোরের দিকে ফাটল দেখা দেওয়ার পর সন্ধ্যায় ভাটা চলাকালে আকস্মিকভাবে সেখানকার বাঁধের বাইরের অংশ খোলপেটুয়া নদীতে ধসে পড়ে।

আব্দুর রহিম ও আয়েশা বেগমসহ স্থানীয়রা জানান, ড্রেজার মেশিনের সহায়তায় গত কয়েক মাস ধরে ধসে যাওয়া অংশের অনতি দূরে খোলপেটুয়া নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অব্যাহতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে চর দেবে সেখানকার বাঁধে ধস নেমেছে। চর দেবে যাওয়ায় আশপাশের আরও কয়েকটি এলাকার বাঁধও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বলেও দাবি স্থানীয়দের।

আটুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু সালেহ জানান, বাঁধে ধস নামার পরই পাউবো কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানোর পাশাপাশি স্থানীয়দের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। নওয়াবেঁকী বাজার থেকে ৪ কিলোমিটার দূরবর্তী ওই এলাকায় বাঁধের ধসে যাওয়া স্থানে ভাঙন দেখা দিলে বিড়ালাক্ষ্মী, নওয়াবেঁকী, গোদাড়াসহ উপজেলা সদরের একাধিক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে, উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের দাতিনাখালী এলাকার উপকূল রক্ষা বাঁধে বড় আকারের ফাটল দেখা দিয়েছে। গত ১৫ জুলাই একই এলাকার ভেঙে যাওয়া বাঁধের পার্শ্ববর্তী অংশে এ ফাটল দেখা দেয়।

স্থানীয়দের দাবি, শুরুতে ফাটল ১৫-২০ ফুটের মতো হলেও রাতে তা ৬০ ফুটের বেশি দীর্ঘ হয়েছে। লম্বালম্বিভাবে বাঁধের ওই অংশের ফাটলের কারণে সেখানকার বাঁধের বাইরের অংশ পার্শ্ববর্তী নদীতে বিলীনের শংকা দেখা দিয়েছে।

ফাটল ক্রমেই বাড়ছে দাবি করে স্থানীয়রা জানান, নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ার আর টানা বৃষ্টির কারণে তারা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। ভাঙন ঠেকানো না গেলে চার মাসের মধ্যে তৃতীয় বারের মতো বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের ৮-৯টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আব্দুল আজিজ ও সোহরাব হোসেনসহ স্থানীয় কয়েকজন জানান, বাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ায় তারা আবারও ভাঙন আতঙ্কে পড়েছেন। ক্রমেই ফাটলের আকৃতি বৃদ্ধি পাচ্ছে জানিয়ে তারা দ্রুত সেখানে সংস্কার কাজ শুরু করার আবেদন জানান।

মরিয়ম বেগম ও কামরুল ইসলামসহ দাতিনাখালী গ্রামের কয়েকজন জানান, গত দুই বছরে তারা অন্তত ৫ দফা ভাঙনের কবলে পড়েছেন। ইতোমধ্যে সর্বস্ব খোয়ানোর পর আবার বাঁধের ফাটল তাদেরকে শংকায় ফেলেছে। বিস্তীর্ণ এলাকার হাজার হাজার পরিবার নদীর পানিতে ভেসে যাওয়ার আগেই তারা ফাটল দেখা দেওয়া অংশের বাঁধ সংস্কারের দাবি করেন।

পাউবোর শ্যামনগর অঞ্চলের সহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদুল হক জানান, বিড়ালাক্ষ্মী এলাকার ধসে যাওয়া অংশে বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। বাঁধের ভিতরে জিওপি প্রটেকশনের কাজ শেষ হলে নদী অংশে জিও ব্যাগ ডাম্পিংসহ ভাঙন রোধে অন্যান্য কার্যক্রম শুরু করা হবে। এছাড়া দাতিনাখালী এলাকার ফাটল ধরা অংশের বাঁধের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।