ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ভারতে আটকা পড়া জেলেদের ফিরিয়ে না আনলে ধর্মঘটের ঘোষণা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২
ভারতে আটকা পড়া জেলেদের ফিরিয়ে না আনলে ধর্মঘটের ঘোষণা

 

 

ঢাকা: বঙ্গোপসাগরে ‘এফ বি সামিরা’ নামে একটি ফিশিং ট্রলার ডুবির ঘটনায় ভারতে আটকা পড়া ১৬ বাংলাদেশি জেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ উপকূলীয় মৎস্য ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়ন। একই সঙ্গে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের ফিরিয়ে না আনলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই দাবিতে মানববন্ধন করেছে সংগঠনটি।

বাংলাদেশ উপকূলীয় মৎস্য ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আনোয়ার হোসেন সিকদার বলেন, বিভিন্ন সময় সাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে ভারতীয় নৌসীমায় ঢুকে পড়ার কারণে সে দেশের কোস্টগার্ড ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে আটকা পড়ে কারাগারে রয়েছেন প্রায় ২ শতাধিক বাংলাদেশি জেলে। ফলে উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তাদের পরিবার দেশে মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমরা অবিলম্বে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, ট্রলার শ্রমিকরা ঝড় ও বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে পড়লে ট্রতাদের উদ্ধারে বাস্তব প্রদক্ষেপ নেওয়ার কেউ নেই। এজন্য সরকার নৌবাহিনী, কোষ্টগার্ড ও নৌপুলিশকে দায়িত্ব দিয়েছে। কিন্তু গভীর সাগরে যাওয়ার মতো কোনো শক্তিশালী নৌযান না থাকায় প্রতি বছর শত শত ফিশিংবোট ও ট্রলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফিশিংবোট ডুবে শ্রমিকরা মারা যায়।

তিনি অভিযোগ করেন, যে শ্রমিকরা প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করে এবং দেশের আমিষের চাহিদা মিটাতে বিশাল ভূমিকা রাখে সরকার তাদের জীবন বাঁচাতে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

তিনি আরও বলেন, ভুলবশত বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতে গেলে, সেদেশের কোস্টগার্ড জেলেদের আটক করে কারাগারে দেয়। তাদের ছাড়িয়ে আনতে পরিবারের সদস্যদের মাসের পর মাস ভারতে যেতে হয়, এতে লাখ লাখ টাকা খরচ হয়। সেই সঙ্গে আটক ট্রলারেরও অনেক ক্ষতি হয়। ভারতের কোনো ট্রলার বাংলাদেশ আটক হলে সেদেশের হাইকমিশনার জেলেসহ সেটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশের হাইকমিশনারের সঙ্গে শ্রমিকদের দেখা করাই মুশকিল হয়ে পড়ে, এটা আমাদের দুর্ভাগ্য।

এর আগে, গত আগস্ট মাসে সাগরে হঠাৎ ঝড় ও জলোচ্ছাসের কবলে পড়ে ‘এফ বি সামিরা’ নামের ট্রলারটি ডুবে যায়। এতে ১ জন জেলে মারা যায়। এছাড়া ওই ট্রলারের ১১ জন ও অন্য ট্রলারের ৫ জনসহ মোট ১৬ জন বাংলাদেশি জেলে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জীবনতলা থানার দক্ষিণ মাউখালীতে মোহাম্মদ জীবন মোল্লার হেফাজতে রয়েছেন।

মানববন্ধনে সংগঠনের পক্ষ থেকে ৪ দফা দাবি জানানো হয়। সেগুলো হল-

• ভারতে আটকে পড়া শ্রমিকদের অবিলম্বে ফিরিয়ে আনতে হবে। ডুবে যাওয়া ট্রলারের মরা যাওয়া মাঝি-শ্রমিকদের প্রতি পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ১০ (দশ) লাখ টাকা এবং প্রতি ট্রলারের জন্য ১৫ (পনের) লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

• প্রতি ট্রলারের মাঝি, শ্রমিক ও জেলেদের নামে ২০ (বিশ) লক্ষ টাকা গ্রুপ বীমা করে দিতে হবে।

• প্রতিটি ট্রলারের সন্ধানের লক্ষ্যে সীমান্ত রক্ষী নৌবাহিনী, কোষ্টগার্ড আওতায় থাকার জন্য প্রতিটি ট্রলারের ওয়াকিটকি দিতে হবে। সরকার প্রতি ট্রলারে জীবনরক্ষাকারী আধুনিক বয়া দিতে হবে এবং দিক নির্ণয় করার জন্য সাগরের কিনারে রাডার বাতি স্থাপন করতে হবে।
    
• ট্রলার শ্রমিক ও জেলেদের জন্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দকৃত মালামাল বন্টনের নামে লুটপাটচ বন্ধে ট্রলার শ্রমিক প্রতিনিধি, নৌবাহিনী, কোষ্টগার্ড, নৌপুলিশ, মৎস্য বিভাগ ও শ্রম দপ্তরের প্রতিনিধির সমস্বয়ে কমিটি গঠন করতে হবে।

মানববন্ধন শেষে ভারতে আটকে পড়া জেলেদের ফেরত আনার দাবিতে পররাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে আবেদন করা হয়।

মানববন্ধনে সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১১১ ঘন্টা, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২
এমকে/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।