ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

তালার কপোতাক্ষ নদ খনন প্রকল্পের ২য় পর্ব বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২২
তালার কপোতাক্ষ নদ খনন প্রকল্পের ২য় পর্ব বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা!

সাতক্ষীরা: ভেস্তে যেতে বসেছে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কপোতাক্ষ নদ খনন প্রকল্প (২য় পর্যায়)।

উপজেলার পাখিমারা বিলে কপোতাক্ষ নদ খনন প্রকল্পের আওতায় পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কার ও টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) চালু না হওয়ায় সরকার গৃহীত জনগুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে শংকা।

এছাড়া প্রকল্পের ২য় পর্যায়ের আওতায় পাখিমারা বিলে কৃষকদের ১৫৫৬.৬২ একর জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ দুই বছরের জন্য ১৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও অদ্যাবধি কোনো কৃষক ক্ষতিপূরণ পাননি।

ফলে টিআরএমভুক্ত বিলের জমির মালিকরা তাদের জমি নিজেদের দখলে নিয়ে সেখানে এখন মাছ চাষ করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ২য় পর্যায়ে ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দে গৃহীত কপোতাক্ষ নদ খনন প্রকল্প বাস্তবায়নে আন্তরিক না হওয়ায় প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন কপোতাক্ষ অববাহিকার জনগণ।

জানা গেছে, কপোতাক্ষ নদ অববাহিকার ১৫ লাখ মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালে ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প (১ম পর্যায়)’ অনুমোদন করেন। ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকার প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুনে শেষ হয়।

প্রকল্পটির প্রধান দুটি বিষয় ছিল ৯০ কিলোমিটার নদী খনন এবং তালা উপজেলার জালালপুর, খেশরা ও মাগুরা ইউনিয়নে অবস্থিত পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন। পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন হওয়ায় বিশাল বিলে নদের পলি অবক্ষেপিত হয়ে কপোতাক্ষ নদ খনন পরবর্তীতে নাব্যতা ধরে রাখে। এতে নদ অববাহিকার ১৫ লাখ অধিবাসী জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায়।

প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের অগ্রগতি অব্যাহত রাখার স্বার্থে ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২৪ পর্যন্ত নতুন প্রকল্প (২য় পর্যায়) গ্রহণ করে সরকার।

দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রকল্পটির মূল কাজ- পাখিমারা বিলে টিআরএম অব্যাহত রাখা এবং নদী খনন। কিন্তু ইতোমধ্যে এই প্রকল্প গ্রহণের পর ২ বছর অতিবাহিত হলেও টিআরএম পুনরায় বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই।

এদিকে ২০২০ সালে জলোচ্ছ্বাস ও উচ্চ জোয়ারের চাপে পাখিমারা বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে জালালপুর ও মাগুরা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে তৈরি ওই বাঁধ কিছুদিনের মধ্যে ভগ্নদশায় পরিণত হয়।

এমতাবস্থায় প্রকল্পের স্বার্থে ও জনগণের দাবির মুখে পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কারের লক্ষ্যে ২০২১ সালের মার্চ-এপ্রিলে টিআরএম বিলের সংযোগ খালের মুখ বেঁধে দেওয়া হয়, যা’ এখনও রয়েছে।

এ কারণে কপোতাক্ষ নদের ভবিষ্যৎ ও নদ খনন প্রকল্প বাস্তবায়নের সফলতা নিয়ে শংকা দেখা দিয়েছে।

তালার বালিয়া গ্রামের আব্দুল আলিম মোড়ল ও ফিরোজ সানা জানান, তাদের ৮ বিঘা করে জমি টিআরএম এর আওতায় আছে। ২০১১ ও ২০১২ সালে সরকার থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা পেলেও অদ্যাবধি আর কোনো টাকা তারা পাননি। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা ডিসি অফিসে বার বার যোগাযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি বলে জানান তিনি।

গৌতমকাটি গ্রামের মো. আলাউদ্দীন সরদার বলেন, এই বিলে তাদের ২২ বিঘা জমি রয়েছে। ২০১১ সালে ক্ষতিপূরণের টাকা পেলেও আর কোনো টাকা না পাওয়ায় তিনি এখন সেখানে মাছের ঘের করেছেন।  

তালা উপজেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান বলেন, কপোতাক্ষ নদ খননের প্রথম পর্বে ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় পর্বে ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলেও টিআরএম ভুক্ত বিলের জমির মালিকরা মাত্র দুই বছর ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। যে কারণে সেইসব মালিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখন সেখানে চাষাবাদ করছেন। এছাড়া বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কারে চলছে ধীরগতি। ফলে সরকারের প্রায় ৮শ কোটি টাকার প্রকল্প ভেস্তে যাওয়াসহ কপোতাক্ষ নদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু বলেন, ঠিকমতো ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় পাখিমারা বিলের কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তিনি বলেন, জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণ পেলে তাদের কোনো আপত্তি থাকতো না।

এদিকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ফেইজের টাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড জমা না দেওয়ায় কৃষকদের ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে কপোতাক্ষ নদ খননের দাবিতে আন্দোলন করা বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা পাখিমারা বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ অতিদ্রুত সংস্কার পূর্বক টিআরএম কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে নদ পুনঃখননের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, দ্বিতীয় ফেইজে নদী খনন সাতক্ষীরা অংশে প্রায় ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে।

টিআরএম এলাকার ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে তিনি বলেন, রেভিনিউ খাতে টাকা ধরা আছে। কৃষকরা ডিসি অফিস থেকে পর্যায়ক্রমে ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে যাবে।

তবে দ্বিতীয় ফেইজে ২ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও টিআরএম কেন চালু হয়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কৃষকরা ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় সেখানে কোন কার্যক্রম করা যাচ্ছে না।  

বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।