ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৬ মাস কাদা থাকে যে রাস্তায়

এস এস শোহান, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২২
৬ মাস কাদা থাকে যে রাস্তায়

বাগেরহাট: বছরের ৬ মাসের বেশি সময় ধরে কাদা থাকে বাগেরহাট সদর উপজেলার গাওখালী-রঘুনাথপুর সড়কে। আমাবস্যা-পূর্নিমার জোয়ার এলেই রাস্তায় পানি উঠে আসে।

কাদা-পানি মাড়িয়েই চলতে হয় দুই গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের।

দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রতিনিধি ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ধর্ন্যা দিলেও রাস্তাটি সংস্কার বা পাকা হয়নি। অনেকদিন ধরেই সড়কটি মাটি দিয়ে উঁচু এবং পাকা করার দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয়রা।

বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে কাদা-পানিতে একাকার হয়ে আছে রাস্তাটি। এমন অবস্থার মধ্যে দিয়েই প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রক্ষা করছেন স্থানীয়রা। কিন্তু এভাবে চলতে গিয়ে কাদায় পিছলে পড়ে অনেকে আহত হয়েছেন। এছাড়া শিক্ষাথীরা এ পথে চলাচল করার সময় তাদের বই-খাতা ভিজে যায়।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাঁওখালী-রঘুনাথপুর হয়ে মূল সড়কে আসার জন্য মধ্যবর্তী দুই কিলোমিটার রাস্তা প্রায় দুই দশক আগে ইটের সলিং দিয়ে তৈরি করা হয়। কিন্তু রাস্তার বেশিরভাগ ইট উঠে গেছে। আর যে অংশে এখনও ইটের সলিং রয়েছে, তাও আস্তে আস্তে উঠে গিয়ে কাদায় পরিণত হচ্ছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্মিত বাঁধ ও রাস্তাটি অল্প কিছু বৃষ্টি হলে বা জোয়ারের পানি বাড়লেই তলিয়ে যায়। ভেসে যায় পুকুর ও ঘেরের মাছ।

গাওখালী গ্রামের বাসিন্দা শতবর্ষী বিমলা সাহা বলেন, সারাজীবন স্বপ্ন দেখেছি একটি পাকা রাস্তা হবে। একের পর এক সরকার বদলেছে, অপেক্ষা শেষ হয়ে আক্ষেপে পরিণত হয়েছে কিন্তু আমার স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি।

স্থানীয় মনিষ কান্তি সাহা বলেন, বৃষ্টি হলে কাঁচা রাস্তায় কাদা-পানি জমে থাকে। তখন হেঁটে চলাও কঠিন হয়ে পড়ে। আর কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিতে দূর্ভোগের শেষ থাকে না। জেলা শহরের এত কাছে থেকেও আমাদের মতো হতভাগ্য আর কোনো এলাকা নেই।

গাওখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উৎপল সাহা বলেন, স্কুলে যেতে হলে ভিজে যেতে হয়। কাদায় পিঁছলে পড়ে যাই অনেক সময়। এভাবে স্কুলে যেতে আমাদের আর ভালো লাগে না।

রহিমা নামের আরেক এক শিক্ষার্থী বলেন, কালকেও আমাদের দুইটা বন্ধু পানির মধ্যে পড়ে যায়। হাটু সমান পানির মধ্যে দিয়ে আসতে আমাদের খুব ভয় লাগে।

তারক ভৈরাগী নামের এক ব্যক্তি বলেন, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়েও দুঃশ্চিন্তায় থাকি। কাদায় পড়ে না পানিতে ডুবে কে জানে। জোয়ারের সময় আবার রাস্তায় পানিতে স্রোতও হয়। বড়রাই ঠিকভাবে চলতে পারে না, সেখানে ছোট বাচ্চারা কিভাবে চলবে।

গাওখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক চিত্তরঞ্জন সাহা বলেন, রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে কষ্ট হয়। রাস্তা-ঘাট খারাপ হওয়ায় অনেকে আসতেই চায় না। এতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার অনেক ক্ষতি হচ্ছে।

স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের (গাওখালী) ইউপি সদস্য ইলিয়াস বালি বাংলানিউজকে বলেন, গ্রামের মধ্যে দুই কিলোমিটার রাস্তার কিছু অংশে ইট উঠে মাটি বের হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন রাস্তাটি সংস্কার করা হয়নি। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।

গোটাপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান শেখ শমসের আলী বলেন, আশপাশে পাকা রাস্তা থাকলেও দুই গ্রামের মধ্যে মাত্র দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা রয়েছে। সেটির জন্য স্থানীয়রা কিছুটা ভোগান্তিতে রয়েছেন। তবে আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এখানে পাকা রাস্তা হয়ে যাবে।

বিষয়ে বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয় কোনো জনপ্রতিনিধি এ রাস্তাটির বিষয়ে আমাদের জানাননি। আপনাদের মাধ্যমেই জানলাম। খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।