ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বাস মালিক সমিতির ৩ সিদ্ধান্ত, বাস্তবায়ন হয়নি একটিও

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২২
বাস মালিক সমিতির ৩ সিদ্ধান্ত, বাস্তবায়ন হয়নি একটিও

ঢাকা : রাজধানীর গণ-পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাস মালিক সমিতি তিনটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি একটিও।

এতে করে ওয়ে-বিলের মাধ্যমে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো বন্ধ ও স্টপেজ ছাড়া অন্য জায়গায় যাত্রী তোলা-নামিয়ে দেওয়া বন্ধ হয়নি।

নির্দেশনা অনুসারে বাসগুলোয় নতুন ভাড়ার তালিকা সাঁটানো হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ আছে, তালিকায় থাকা ভাড়া আদায় না করে অতিরিক্ত নিচ্ছে বাসের চালক-হেলপাররা।

বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে রাজধানীর শাহবাগ, সায়েন্স-ল্যাব, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, বিজয় সরণি, মহাখালী, বনানী, পল্টন, রামপুরা, কুড়িল, বাড্ডা এলাকা এমন অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে।

বিকাশ পরিবহনের বাসে চড়ে সায়েন্স ল্যাব থেকে কুড়িল পর্যন্ত আসেন বাংলানিউজের এ প্রতিবেদক। তিনি ভাড়া দিয়েছেন ৪৫ টাকা। অথচ ১৩ কিলোমিটার দূরত্বের এ পথে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়া ৩২ টাকা ৫০ পয়সা। সে অনুসারে কিলোমিটার প্রতি ২ টাকা ৫০ পয়সা হিসাব করলে ১২ টাকা ৫০ পয়সা বেশি নিয়েছে বিকাশ পরিবহন।

নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিকাশ পরিবহনের হেলপার জানান, তেলের দাম বাড়ছে তাই ভাড়া বেশি।

সরকার ভাড়া বাড়ানোর পরও কেন অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে, সে ব্যাপারে জানতে চাইলে হেলপার বলেন, ওয়ে-বিল প্রতি ২০ টাকা হারে ভাড়া বাড়ে, সে হিসেবে নিচ্ছি। পরে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নাম জানতে চাইলে কোনো কথা না বলে ১০ টাকা ফেরত দেন তিনি।

এ সময় বিকাশ পরিবহন কর্মীদের বাজে ব্যবহারের অভিযোগ তোলেন কয়েকজন যাত্রী। শাহজাহান নামে এক যাত্রী বলেন, অফিস আসার সময় প্রতিদিন আমি বনানী পার হয়ে রেডিসন হোটেলের সামনে নামি। বনানীতে চেকার উঠলেই ২০ টাকার ভাড়া ৪৫ টাকা করে নেয়। না দিলে খারাপ আচরণ করে।

বাংলানিউজের এ প্রতিবেদক যে বাসে চড়ে কুড়িল আসছিলেন, সেটি বনানী আসার পর একজন চেকার ওঠেন। এ সময় বাস মালিক সমিতি ও বিআরটিএ ওয়ে-বিল প্রথা বন্ধ করলেও কেন বাসে উঠেছেন জানতে চাইলে চেকার বলেন, মালিক বলেছে বলেই ওয়ে-বিল কাটছি। না বললে কাটতাম না।

ওয়ে-বিলের মাধ্যমে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ছাড়াও যত্রতত্র যাত্রী তোলা বন্ধ ও স্টপেজ ছাড়া অন্য জায়গায় যাত্রী তোলা-নামিয়ে দেওয়া বন্ধ করার নির্দেশনা পালন করছেন না গণপরিবহনের শ্রমিকরা। রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী কোনো বাসে এ নিয়ম মানা হচ্ছে না।

বুধবার (১০ আগস্ট) থেকে এসব বিষয়ে বাস-মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কথা থাকলেও কেন মানা হচ্ছে নাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহর কাছে বিষয়টি জানতে চায় বাংলানিউজ। তিনি বলেন, আমরা এটা নিয়ে কয়েক মাস কাজ করব। সব ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকব। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ভিজিল্যান্স টিমের কার্যক্রম চলমান থাকবে বলেও তিনি জানান।

এর আগে গত বছর যখন পরিবহনের ভাড়া বাড়ে, তখনও একই কথা বলেছিলেন এনায়েত উল্লাহ। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তই বাস্তবায়িত হয়নি।

বুধবার ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক সোমদানী খন্দকারের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে নেয় এ তিন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। কিন্তু মুখের কথা মুখেই রয়ে গেছে। অথচ তাদের দাবি পূরণ করেই যাচ্ছে সরকার। জ্বালানির দাম বাড়ানোয় বাস মালিকদের দাবির মুখে ভাড়াও বাড়ানো হয়। গত রোববার (৭ আগস্ট) থেকে নতুন ভাড়া কার্যকরও হয়। কিন্তু বাস মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি।

যাত্রীরা বলছেন, পান থেকে চুন খসার আগেই বাস মালিকদের দাবি বাস্তবায়ন হয়। কিন্তু যাত্রীদের কথার কোনো দাম নেই। যাত্রী ছাড়া পরিবহন চলবে না- এ কথা যেন বাস মালিকরা মানতে যায় না। তারা যা ইচ্ছা করে চলেছে, দোষ শুধু যাত্রীদের। নতুন যে সিদ্ধান্ত তারা দিয়েছে, সেটি না মানা দেশ ও সরকারের সঙ্গে বেইমানির সমতুল্য। কবে তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত মানবেন, না মানলে সরকার কী করবে, তা দেখতে চান যাত্রীরা।

বাংলাদেশ সময় : ২০৪৮ ঘণ্টা, ১১ আগস্ট, ২০২২
এনবি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।