ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ঢামেক চত্বরে পড়ে আছেন রোগাক্রান্ত ‘বৃদ্ধ’, ঘিরে রেখেছে কুকুর

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২২
ঢামেক চত্বরে পড়ে আছেন রোগাক্রান্ত ‘বৃদ্ধ’, ঘিরে রেখেছে কুকুর

ঢাকা: রোগাক্রান্ত অবস্থায় পড়ে আছে এক বয়স্ক লোক। দেখে মনে হচ্ছে শরীরের কোনো শক্তি নেই।

পড়ে থাকা ব্যক্তির কাছে গিয়ে লক্ষ্য করা যায় ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন। তার পাশে মানুষ না থাকলেও রাস্তার কুকুর অবস্থান নিয়েছে। কুকুরগুলো আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা খাবার খাচ্ছে। বয়স্ক লোকটি এতটাই রোগাক্রান্ত যে কুকুর তাড়ানোর শক্তিও তার নেই। এমন দৃশ্য দেখা গেল, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ময়দানে।

শনিবার (৩০ জুলাই) বিকেলে এ দৃশ্য দেখা যায়।  

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রবেশ করেই পুরাতন ভবনের সামনে পুলিশ ক্যাম্পের পাশে পড়ে আছেন নাম না জানা বয়স্ক ওই ব্যক্তি। আশেপাশে চলাচলকারী অনেকেই বলছে, তার বয়স হবে ৬০ থেকে ৬৫। তারা এও বলছে, এত বড় একটি হাসপাতাল অথচ দেখার কেউ নেই। হাসপাতালের কুকুরগুলো তার পাশে ঘেষে নিক্ষিপ্ত খাবারগুলো খেয়ে যাচ্ছে। আবার কুকুরগুলো কতক্ষণ পরপর ওই লোকের কাছে গিয়ে নাক দিয়ে সুখে, তারা হয়তোবা বোঝার চেষ্টা করছে লোকটা মারা গেছেন কিনা।  

চলাচলকারী মানুষরা আরও বলেন, এটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। কে কাকে বলবে, কত কর্তৃপক্ষ-ই তো সারাদিন এই জরুরি বিভাগ দিয়ে ঘোরাঘুরি করে। একটা মানুষ অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে তাকে কুকুরগুলো ঘিরে রেখেছে এটাও দেখার কেউ নেই!

‘অর্ধমৃত’ অবস্থায় পড়ে থাকা ওই ব্যক্তির গায়ে ময়লাযুক্ত একটি লুঙ্গি ও বোতামবিহীন একটি শার্ট পড়া। কিছুক্ষণ পরপর চোখ খুলে দুটি ঠোঁট নাড়িয়ে বারবার কী যেন বলার চেষ্টা করছেন। হয়তো তাঁর জিজ্ঞাসা- এত বড় দুনিয়ায়, এত মানুষ থাকতেও একটি মানুষও কি আমার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে না? একটি মানুষও আমার পাশে এসে দাঁড়াতে পারে না?

এ ব্যাপারে জরুরি বিভাগের ওয়ার্ড মাস্টার জিল্লুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেন। বলেন, প্রতিদিন কেউ না কেউ হাসপাতালে এভাবে লোক এনে ফেলে দিয়ে চলে যায়। কত মানুষকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দেব? ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতাল একটি এতিমখানা হয়ে যাচ্ছে।  

অবশ্য তিনি জানিয়েছেন আগামীকাল (রোববার ৩১ জুলাই) তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।

এদিকে হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্প (ইন্সপেক্টর) বাচ্চু মিয়া ওই বয়স্ক লোকটির বিষয়ে বললেন অন্য কথা। তিনি বলেন, বেশ কয়েকদিন যাবৎ ওই বয়স্ক লোকটি হাসপাতালে অবস্থান করছেন। অসুস্থতার কারণে তেমন হাঁটতে পারেন না। তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। সে ওয়ার্ডে থাকে না।

এদিকে হাসপাতালে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক জানান, যেহেতু হাসপাতালের ভেতর পড়ে আছে, আমাদের লোকজনের দেখার কথা। এরকম অজানা ব্যক্তিদের ওয়ার্ডে নিয়ে ভর্তি করালে তারা আবার ওয়ার্ডে থাকে না। ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গিয়ে আবারও হাসপাতালে ঘোরাঘুরি করে। এখানে সেখানে শুয়ে থাকে। হাসপাতালের জনবল এত নাই যে তাদের পাহারা দিয়ে চিকিৎসা দেবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২২
এজেডএস/এসএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।