ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

হেনোলাক্সের মালিকের কাছে আর কেউ পাওনা কি-না বিষয়টি তদন্তাধীন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৯ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২২
হেনোলাক্সের মালিকের কাছে আর কেউ পাওনা কি-না বিষয়টি তদন্তাধীন

ঢাকা: হেনোলাক্সের মালিক নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের কাছে পাওনা টাকার জেরে শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেন ব্যবসায়ী গাজী আনিস। এ ঘটনায় নুরুল আমিন (৫৫) ও ফাতেমা আমিনকে (৪৫) গ্রেফতারের পর র‌্যাব জানায়, গাজী আনিসের সঙ্গে তাদের লেনদেন ছিলো বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন।

 

তবে গাজী আনিস কতো টাকা পেতেন এ বিষয়ে ভিকটিমের অভিযোগ ও আসামিদের দাবির সঙ্গে তথ্যের গরমিল রয়েছে। তারা দাবি করেছেন, তাদের কাছে আর কেউ টাকা পেতেন না। তবে আর কেউ টাকা পেতেন কি-না কিংবা ভিকটিম গাজী আনিস কতো টাকা পেতেন বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

বুধবার (৬ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, গত ৪ জুলাই বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্ত্বরে গাজী আনিস নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। মূমুর্ষ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনষ্টিটিউটে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ জুলাই ভোরে তার মৃত্যু হয়।  

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন নিহতের বড়ভাই। যার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (৫ জুলাই রাতে) রাজধানীর উত্তরা থেকে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩ এর অভিযানে আসামি নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনকে গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার নুরুল আমিন ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত গোপীবাগ ঢাকা এলাকায় কাদের হোমিও হল নামে হোমিও হলে ১৫ বছর চাকরি করেন। ওই সময়ে তার একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার কথা মাথায় আসলে ১৯৯১ সালে হেনোল্যাক্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা শুরু করেন।

পরবর্তীতে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি নামকরন করে। ওই কোম্পানির অধীনে হেনোলাক্স কসমেটিকস্ যেমন হেনোলাক্স কমপ্লেকশান ক্রীম, হেনোলাক্স স্পট ক্রীম, হেনোলাক্স মেছতা আউট ক্রীম ও হেনোলাক্স হেয়ার অয়েল ও পল্ট্রি ফার্মের ব্যবসা করেন।

পরবর্তীতে বাজারে হেনোলাক্সের চাহিদা কমে গেলে ২০০৯ সালে তিনি আমিন হারবাল নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা শুরু করেন এবং ২০১৬ সালে হেনোলাক্সের ব্যবসা বন্ধ করে দেন।

তাদের কাকরাইলে একটি ফ্ল্যাট, পুরানো পল্টনে স্কাই ভিউ হেনোলাক্স সেন্টার নামে একটি ১০ তলা ভবন, পিংক সিটিতে ১টি ডুপ্লেক্স বাড়ি, মেরাজনগর কদমতলীতে হেনোলাক্স নামে ৪ তলা ভবন, মোহাম্মদবাগ কদমতলী এলাকায় হেনোলাক্স ফ্যাক্টরি রয়েছে।

গ্রেফতার ফাতেমা আমিন একটি বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডিএইচএমএস সম্পন্ন করে তার স্বামীর আমিন হোমিও হলে প্রথমে ১ বছর হোমিও চিকিৎসা করেন। তিনি তার স্বামীর প্রতিষ্ঠিত আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি তার স্বামীর আমিন হারবাল কোম্পানির দেখাশোনা করেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০১৬ সালে হেনোলাক্স পণ্যের বিক্রি অনেকটাই কমে যায়। পরে সেখানে ভিকটিম গাজী আনিসকে বিনিয়োগ করতে প্রলোভন দেখান। একপর্যায়ে গাজী আনিস ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করার কথা মামলার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে গাজী আনিসের আর্থিক লেনদেন ছিলো। তবে দুই পক্ষের কথাবার্তা যাচাই-বাছাই সম্ভব হয়নি। কি পরিমাণ টাকা পেতেন এ বিষয়ে অভিযোগ ও আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তথ্যের গরমিল রয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্তে বিষয়টি বের হয়ে আসবে।

তারা প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে, তারা কয়েক দফায় নগদ ও চেকের মাধ্যমে ৭৬ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন গাজী আনিসকে। কে কতো টাকা পাবে এ নিয়ে ভিকটিমের সঙ্গে তাদের বনিবনা হচ্ছিলোনা।

তাদের কাছে আর কেউ টাকা পাবেনা বলে জানিয়েছে আসামিরা। তবে তদন্তে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। আর কেউ এখনো অভিযোগ করেনি বা থানাতেও আর কোনো অভিযোগের তথ্য নেই বলেও জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২২
পিএম/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।