ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভাতি’র বাতাসে জ্বলছে আগুন, কামার বাড়ির ব্যস্ততা

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২০ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২২
ভাতি’র বাতাসে জ্বলছে আগুন, কামার বাড়ির ব্যস্ততা

ঢাকা: দড়ির টানে ‘ভাতি’র বাতাসে জ্বালানো কয়লার আগুনে পুড়িয়ে লোহা বা ইস্পাতকে লাল করে জোগানে রেখে হাতুড়ি-হ্যামার দিয়ে পিটিয়ে আকৃতি তৈরি। তাল-লয়ে মিলে বেজে ওঠা টুংটাং টুংটাং শব্দ।

এরপর পাথরে ঘষে ঘষে শান দেওয়া। অবশেষে ব্যবহারের উপযোগী হয়ে পূর্ণতা পাচ্ছে দা, বটি, ছুরি চাপাতিসহ কোরবানির পশু জবাই ও কাটাকাটির বিভিন্ন সরঞ্জাম। তাই পুরোদমে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কামার কারিগররা। ছুরি, চাপাতি, দা, বটি তৈরি ও শান দেওয়ায় ব্যস্ত রাজধানীর কামারপট্টিসহ বিভিন্ন এলাকায় থাকা কামার কারিগররা।

আগামী রোববার (১০ জুলাই) ঈদ-উল আযহা। নাওয়া-খাওয়া ভুলে কামারদের সম্পূর্ণ ধ্যান এখন তাদের কাজের ওপর। রাত-দিন চলছে তাদের কর্মযজ্ঞ। এদিকে, কোরবানির পশু কাটাকাটির বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি ও পুরোনো ছুরি চাপাতি শান দিতে কামারের দোকানে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। এদিকে, নতুন ছুরি-চাপাতিও বিক্রি হচ্ছে।

কামার কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবছর কোরবানির পশু কাটার সরঞ্জামের দাম বেড়েছে। কারণ, বাজারে লোহা-ইস্পাতের দাম বাড়তি। এদিকে কয়লার দামও বাড়তি। সব মিলিয়ে তৈরি করা ছুরি-চাপাতি ও দা-বটির মজুরিও বেড়েছে।

কামাররা বলছেন, বছরের ১১ মাসে তাদের তেমন কাজ থাকে না। কোরবানির এক মাসই তাদের কাজের মৌসুম। এ সময় তাদের আয়ের সুযোগ হয়। কোরবানির ঈদের আগের এক মাসে ব্যবসা হয়।  

উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে অবস্থানরত কামার কারিগর (মহাজন) মোহাম্মদ ইদ্রিস বাংলানিউজকে বলেন, স্প্রিং লোহা (পাকা লোহা) ও কাঁচা লোহা সাধারণত এ দুই ধরনের লোহা ব্যবহার করে ছুরি, চাপাতি, বটি ও দা বানানো হয়। প্রতি কেজি চাপাতি এক হাজার টাকা। এতে লোহাভেদে দামের তারতম্য রয়েছে।

তিনি বলেন, আমার এখানে এই মৌসুমে পাঁচজন কারিগর কাজ করছেন। দৈনিক তাদের এক হাজার টাকা মজুরি। একদিনে ৩ হাজার টাকার কয়লা লাগে। এদিকে থাকা খাওয়া বাবদ খরচ আরও ২ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে এক দিনে ১০ হাজার টাকা খরচ রয়েছে। আমাদের এখানে সব অর্ডারি মালামাল বানানো হয়। আমরা খুচরা কোনো মাল বিক্রি করি না।  

ইদ্রিস বলেন, সারা বছর তো আমাদের তেমন কোনো কাজ থাকে না। বছরে এই মৌসুমে কাজ করি। এতে কিছু লাভ থাকে। বছরের বাকি সময় টুকটাক বাসুলা, শাবল, সেনি তৈরি ও শান দিয়ে কেটে যায়। আর এই সময়ে আমার পরিচিত কাস্টমারদের (ক্রেতা) সঙ্গে যোগাযোগ করি, দেখা করি। ঈদের সময় তারাই আমকে কাজ দেন।

কোরবানির ঈদ উপলক্ষে আমার কাছে সব অর্ডারি মালামাল রয়েছে। এক সেট সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে- একটি চাপাতি, একটি বড় ছুরি (রান কাটা), দুটি ছোট ছুরি (চামরা ছোলা), একটি স্টিল (শান)। এই পুরো সেটের দাম ৪ হাজার ৫০ টাকা। এর মধ্যে চাপাতি- ১ হাজার ৮০০ টাকা, বড় ছুরি (রান কাটা)- ১ হাজার ৫০ টাকা, দুটি ছোট ছুরি (চামরা ছোলা)- ১ হাজার টাকা ও একটি স্টিল (শান)- ২০০ টাকা।

এদিকে, টঙ্গী কামারপট্টির কারিগর মো. অসম আলী কমাল বাংলানিউজকে বলেন, কাস্টমারের অনেক চাপ। অনেকেই রেডিমেট বানানো জিনিস নিয়া যাইতাছে। ছোট ছুরি ৩০০ টাকা, চাপাতি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। দা ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, জবাই করার ছুরি এক-দেড় হাজার টাকা। তবে   লোহার মানভেদে এর দাম কম বেশি হয়।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার কামারপট্টির কারিগররা জানান, কোরবানির পশু কাটার সব লোহার সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এখন লোহার দাম বেশি, কয়লার দাম বেড়েছে, কারিগরদের মজুরও বেড়েছে। এখন সব তৈরি করা হচ্ছে, ঈদের তিনচার দিন আগে বেচাকেনা বেড়ে যায়। আর অর্ডার দেওয়া জিনিসগুলো ডেলিভারি দেওয়ার সময় বিক্রি বাড়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২২
এসজেএ/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।