ঢাকা, বুধবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পরিত্যক্ত ধোপাদিঘী এখন সিলেট নগরের ‘ফুসফুস’

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৫ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২২
পরিত্যক্ত ধোপাদিঘী এখন সিলেট নগরের ‘ফুসফুস’

সিলেট: নগরের মানুষের হাঁটা-চলার স্থান নেই। সে চিন্তা ভর করেছিল সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আব্দুল মুহিতের মনে।

তার মনোবাসনা ছিল কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তরিত হলে সেখানে পার্ক করার। ইটপাথরের নগরীতে মানুষের জন্য একখণ্ড ‘ফুসফুস’ গড়ে তোলার। যেখানে নগরবাসী সবুজের সমারোহে মুক্ত বাতাসে হেঁটে বেড়াবেন। আর কারাগারের অভ্যন্তরের দিঘীকে পার্শ্ববর্তী ধোপাদিঘীর সঙ্গে একীভূত করে বিশাল লেক করা। যেখানে শান্তির পরশ অনুভব করবেন নাগরিকরা।

কারাগার স্থানান্তর হলেও সরকারি আদেশে পুরাতন কারাগার বহাল থাকে। প্রয়াত অর্থমন্ত্রীর সেই স্বপ্ন অধরা থেকে যায়। কিন্তু তার সেই স্বপ্নের সারথি হলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তার একান্ত প্রচেষ্টা ও ভারতের অর্থায়নে দখল-দূষণে হারিয়ে যেতে থাকা নগরের ধোপাদিঘী সৌন্দর্য বর্ধন, হাঁটা-চলা, বসার স্থান, রেলিং, ঘাটলা নির্মাণ করা হয়েছে। এক সময়ের নোংরা ধোপাদিঘী এখন নগরবাসীর ফুসফুস হয়ে উঠেছে।

জানা গেছে, ভারত সরকারের সহযোগিতায় প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ধোপাদিঘী এরিয়া ফর বেটার এনভায়মেন্ট অ্যান্ড বিউটিফিকেশন’ প্রকল্প শুরু হয় ২০১৭ সালে। প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করে ডালি কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু মাঝখানে করোনার ধাক্কায় নির্মাণ কাজ থেমে যায়। করোনা উত্তর সময়ে শতভাগ কাজ শেষে নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে ধোপাদিঘী।

সিলেট সিটি করপোরেশনের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর বাংলানিউজকে বলেন, নামকরা ঐতিহ্যবাহী ধোপাদিঘী চতুর্দিক ক্রমশ দখল হচ্ছিল। টয়লেটের আবর্জনা ও দখল দূষণে পরিত্যক্ত অচেনা এক দিঘীতে পরিণত হয় ধোপাদিঘী। ভারতীয় সরকারের অর্থায়নে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর তৎপরতায় এই পুকুর পুনরুদ্ধার করা হয়। এখানে সাড়ে ৪ একর জায়গা আছে। চারপাশে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে তৈরি করা হয়েছে। কাজটা শুরু করা হয়েছিল ২০১৭ সালে। বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে কাজটি করতে সময়ক্ষেপণ হয়েছে। ওইপাশে কারাগারের কিছু স্থাপনা সরানোয় এবং পরবর্তীতে করোনাকালে কাজ ব্যাহত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পুকুরটি এখন বৃষ্টির স্বচ্ছ পানিতে ভরাট হয়ে গেছে। সিলেটের জনগণের জন্য বিনোদনের বিশেষ জায়গা হলো। একই সঙ্গে এটা জনগণ তাদের নিজেদের সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করবেন। এখানে যে সমস্ত স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, নিজের হিসেবে সেগুলো যত্ন নেবেন। পুকুরের স্বচ্ছ জলে শিশুরা সাঁতার কাটতে পারবে। মোট কথা সিলেটের ফুসফুস হিসেবে কাজ করবে এ দিঘী।

সিসিকের এ প্রকৌশলী বলেন, ভারতের সঙ্গে এ দিঘীর সংস্কার ও সৌন্দর্য বর্ধনে এমওইউ সাক্ষর-কালে সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আব্দুল মুহিতও উপস্থিত ছিলেন। তার ইচ্ছা ছিল, জেলের ভেতরের পুকুরটি ধোপাদিঘীর সঙ্গে একীভূত করে ফেলা। কারাগার এলাকায় পার্ক না হলেও পাশের পরিত্যক্ত দিঘী দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সক্রিয় সহযোগিতা থাকায় দিঘীটি দৃষ্টিনন্দন করতে সক্ষম হয়েছে সিসিক।  

সিসিক সূত্র জানা গেছে, নোংরা দুর্গন্ধময় পরিত্যক্ত এই দীঘিকে নান্দনিক সৌন্দর্যে রূপ দিতে আশপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। ফলে দীঘির আকার আরও বেড়ে যায়। প্রায় সাড়ে ৪ একরের দিঘীটি দখল-দূষণে ভরাট হতে চলছিল। দখলে দিঘীর আকার ৩ দশমিক ৪১ একরে নেমে আসে। এখন বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৪ একরে উন্নীত হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর ওয়াকওয়ে, বসার বেঞ্চ, র‌্যালিং, ঘাটলা নির্মিত হয়েছে। চারিদিকে ফুলের চারাও লাগানো হয়েছে। পুকুরের আবর্জনা সরিয়ে প্যাডেল বোট, শিশুদের রাইডের জায়গা করা হয়েছে। আর গত কয়দিনের বৃষ্টিতে পুকুরে জমেছে পরিষ্কার পানি। সকাল থেকে সন্ধ্যা হাঁটা-চলার জন্য স্থানটি থাকবে উন্মুক্ত।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, নগরবাসীর হাঁটাচলার জন্য একটি নির্মল পরিবেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন ছিল। ধোপাদিঘীকে সংরক্ষণ করে এরকম একটি স্থান করা হয়েছে। হারিয়ে যেতে বসা নোংরা পানির দীঘির চারিদিকের ময়লা আবর্জনার জঞ্জাল পরিষ্কার করা হয়েছে। আশেপাশের দোকানপাটের টয়লেটগুলোর সরাসরি সংযোগ দিঘীতে দেওয়ার কারণে দূষণের ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বর্তমানে বাস্তবায়িত প্রকল্পের মাধ্যমে অবৈধ দোকানপাটসহ এসব জঞ্জাল অপসারণ করে দীঘিটি হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা হয়েছে।

জানা গেছে, শহরের বুকে এক সময় ছোট বড় অসংখ্য দিঘী ছিল পানির প্রধান উৎস ও ঐতিহ্য। প্রতিটি দিঘীই ছিল একেকটি ইতিহাস। এখন দিঘীগুলো নেই, আছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দিঘীর নামে এলাকার নাম। ব্যক্তি-স্বার্থে দিঘীগুলোকে ভরাট করা হয়েছে। ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

শনিবার (১১ জুন) দুপুর ১২টার দিকে দিঘীর চতুর্দিকের সৌন্দর্যবর্ধন কাঠামোসহ ওয়াকওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন হয়েছে। এদিন আরও দুটি প্রকল্পেরও উদ্বোধন হয়। প্রকল্পের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাই স্বামী ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২২
এনইউ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।