ঢাকা, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

গোয়াইনঘাটে বসুন্ধরার ত্রাণ পেয়ে খুশি বন্যার্তরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩২ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০২২
গোয়াইনঘাটে বসুন্ধরার ত্রাণ পেয়ে খুশি বন্যার্তরা

সিলেট: সাম্প্রতিক বন্যায় সিলেটের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটি গোয়াইনঘাট। এ উপজেলার পিয়াইন নদী সংলগ্ন আসামপাড়ার বেশির ভাগ মানুষ ছিলেন বন্যাকবলিত।

এখানকার বেশির ভাগ মানুষ শ্রমজীবী। পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় বেড়েছে বেকারত্ব। সেই সঙ্গে বন্যায় কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষগুলোর অনেকের ঘরে জ্বলছিল না চুলা।

এ অবস্থায় বুধবার (০৬ জুন) বিকেলে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ পেয়ে মহাখুশি গোয়াইনঘাটে বন্যার্তরা। সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিনের কাছ থেকে ত্রাণের প্যাকেট হাতে নিয়ে তারা বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

স্বামী আর তিন সন্তান নিয়ে জাফলংয়ের আসামপাড়ায় থাকেন ষাটোর্ধ্ব ফজিরুন বেগম। তার স্বামী অচল। এক সন্তান পাথরের কোয়ারিতে কাজ করতো। এখন আয় রোজগার না থাকায় খুব কষ্টে চলে তাদের সংসার। বসুন্ধরার ত্রাণ পেয়ে তিন বেলা অন্তত পেট ভরে খেতে পারবেন বলে জানান ফজিরুন।

ধলাই নদীতে পাথর তুলতেন ছমিরন বেগমের স্বামী রহমত আলী। সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে দুই বছর ধরে পাথর উত্তোলন বন্ধ। এরপর থেকে দিনমজুরের পেশা বেছে নেন রহমত। কোনোমতে চলছিল তাদের অনটনের সংসার।

কিন্তু এবারের ভয়াবহ বন্যা তছনছ করে দিয়েছে ছমিরনের সংসার। এলাকাজুড়ে চলছে নিরব হাহাকার। তাই হাতেও কাজ নেই রহমত মিয়ার। দুই দিন ধরে ছমিরনের ঘরের চুলোই জ্বলছিল না। বাড়ির পাশের দোকানদারও বাকির খাতা বন্ধ করে দিয়েছেন। উপায়ান্তর না পেয়ে তিন সন্তানকে নানার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন ছমিরন। চিড়া গুড় খেয়ে স্বামীকে নিয়ে পার করেছেন গত দুদিন। এই অবস্থায় বসুন্ধরার ত্রাণ পেয়ে দারুণ খুশি ছমিরন।

বুধবার বিকেলে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিনের কাছ থেকে ত্রাণের প্যাকেট হাতে নিয়ে ছমিরন কৃতজ্ঞতা জানান বসুন্ধরা গ্রুপকে। অশ্রুভেজা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘দুই দিন বাদে আইজ ঘরর ছুলা জ্বলবো। আল্লায় বসুন্ধরা গ্রুপর ভালা খরউক্কা। যেনতাইন ই ত্রাণ দিছইন আল্লায় তারার দুনিয়া-আখেরাতর ভালা খরউক্কা। ’

সিলেটের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দ্বিতীয় দফায় বসুন্ধরা গ্রুপের পাঠানো ৫ হাজার প্যাকেট ত্রাণ গতকাল বুধবার থেকে বিতরণ শুরু হয়েছে। সিলেট জেলা পুলিশের মাধ্যমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১২টি উপজেলার অসহায় লোকজনের মধ্যে এই ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন গতকাল বুধবার সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় ধাপের এই ত্রাণ বিতরণ উদ্বোধন করেন।

এর আগে সিলেটের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য আরও ৭ হাজার প্যাকেট ত্রাণ পাঠায় বসুন্ধরা গ্রুপ। গত ৩০ মে থেকে সেগুলোও জেলার ক্ষতিগ্রস্ত ১২টি উপজেলায় বিতরণ করা হয়।

ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে জেলা পুলিশকে সংযুক্ত করায় বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘২০০৪ সালের পর সিলেটের মানুষকে এত ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হতে হয়নি। বন্যার পানি নামলেও এর ক্ষত রয়ে গেছে। একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় লোকজনকে ঘরবাড়ি মেরামতের সংগ্রাম করতে হচ্ছে, অন্যদিকে দুবেলা দুমুঠো খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের ত্রাণ দিয়ে অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, যা প্রশংসার দাবি রাখে। ’

ত্রাণ বিতরণকালে আরও উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. লুৎফর রহমান, গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক, গোয়াইনঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ইখতিয়ার উদ্দিন, গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম নজরুল ইসলাম, পূর্ব জাফলং ইউপি চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা লুৎফুর রহমান লেবু, বাংলাদেশ প্রতিদিন সিলেট অফিসের নিজস্ব প্রতিবেদক শাহ্ দিদার আলম নবেল, বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট নাসির উদ্দিন, নিউজ২৪ এর নিজস্ব প্রতিবেদক সৈয়দ রাসেল, কালের কণ্ঠের আলোকচিত্রী আসকার আমিন রাব্বি, নিউজ২৪ এর ক্যামেরাপার্সন শফি আহমেদ প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২০২১ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০২২
এনইউ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।