ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

পদ্মা সেতু ঘিরে পেশা বদলের দুশ্চিন্তায় ভাসমান ব্যবসায়ীরা, সম্ভাবনা পর্যটনে  

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৩ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২২
পদ্মা সেতু ঘিরে পেশা বদলের দুশ্চিন্তায় ভাসমান ব্যবসায়ীরা, সম্ভাবনা পর্যটনে   ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: প্রমত্তা পদ্মার বুক চিরে নির্মিত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামোর অন্যতম ভিত্তি পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ২৫ জুন। উদ্বোধন উপলক্ষে পদ্মাপারের হকার ও ভাসমান ব্যবসায়ীদের মধ্যে পেশা বদলের দুশ্চিন্তা কাজ করছে।

 

অন্যদিকে পদ্মা সেতু চালুকে ঘিরে পর্যটনের নতুন সম্ভবনা সৃষ্টি হয়েছে, যা এসব ব্যবসায়ীকে আশার আলো দেখাচ্ছে।  

এ নিয়ে জাজিরা উপজেলার নওডোবা ইউনিয়নে মাঝিরঘাট ও মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাট ঘুরে বাংলানিউজের এ প্রতিবেদক হকার ও স্থানীয় ক্ষুদ্র কৃষিপণ্য বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করেছেন।  

দুই ঘাটকে ঘিরে যারা জীবিকা নির্বাহ করছেন তাদের মধ্যে বিনা পুঁজির ব্যবসায়ী ঘাটের হকার ও ক্ষুদ্র কৃষিপণ্য বিক্রেতা শ্রেণি। যারা লঞ্চ, ফেরিতে ঘুরে ঘুরে যাত্রীদের কাছে বিক্রি করেন ঝালমুড়ি, ছোলা, সেদ্ধ ডিম, সিঙ্গাড়া, নারকেলচিড়া, শসা, দইসহ নানা রকম মুখরোচক খাবার।  

প্রতিটি লঞ্চে তিন থেকে চারজন করে নানান জিনিস নিয়ে ওঠেন হকাররা। ঘাটের পন্টুনে ঘুরে ঘুরেও বিক্রি করেন অনেকে। এ দুই ঘাটে ও পদ্মাপাড়ের পর্যটক এলাকায় প্রায় ৩০০-এর মতো এ শ্রেণির মানুষ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।  

তাদের অধিকাংশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খরচ বাদ দিয়ে তাদের দৈনিক গড়ে ৮০০ টাকা আয় হয়। তবে অনেকে দেড় থেকে দুই হাজার টাকাও খরচ বাদ দিয়ে আয় করেন বলে জানিয়েছেন।  

মানিক মিয়া আইসক্রিম বিক্রেতা, বাড়ি মুন্সিগঞ্জের লৌহজং। শুক্র ও শনিবারে ৫-৬ হাজার টাকার বিক্রি হলেও অন্যদিন ১০০০ টাকার আইসক্রিম বিক্রি করতে পারেন তিনি।  

মানিক বলেন, ঘাট দিয়ে যাতায়াতকারী হাজার হাজার যাত্রী তাদের ক্রেতা। সেতু চালু হলে ঘাট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যাত্রী না থাকলে ব্যবসাও বন্ধ হবে। পর্যটকরা বেশি আইসক্রিম খান না বলেও মনে করেন তিনি।

মোহাম্মাদ রফিক পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা থেকে ২০ বছর আগে মাওয়া ঘাটে এসে দিয়েছিলেন বেকারি ও চায়ের দোকান। তিনি জানান, দৈনিক ১২ হাজার টাকা আয় হয়। শুক্র-শনিবারে ভিড় বেশি থাকে, এ দুদিন ২০ হাজার টাকা আয় হয়। দোকানের মাসিক ভাড়া ১৮ হাজার টাকা হলেও মাস শেষে ভাল আয় থাকে।

ব্যবসা আগের মতো থাকবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রফিক বলেন, সেতু চালু হওয়ার খবর আনন্দের। এই সেতুর কারণেই আমাদের পদ্মাপাড়ে আজ এতো উন্নয়ন। বিকল্প কিছুর ব্যবস্থা করতে হবে। আর যদি পদ্মা সেতু দেখতে পর্যটক হয় তাহলে ব্যবসা আগের মতোই থাকবে। এখনো দিনে-রাতে সবসময় মানুষ থাকে, সবাই তো যাত্রী না, পর্যটকের সংখ্যাই বেশি।  

লোহজং উপজেলার সামুরবাড়ী এলাকার বাদশা মিয়া জাম ভর্তা করে বিক্রি করছিলেন। তিনি জানান, বেঁচাকেনা থাকবে সেতু চালু হবার পরেও। মানুষ ঘুরতে আসবে, খাবে।  

গাইবান্ধা থেকে এসে ঘাট এলাকায় মিষ্টান্ন বিক্রি করেন হেমন্ত দাশ। তিনি বলেন, ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার বিক্রি হয়। ছুটির দিনে বেঁচাকেনা বেশি। তিনি প্রতি প্যাকেটে ২০ পিস প্যারা সন্দেশ বিক্রি করছিলেন, দাম রাখছিলেন ৮০ থেকে ১০০ টাকা। তিনি জানালেন ৬০ টাকার মতো খরচ হয়, বাকিটা তার লাভ থাকে।


বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২২
এনবি/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।