ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চলনবিল তলিয়ে গেছে বোরো ধান, বিপাকে কৃষক

ডিষ্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৬ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২২
চলনবিল তলিয়ে গেছে বোরো ধান, বিপাকে কৃষক

পাবনা: জেলার অন্যতম ধান উৎপাদনকারী অঞ্চল চাটমোহর উপজেলার চলনবিলে বন্যার পানিতে বোরো ধান তলিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।

উজানের ঢলের পানি বিভিন্ন নদ-নদী দিয়ে চলনবিলে প্রবেশ করেছে।

এতে তলিয়ে গেছে বিলের বেশিরভাগ পাকা বোরো ধানের ক্ষেত। কৃষকরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই চোখের সামনে নষ্ট হয়েছে সোনালী ফসল। এ যেন পাকা ধানে মই দেওয়ার মতো ঘটনা।

বিলের মুখে স্লুইচ গেট থাকলেও সেটি নষ্ট। এ কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। দিন-রাত পরিশ্রম করে পানির নিচ থেকে ধান কেটে ঘরে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তরা। তবে পানি বৃদ্ধি ও শ্রমিক সংকটের কারণে ক্ষেতের অনেক ফসলই কাটা হয়নি তাদের। তাই দিশেহারা হয়ে কিভাবে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন সেটি বুঝে উঠতে পারছেন না ধান চাষিরা।

বর্ষা শেষে শুস্ক মৌসুমে এ বিলে কৃষকরা ব্যাপকভাবে ধান উৎপাদন করেন। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই দেখা মেলে সোনালী ধান। বিল অঞ্চলের কৃষদের এ সময় বেশ ভালো ধানের আবাদ করে থাকে।

চলতি মৌসুমে এখানে বোরো ধানের ফলনও বেশ ভালো হয়েছিল। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই রতের আধারে পাকা ধানের ক্ষেতে জমেছে পানি। শ্রমিক সংকটের কারণে ক্ষেতের ধান কাটতে সময় নিচ্ছিলেন তারা। কিন্তু সেই তলিয়ে যাওয়া ধান এখন পরিবার পরিজন নিয়ে কেটে আনার চেষ্টা করছেন তারা। কোনো রকমে কেটে নৌকার অভাবে পলিথিন দিয়ে ভেলা বানিয়ে ধান ঘরে তুলছেন অনেকেই।

ভেজা ধান দ্রুত মাড়াই করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। পরিবার পরিজন নিয়ে কৃষক-কৃষানির যেন কষ্টের শেষ নেই। চখে-মুখে দেখা দিয়েছে চিন্তার ছাপ। কিন্তু তারপরেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়ে এ ক্ষতির সময়ে কৃষকের পাশে এগিয়ে আসেননি কেউ।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মো. আরমান আলী মোল্লা বলেন, আমরা সর্বশান্ত হয়ে গেছি। এতো কষ্ট করে ফসল ফলিয়ে চোখের সামনে নষ্ট হয়ে গেছে। বাঁধের স্লুইচ গেট ঠিক থাকলে আমাদের এই ক্ষতি হতো না। এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বারকে অনেক বলেও কোনো লাভ হয়নি। আর কৃষি কর্মকর্তারা দ্রুত ধান কেটে নেওয়ার কথা বলেই খালাস। এ যেনো আমাদের পাকা ধানের মই দেওয়ার মতো অবস্থা।

ক্ষতিগ্রস্ত আরেক কৃষক মো. আয়ুব আলী বলেন, হাজার হাজার বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। দেশে ধান কাটার শ্রমিক নেই বললেই চলে। এক শ্রমিকের মজুরি হাজার টাকা আর ধানের দাম মিলছে ৯০০ টাকা। বিপদে পড়ে বেশি টাকা দিয়ে নেওয়া শ্রমিকের সঙ্গে নিজেরাও কাজ করে ধান কাটার চেষ্টা করছি। বন্যার পানি সুইচগেট দিয়ে ঢুকে সর্বনাশ করে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সরকার কি আমাদের খাবার দেবে, ধান-চাল কিছু দেবে! দেনার দায়ে ডুবে আছি আমরা। সমিতি থেকে টাকা নিয়ে চাষ করে এখন সেই ধান পানির নিচে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, বিলের দুই পাশ দিয়ে যাতায়াতের জন্য কাচা সড়ক ছিল। জোরদারের প্রথম দিকে বড় বড় গাড়ি দিয়ে কিছু ধান তুলে আনার কারণে রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ছোট গাড়িও আর যেতে পারছে না। বিল থেকে ধানা আনার জন্য নৌকা নিয়ে নইলে পলিথিন দিয়ে ভেলা বানিয়ে ধান আনছেন কৃষকরা।

তারা বলেন, কৃষি বিভাগ যদি কিছু নৌকার ব্যবস্থা করতো তাহলে কৃষকের এতো কষ্ট করতে হতো না। আর এ বিপদের সময়ে রাজনৈতিক কোনো নেতারাও এগিয়ে আসেননি। সাহায্য না করলেও যেন বাঁধের সব স্লুইচ গেট সংস্কার করা হয় এ দাবি জানান তারা।

এ বিষয়ে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. আব্দুল লতিফ (পিপি) বলেন, বিষয়টি আগে থেকে আমাদের জানা ছিল না। তবে আগে থেকেই বলা হয়েছে, ৮০ শতাংশ ধান পেকে গেলেই কেটে ফেলতে।

তিনি আরও বলেন, ক্ষতির পরিমাণ নির্নয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। স্লুইচ গেট সংস্কারের জন্য উপজেলা প্রশাসনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে। জেলা সমন্বয় সভাতে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। সঠিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। প্রণোদনা বা সহযোগিতা এলে সেটি কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

জেলার চাটমোহর উপজেলার শেষ প্রান্তে সাইখোলা ও বিল চলন ইউনিয়নের মধ্যে চলনবিল প্রবাহিত হয়েছে। এ বিলের খোলসাগাড়ি, আফরাদহ, খোলারদহ, কুকুরগাড়ি, নলখুলা বিল অংশের কয়েক হাজার হেক্টর জমির বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ধান তুলেই কৃষকরা সারা বছর খেয়ে-পড়ে থাকেন। তবে এবারে যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠার মতো সামর্থ্য তাদের নেই।

বিলের পশ্চিম পাশে লটাবাড়ি অংশে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুইচ গেট। দীর্ঘদিন ধরে এটি নষ্ট থাকায় ক্ষতিতে পড়তে হয়েছে এ অঞ্চলের কৃষকের। সেই গেট দিয়েই মূলত সর্বপ্রথম বিলে পানি প্রবেশ করেছে।

চলতি মৌসুমে ৫৩ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়। আর শুধু চাটমোহর উপজেলাতে বিল অঞ্চলসহ ৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগের দেওয়া প্রাথমিক তথ্যমতে চলনবিলের ৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে সব মিলিয়ে কতো টাকার বা কী পরিমাণ ধান নষ্ট হয়েছে সেটি এখনো নির্ণয় করা যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২২
এফআর/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।