ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সুন্দরবনে বাঘে নিয়ে যাওয়া মৌয়ালের সন্ধান মেলেনি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৯ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২২
সুন্দরবনে বাঘে নিয়ে যাওয়া মৌয়ালের সন্ধান মেলেনি

সাতক্ষীরা: বাবা আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যুর ১৪ বছর পর একইভাবে সুন্দরবনে মধু আহরণ করতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারালেন তার একমাত্র ছেলে কাওছার গাইন (২৮)।

শনিবার (২১ মে) সকালে সুন্দরবনের খেজুরদানা (নোটাবেকী) এলাকায় মধু সংগ্রহের সময় বাঘের আক্রমণের শিকার হন তিনি।

রোববার (২২ মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত বনকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তার সহযোগী মৌয়ালরা ঘটনাস্থলসহ আশপাশের এলাকায় তল্লাশি করেও কাওছারের মরদেহ উদ্ধার করতে পারেননি বলে নিশ্চিত করেছে বনবিভাগ।

বাঘের আক্রমণের শিকার মো. কাওছার গাইন শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন গাবুরা ইউনিয়নের খলিশাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা। এক কন্যার জনক কাওছার গাইনের অপর সন্তান সম্প্রতি পানিতে ডুবে মারা গেছে।  

নিহত কাওছার গাইনের সহযোগী আলম হোসেন ও আব্দুল মাজেদ জানান, তারা গত ২২ মার্চ সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালীনি স্টেশন থেকে পাশ (অনুমতি) নিয়ে মধু সংগ্রহের জন্য সুন্দরবনে যান। কয়েকদফা এলাকায় ফিরে এ বছরের শেষ চালানের অংশ হিসেবে গত শুক্রবার থেকে তারা নোটাবেকী খেজুরদানা অংশে মধু কাটার কাজ শুরু করেন।

তারা আরও জানান, শনিবার সকালে অপর ৬ সহযোগীর সঙ্গে মৌচাক খোঁজার সময় বনের মধ্য দিয়ে হেঁটে এগিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে পাশের ঝোঁপ থেকে একটি বাঘ লাফিয়ে কাওছারের ওপর পড়ে। ঘটনার আকস্মিকতায় এক মুহূর্তের জন্য সঙ্গীরা আতঙ্কে দূরে সরে গেলেও দ্রুত প্রস্তুতি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই বাঘটি কাওছারকে নিয়ে বনের আরও গভীরে চলে যায়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ইমাম হাসান জানান, কাওছার গাইন, একই গ্রামের মোশারফ, আলম, সাইফুল মোড়ল ও আব্দুল মাজেদের সঙ্গে বনে যান। বাঘের আক্রমণে তার মৃত্যুর খবরে পরিবারে শোকের মাতম চলছে।

তিনি আরও জানান, ১৪ বছর আগে একইভাবে সুন্দরবনে মধু কাটতে যেয়ে কাওছারের বাবা আব্দুর রাজ্জাকও বাঘের কবলে পড়ে নিহত হয়েছিলেন।

কাওছার এলাকার অত্যন্ত বিনয়ী এবং ভাল মানুষ ছিলেন উল্লেখ করে তিনি জানান, বন-বাদা করতে যেয়ে গোটা পরিবারটি এখন নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। সরকারি-বেসরকারি সাহায্য-সহযোগিতা না মিললে পরিবারটি চরম অসহায়ত্বের মধ্যে পড়বে।

গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, শনিবার রাতে তারা কাওছারের বাঘে ধরার বিষয়টি জানতে পারেন। পরবর্তীতে বনবিভাগের সঙ্গে যোগযোগ করা হলে রোববার সকাল থেকে তারাও উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন।

তিনি জানান, কাওছার ছিলেন তার বৃদ্ধ মাসহ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বন থেকে ফিরে সন্তান সম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা দিলেও এখন পর্যন্ত তার মরদেহ উদ্ধার করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম এ হাসান জানান, কাওছার নামে এক মৌয়াল সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। রোববার সকালে বিষয়টি জানার পরই তার সহযোগী মৌয়ালদের নিয়ে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় বনবিভাগের একটি টিম। তবে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ ঘণ্টা, ২২ মে, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।