ঢাকা: নিউ মার্কেটের সংঘর্ষের ঘটনায় কুরিয়ারকর্মী নাহিদ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ঢাকা কলেজের পাঁচ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গ্রেফতার হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন ঢাকা কলেজ হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের আব্দুল কাইয়ূম (২৪), সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের পলাশ মিয়া (২৪) ও মাহমুদ ইরফান (২৪), বাংলা বিভাগের ফয়সাল (২৪), ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ১ম বর্ষের মো. জুনায়েদ বুগদাদী (১৯)।
ডিবি জানায়, বিভিন্ন ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাদেরকে শনাক্ত করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা সংঘর্ষের সময় অস্ত্রহাতে হেলমেট পরে ফ্রন্টলাইনে ছিলেন। নাহিদকে ঘিরে ধরে হামলায় সরাসরি অংশ নেন এই পাঁচ শিক্ষার্থী।
তবে ভাইরাল হওয়া আরেকটি ফুটেজে নিস্তেজ নাহিদকে কোপাতে থাকা ওই ব্যক্তিকে এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। ওই শিক্ষার্থীর নাম ইমন বলে প্রচার করা হলেও তার পরিচয় নিশ্চিত করে জানানো হয়নি। গ্রেফতারের পর তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছে ডিবি।
বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবি প্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে এই হত্যাকাণ্ডকে পূর্ব পরিকল্পিত মনে হয়নি। সংঘর্ষে তাৎক্ষণিক উত্তেজনায় এমনটি ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে গ্রেফতারদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
নিউমার্কেট সংঘর্ষে ঘটে যাওয়া দুটি হত্যা মামলার তদন্ত ডিবি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঘটনাটি তদন্তের ধারাবাহিকতায় এই হত্যাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাঁচ জনকে আমরা গ্রেফতার করেছি।
ঘটনার বিবরণে তিনি বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৮-১৯ এপ্রিল নিউমার্কেট এলাকায় ব্যাপক হামলা চালানো হয়। এতে নাহিদ ও মোরসালিন নামে দুজন নিহত হন। নিউমার্কেটের দুই দোকানকর্মী বাপ্পী ও কাউসারের মধ্যে ঝগড়ার সূত্রপাত ১৮ এপ্রিল বিকেলে। একপর্যায়ে বাপ্পী তার তিন বন্ধু ঢাকা কলেজের তিন শিক্ষার্থীকে ডেকে আনেন।
ওই শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন এমন গুজব ছড়িয়ে উস্কানি দিয়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা রাতভর হামলা চালান নিউমার্কেটে। পরদিন সকাল ১১টার দিকে আবার সংঘর্ষ শুরু হলে দুপুর ১টার দিকে নূরজাহান মার্কেটের সামনে নাহিদ ও চন্দ্রিমা মার্কেটের সামনে মোরসালিন আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, নাহিদের মাথার বাম পাশে, পিঠে ও পায়ে কাটা জখম পাওয়া যায়। মোরসালিনের মাথায় ইট বা ভারি বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই দুটি হত্যা মামলা ডিবিতে স্থানান্তরের পরপরই ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, হামলার অগ্রভাবে ছাত্রদের হাতে ধারালো অস্ত্র, স্ট্যাম্প, লাঠি ছিল। আর পেছন দিকের ছাত্ররা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছিলেন।
এদিকে নূরজাহান আর হকার্স মার্কেটের কর্মচারী ও হকাররা বিপরীত দিক থেকে ইটপাটকেল মারছিলেন। নিহত নাহিদ সরাসরি সামনে থেকে মারামারিতে অংশ নেন। তার হাতে বড় একটি ছাতা ছিল, যা দিয়ে ইট-পাটকেল ঠেকাচ্ছিলেন। ছাত্ররা ধাওয়া দিলে পেছন থেকে ব্যবসায়ীরা সরে গেলেও ছাতার কারণে তিনি দেখতে পাননি। ছাত্ররা ঘিরে ধরে তার ওপর হামলার একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ওই হত্যাযজ্ঞে যারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে অংশ নেন, তাদের মধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা অস্ত্র হাতে হেলমেট পরে হামলার ফ্রন্টলাইনে ছিলেন। এখন তাদেরকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হামলায় কার কী দায় আমরা জানতে পারবো।
মুরসালিন হত্যার বিষয়ে আমরা এখনো কোনো ফুটেজ বা প্রত্যক্ষ সাক্ষী পাইনি। যেহেতু মামলা চলছে, হয়তো এটি উদঘাটন হতে আরেকটু সময় লাগবে।
ভাইরাল হওয়া একটি ফুটেজে দেখা যায়, নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকা নাহিদকে একজন কোপাচ্ছেন- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাকে এখনো গ্রেফতার করা যায়নি। বিভিন্ন মাধ্যমে তার নাম ইমন বলে প্রচার করা হচ্ছে। তবে আমরা এখনো তার পরিচয় নিশ্চিত নই। আগে তাকে গ্রেফতার করা হোক, তারপর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। আমরা একদিন অভিযান চালিয়ে হলের রুম থেকে দুটি মোবাইল ফোন নিয়ে আসি, ইমনকে আমরা খুঁজছি।
হামলায় কোনো মিশন ছিল কিনা জানতে চাইলে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, এখন পর্যন্ত ঘটনাটিকে তাৎক্ষণিক ঘটে যাওয়া বলেই মনে হয়েছে। তবে তাদের মিশন ছিল কিনা রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২২
পিএম/এসআইএস
