ঢাকা, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

পিঠে বরশি গেঁথে ৪০ বছর ধরে শান্তিকামনা নিতাইয়ের!

সাগর ফরাজী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২২
পিঠে বরশি গেঁথে ৪০ বছর ধরে শান্তিকামনা নিতাইয়ের!

ধামরাই (ঢাকা): সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম একটি উৎসব চড়ক পূজা। এই পূজায় পিঠ জুড়ে বড়শি গেঁথে চড়ক গাছে ঝুলে চারদিক প্রদক্ষিণ করেন নিতাই চন্দ্র সরকার।

৪০ বছর ধরে এই পূজা করে আসছেন তিনি। এই পূজা তিনি বিশ্বের সকল মানুষের শান্তি কামনার জন্য করেন।

প্রতি পহেলা বৈশাখ এলেই ঢাকার ধামরাইয়ের কান্দিরকুল গ্রামের বাসিন্দা নিতাই গ্রহণ করেন সন্ন্যাস। আর বৈশাখের এই প্রথম তিন দিন চলে দোল যাত্রা, শিব-পার্বতী নাচানো, হাজরা, ধুপ নাচ ও চড়ক পূজা (বড়শি পিঠে গেঁথে শূন্যে ঘোরা)।
পহেলা বৈশাখ বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) এই চড়ক পূজা হওয়ার কথা থাকলেও ধামরাইয়ে একদিন পরে আয়োজন হয়। শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) বিকেল ৫টা থেকে ধামরাইয়ের যাত্রাবাড়ী মাঠে চড়কগাছ পূজা আয়োজন করা হয়েছে৷

এই পূজার আয়োজনে গিয়ে দেখা গেছে, নিতাই আসার আগেই চরকে গাছটিকে জড়িয়ে ধরে নৈকট্য লাভের আশা করছেন আগত ভক্তরা। এ সময় গাছটিকে চুমুও খেতে দেখা যায় তাদেরকে। একটু পরেই নিতাই সেখানে এসে বরশির সঙ্গে রশি লাগিয়ে ঝুলতে শুরু করেন। এর আগে তিনটি বড়বড় লোহার বরশি তিনি তার পিঠে গেঁথে নেন।
পরে শূন্যে উড়ে প্রায় ২১ পাক দেন তিনি। সেই সঙ্গে তার শিশু নাতি-নাতনিকে নিয়েও শূন্যে ঘোরেন। তার এই চড়ক ঘোরাকে কেন্দ্র করে মাঠটিতে একটি মেলা বেসেছে। বরশি দিয়ে শূন্যে ঘোরা দৃশ্যটি দেখতে আসেন হাজার হাজার মানুষ। প্রায় আধা ঘণ্টা পর তিনি চড়ক থেকে নামেন।  

নিতাই চন্দ্র সরকার শূন্যে ওঠার আগে বাংলানিউজকে বলেন, আমার চার পুরুষ এই আচার পালন করে এসেছেন। হিসাবে বলা যায় প্রায় ২'শ বছর আমরা এই পূজা করে আসছি। আমার বাবা করতে পারেননি। দাদুর পরে আমি ১২ বছর বয়স থেকে আবার শুরু করি। ৪০ বছর ধরে টানা আমি এই পূজা করে আসছি। শুধু এটা বলতে পারি, এই পূজার সময়ে আমি এক অন্য আধ্যাত্মিক জগতে চলে যাই। ঈশ্বরের জন্যে নিজেকে একদম সপে দেই। এ কারণে কোনো ব্যথা হয় না। আমি আলাদা এক মানুষ হয়ে যাই।

এই পূজা কীভাবে করেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চড়ক পূজাকে সামনে রেখে সন্ন্যাস গ্রহণের পরে বাড়িতে খাওয়া বন্ধ করে দেই। ঘুরে ফিরে মানুষ যা দেয় তাই খাই। সেটাও শুধু নিরামিষ। সন্ন্যাসীরা (সহযোগীরা) নাচেন। ভক্তরা নিজের সামর্থ্য মতো সিধা (চাল, অর্থ দান) দেন। এছাড়া সারাবছর আমি কিছু কবিরাজি চিকিৎসা করি। আজ আমার সঙ্গে সবাই আমিষ খাবে। পূজা শেষ হলে।

তিনি বলেন, যখন থেকে পূজার সময় শুরু হয়। হিন্দু-মুসলিম সবাই সহযোগিতা করে। উৎসাহ দেয়। চড়ক গাছে ঘোরার দৃশ্য দেখতে আসেন হাজার হাজার মানুষ। তখন বিষয়টা যতটা না পূজার আচার থাকে, তারচেয়ে বেশি হয় উৎসব। সেখানে হিন্দু-মুসলিম সবাই আসে।

নিতাই সরকারের মেয়ে নির্জনা সরকার বাংলানিউজকে বলেন, এটি শত বছর আগের পূজা। আমার বাপ দাদারা শত বছর ধরে এই পূজার আয়োজন করে আসছেন। এখন আমার বাবা এই পূজার আয়োজন করেছেন। পূজাকে ঘিরেই এখানে মেলা হয়। আমার বাবা শূন্যে ওড়ার সময় আমার ছেলে শুভ্রনীল সরকার ও ভাতিজা কৌশিক সরকারকে নিয়ে ওড়েন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২২
এসএফ/এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।