ঢাকা, সোমবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

অবসর কাটাতে ভ্রমণপ্রেমীরা বেছে নিচ্ছেন পদ্মাপাড়

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২২
অবসর কাটাতে ভ্রমণপ্রেমীরা বেছে নিচ্ছেন পদ্মাপাড় পদ্মার পাড়ে ভ্রমণপ্রেমীরা। ছবি: বাংলানিউজ

মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার শিবচরের পদ্মার পাড় এখন বিনোদনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। নদীর পাড়ের দীর্ঘপথ জুড়ে নদীশাসন বাঁধের ওপর দিয়ে হেঁটে বেড়ানো আর দুচোখ ভরে নদী ও প্রকৃতির সঙ্গে পদ্মা সেতু অবলোকন করতে প্রতিদিনই নানা শ্রেণীপেশার মানুষ আসে পদ্মা সেতু সংলগ্ন নদীর পাড়ে।

 

বিশেষ করে কাছ থেকে দাঁড়িয়ে পদ্মা সেতু দেখা এবং নদীর পাড়ের মনোরম পরিবেশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতে বিনোদনপ্রেমীদের আসা-যাওয়া দিন দিন বেড়ে চলেছে।  

পদ্মা সেতুর নাওডোবা এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, প্রতিদিন বিকেল হলেই পদ্মা সেতু দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে অংসখ্য মানুষ আসে এখানে। নদীশাসন বাঁধের ওপর দিয়ে হেঁটে বেড়ায়। বসে থাকে আর ছবি তোলে। দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ছেই। অনেকে আবার মোটরসাইকেল নিয়ে সকালের দিকেও আসে। দুপুর পর্যন্ত থেকে পদ্মায় গোসল করে, সাঁতার কাটে। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু সংলগ্ন এই এলাকাটি ক্রমান্বয়ে বিনোদন কেন্দ্র হয়ে উঠছে।  

সোমবার (২৮ মার্চ) বিকেলে সরেজিমনে গিয়ে দেখা গেছে সেতু দেখতে আসা নানা বয়সী মানুষের ঘুরে বেড়ানো।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে পদ্মা সেতুর জন্য নদীর বিভিন্ন স্থানে নদীশাসন বাঁধ দেওয়া হয়েছে। নদীর পাড়ের দীর্ঘপথ জুড়ে এই নদীশাসন বাঁধ এখন বিনোদন প্রিয়দের কাছে হাঁটা-হাঁটির এক অন্যতম স্থান হয়ে উঠেছে। নদীশাসন বাঁধে দাঁড়িয়ে পদ্মা সেতু বেশ কাছ থেকে দেখা যায়। এখানে দাঁড়িয়েই ঘুরতে আসা মানুষেরা ছবি তোলে, সেলফি তোলে সেতুর সঙ্গে। নদীশাসন বাঁধে বসে গল্প করে সময় কাটায় ঘুরতে আসা মানুষেরা।

মাদারীপুরের রাজৈর থেকে ঘুরতে আসা মো. হিমেল বলেন, বন্ধুদের নিয়ে একটু ঘুরতে এসেছি। পদ্মা সেতু এবং এই নদীর পাড় বেশ চমৎকার। নৌকা নিয়ে নদীতে ঘুরে বেড়ানো যায়। গোসল করা যায়। সব মিলিয়ে বেশ ভালো লাগছে। দূর-দূরান্ত থেকেও অনেকেই আসেন শুধু পদ্মা সেতু দেখতে। '

ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকা থেকে আসা আফরিন আক্তার বলেন, 'কাজিনরা মিলে পদ্মা সেতু দেখতে এসেছি। নদীর পার বেশ চমৎকার করে বাঁধানো। বিকেলে বেশ ঠাণ্ডা পরিবেশ। হালকা বাতাস থাকে। চোখের সামনেই পদ্মা সেতু। ভালো লাগে। পদ্মা সেতু ঘিরে এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা উচিত। তাহলে সাধারণ মানুষ কাছাকাছি একটু বেড়ানোর জায়গা পাবে। '

এনায়েত খান নামে এক প্রবাসী বলেন, 'আমি দেশে এসেছি কিছুদিন আগে। পদ্মা সেতুর এতটা কাছে এসে দেখিনি এর আগে। পদ্মা সেতু দেখতেই এখানে এসেছি। অনেক লোকজন এখানে ঘুরতে এসেছে। নদীর পাড় কেন্দ্রিক বিনোদনকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে এই এলাকা। '

এদিকে পদ্মা সেতু দেখতে আসা সাধারণ মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকায় স্থানীয়রা ছোট ছোট দোকানও গড়ে তুলছেন এখানে। ভাসমান বিক্রেতাদেরও দেখা গেছে। যারা মূলত নদী পাড় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা। ঘুরতে আসা মানুষের জন্য নানা মুখরোচক খাবারও বিক্রি হচ্ছে এখানে। স্থানীয় অনেকেই নতুন করে ব্যবসা শুরু করেছেন এই পর্যটনকে ঘিরে। কেউ আইসক্রিম বিক্রি করছেন, কেউ ঝালমুড়ি বিক্রি করছেন। আবার ছোট ছোট দোকানে চা থেকে বিক্রি হচ্ছে নানান কিছু। বিক্রি হচ্ছে বাচ্চাদের বিভিন্ন খেলনাও। পদ্মা সেতুকে ঘিরে ধীরে ধীরে পর্যটনের বিকাশ ঘটছে এই এলাকায়। এতে করে স্থানীয়দের ব্যবসা-বাণিজ্যেও এসেছে নতুনত্ব। বাড়ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর সংখ্যা। এতে করে অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।

শিবচরের পদ্মাবেষ্টিত কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহসেন উদ্দীন সোহেল বেপারী বলেন, পদ্মা সেতু ঘিরে চরাঞ্চলের বড় ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তনের একটি অংশ হচ্ছে পর্যটন। পদ্মা সেতু দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে নানা শ্রেণীপেশার মানুষ ঘুরতে আসছে এখানে। ইদানিং নদীর পাড়ে ঘুরতে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বিকেল হলে পদ্মার নদীশাসন বাঁধে অসংখ্য মানুষ দেখা যায়। এটা একটা সম্ভবনা। পদ্মা সেতু ঘিরে এই অঞ্চলে পর্যটনের বিকাশ ঘটবে বলে আশাকরি। '

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান জানান, 'পদ্মাসেতুকে ঘিরে চরাঞ্চলে উন্নয়ন হচ্ছে। একইসঙ্গে পদ্মা নদীকেন্দ্রিক এলাকায় ভ্রমণপ্রেমীদের উপস্থিতি বাড়ছে। তাছাড়া পদ্মাসেতু ঘিরে পদ্মার চরাঞ্চলে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে কাঁঠালবাড়ীতে ভ্রমণতরীরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে করে ভ্রমণপ্রেমীরা নৌকায় করে ঘুরতে পারে। পদ্মার চরাঞ্চল ক্রমন্বয়ে ভ্রমণপ্রেমীদের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হয়ে উঠবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।