ঢাকা: রাজধানী ঢাকার যানজট ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই সড়কজুড়ে গাড়ির দীর্ঘ জটলায় প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরীজুড়ে উন্নয়ন কাজের চাপে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ছোট হয়ে পড়েছে। এর বাইরে দীর্ঘ বিরতির পর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় বেড়েছে স্কুলকেন্দ্রীক ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ। এর ফলে প্রধান সড়কের বাইরেও গাড়ির দীর্ঘ জটলা ছড়িয়ে পড়েছে নগরীর অলি-গলিতেও।
বুধবার (১৬ মার্চ) সকাল থেকেই রাজধানীর আসাদগেট, ফার্মগেট, বিজয় স্মরণী, শাহবাগ, বনানী, উত্তরা, মিরপুর এলাকাসহ প্রায় পুরো ঢাকা জুড়েই তীব্র যানজটের খবর পাওয়া গেছে। যানবাহনের ধীরগতির ফলে কোন কোন ট্রাফিক সিগন্যালে ঘণ্টা পার হতে দেখা গেছে।
তবে মঙ্গলবারের (১৫ মার্চ) তুলনায় আজ যানজট কিছুটা কম বলে দাবি করেছেন ট্রাফিক পুলিশ সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) পুরোদমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুরু হওয়ায় সাধারণত অফিসগামী মানুষের পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না। একই সময়ে স্কুল ও অফিসগামী যানবাহনের তীব্র চাপে প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল ঢাকা।
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বাড়তি ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। সড়ক স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।
ফার্মগেট এলাকায় যানজটে বসে থাকা মিরপুর থেকে মতিঝিলগামী একটি বাসের যাত্রী রওশন আলম জানান, তিনি একটি বেসরকারি অফিসে চাকরি করেন। মঙ্গলবার মিরপুর-১০ থেকে মতিঝিল যেতে তিন ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। এর ফলে সময়মতো অফিস ধরতে পারেননি। তাই আজ আরো এক ঘণ্টা আগে বাসা থেকে বের হয়েছেন। এক ঘণ্টায় মিরপুর থেকে ফার্মগেট এলেও বাকিটা পথ সময়মতো পার হতে পারবেন কি-না জানেন না।
অনেকটা ক্ষোভ নিয়েই তিনি বলেন, যতোই দিন যাচ্ছে ঢাকার যানজট অসহনীয় হয়ে উঠছে। আসলে এর শেষ কোথায় বা শেষ আছে কি-না কেউ জানে না। একটা মানুষ অফিসে নির্ধারিত কর্মঘণ্টার ৮ ঘণ্টার বাইরে যদি গড়ে ৫ ঘণ্টা যানজটে বসে থাকি তাহলে জীবনে আর কী থাকে?
এদিকে, সকাল থেকে কিছু সড়কে বাড়তি গাড়ির চাপের কারণে কিছু সড়কে পরিবহন সংকট দেখা গেছে। এর ফলে অফিসগামী মানুষরা বিশেষ করে নারী যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। অনেককে হেঁটেই গন্তব্যের দিকে রওনা দিতে দেখা গেছে।
আসাদগেট এলাকায় ফারজানা আউয়াল নামে একজন জানান, তিনি মহাখালী এলাকায় অফিসে যেতে নির্ধারিত সময়েই শ্যামলীর বাসা থেকে বের হয়েছেন। বাসে উঠতে না পেরে হেঁটে হেঁটে আসাদগেট পর্যন্ত এসেছেন। এখন সিএনজি খুঁজছেন গন্তব্যে যেতে, কিন্তু স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ভাড়া দাবি করছেন সিএনজি চালকরা।
বাড্ডা এলাকা থেকে শাহবাগ বাড়ডেম হাসপাতালে এসেছেন আতিক। সিএনজি নিয়ে আসতেও তার আড়াই ঘণ্টার মতো সময় লেগেছে জানিয়ে তিনি বলেন, সকাল বেলা গাড়িতে কোনো রকমভাবে উঠতে পারলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সিএনজি চালকরাও বাড়তি ভাড়া দাবি করেন এ সুযোগে। দেখা যাচ্ছে আমার ডাক্তার দেখানো ১০ মিনিটের কাজের জন্য সড়কে বসে থাকতে হলো ৫-৬ ঘণ্টা।
এদিন সকাল থেকে বিভিন্ন স্কুল কেন্দ্রীক ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ দেখা গেছে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলে পৌঁছে দিতে এসেছেন। অনেক ক্ষেত্রে স্কুলের আশে-পাশের গলিতে গাড়ি পার্ক করে অভিভাবকদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ফলে রিক্সা-সিএনজির তীব্র জটলা দেখা গেছে অলি-গলিতেও।
শাহবাগ এলাকায় দায়িত্বরত এক ট্রাফিক সদস্যের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকায় যানজট থাকে না কবে বলেন? গতকাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কারণে হঠাৎ করে বাড়তি চাপে সড়ক স্থবির হয়ে পড়েছিল। তবে আজ গতকালের তুলনায় কিছুটা স্বাভাবিক আছে। দেখা গেছে অফিসগামীরা সময় নিয়ে আরো আগে বের হয়েছেন। এছাড়া, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি অন্য পুলিশ সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন। ট্রাফিক পুলিশ সড়ক স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২২
পিএম//এসআইএস