ঢাকা, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘আমার বাঁশির সুর থামলে পরিবারের পেট চলে না’

মেহেদী নূর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৮ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০২২
‘আমার বাঁশির সুর থামলে পরিবারের পেট চলে না’ বংশীবাদক আব্দুল জলিল

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: বংশীবাদক আব্দুল জলিল (৪৫)। পথে প্রান্তরে বাঁশি বাজিয়ে ও বিক্রি করে চলে তার জীবন।

১২ বছর বয়সে বাঁশির সুরের মোহে আকৃষ্ট হয়ে বাঁশি শেখেন। এরপর থেকে বিভিন্ন মেলায়, অনুষ্ঠানে, যাত্রায় নিজের বাঁশির সুরের ছন্দে মন ভরিয়েছেন শ্রোতাদের। তাদের আনন্দে নিজেও আনন্দিত হতেন।

আর তাই বাঁশি বাজিয়ে জীবন চালানো অনেক কঠিন জেনেও বেছে নিয়েছেন এই পথটিকেই। প্রায় ৩০ বছর ধরে বাঁশি বাজিয়ে আর বাঁশি প্রেমীদের কাছে বিক্রি করেই জীবন সংগ্রামে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নিজের হাতে নিপুণভাবে তৈরি করা বাঁশি দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন তিনি।

বংশীবাদক আব্দুল জলিলের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার ঘাটুয়া গ্রামে। স্ত্রী এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে তার সংসার। জীবিকার তাগিদে বেশিরভাগ সময়ই বাড়ির বাইরেই কাটাতে হয় তাকে।

সে সুবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের কুমারশীল মোড়ের রাস্তা দিয়ে বাঁশির রেনু তুলে হেটে যাওয়ার সময় দেখা মিলে বংশীবাদক জলিলের। কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার বয়স যখন ১০-১২। তখন বিভিন্ন মেলা ও যাত্রা পালা অনুষ্ঠানে বংশীবাদকের সুর আমার ভালো লাগত। এরপর থেকেই বাঁশি বাজানো রপ্ত করি। এক পর্যায়ে এটাকে পেশা হিসেবে বেছে নেই।

বাঁশি তৈরির বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথমে বাজার থেকে বাঁশ কিনে এনে এগুলো কেটে রৌদে শুকাই। পরে আগুনে তাপ দিয়ে রডের মাধ্যমে বাঁশির কাঠামো ঠিক করি। এরপর রংতুলির মাধ্যমে বাঁশি তৈরির পর এগুলোকে বিক্রির উপযোগী করে তুলি।

তিনি বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন স্কেলের একশত বাঁশি তৈরি করে সেগুলো নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াই। সিলেট, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার শহর ও গ্রামীণ জনপদের হাট, ঘাট, পথ প্রান্তর ও জনবহুল এলাকাগুলোতে বাঁশির ঝুলি কাঁধে নিয়ে বাঁশির সুর তুলে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে বাঁশি বিক্রি করি। তবে গ্রামীণ জনপদে বাঁশির প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকলেও ইট পাথরের শহরে এর কদর নেই বললেই চলে।

জলিল বলেন, শহুরে জীবনে কেউ আর বাঁশি নিয়ে ব্যস্ত থাকে না। তাই গ্রামগুলোতে ঘুরে ঘুরে বাঁশি বিক্রি করতে হয়। আমার কাছে হরেক রকমের বাঁশি রয়েছে। এসব বাঁশি প্রকারভেদে আড়াই স্কেল থেকে সাড়ে ১২ স্কেলের হয়ে থাকে। যা দিয়ে মনের মত করে সুর তোলা যায়। বাঁশিগুলোর মূল্য ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। প্রতিদিন ঘুরে ফিরে ৮০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকার বাঁশি বিক্রি করি। এতে পাঁচশত টাকার মত লাভ হয়।

এ বংশীবাদক বলেন, আমার কাজে পরিবার লোকজনও সহায়তা করে। তবে আগের মত তেমন একটা বিক্রি হয় না। সংসার চালাতে অনেকটাই হিমশিম খেতে হয়। তারপরও প্রতিদিন বের হই, বাঁশি বিক্রি করে যা পাই তা দিয়ে সংসার চালাই। সুস্থ অসুস্থতা নেই। প্রতিদিনই বের হতে হয় বাঁশি নিয়ে। কেননা আমার বাঁশির সুর থামলে যে পরিবারের পেট চলে না।

তিনি আরও বলেন, বাঁশির সুর উপমহাদেশের সংগীতে একটি অনন্য সংযোজন। এক সময়ের জনজীবনে বেশ চর্চা থাকলেও আধুনিক সভ্যতার যুগে বাঁশির সুর হারিয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় বাঙালি সংঙ্কৃতির অনুসঙ্গ সুরের মোহনা ছড়ানো এই বাঁশি  শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সবার আরও আন্তরিক হওয়া উচিৎ।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০২২
জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।