ঢাকা, সোমবার, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৭ মে ২০২৪, ১৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

৩০ হাজার মানুষের পারাপারে ভরসা একটি দড়িটানা নৌকা!

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২
৩০ হাজার মানুষের পারাপারে ভরসা একটি দড়িটানা নৌকা!

ফেনী: ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ও দাগনভূঁঞা উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট ফেনী নদী। নদীর দুই পাশের ১৫  গ্রামে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসবাস।

কিন্তু একটি সেতুর অভাবে তাদের ভোগান্তি ছাড়াও সময় ও অর্থ দু’টিরই অপচয় হচ্ছে। বিভিন্ন প্রয়োজনে যারা নিয়মিত নদী পারাপার হয়ে জেলা সদরে যাতায়াত করেন, তাদের একমাত্র ভরসা একটি মাত্র ছোট দড়িটানা নৌকা।

সরেজমিনে দেখা গেছে একটি সেতুর অভাবে বিশেষ করে দাগনভূঁঞা উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পূর্বঘোনা ও ফেনী সদর উপজেলার বিরলী গ্রামের জনসাধারণদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গ্রামের তিন দিক থেকে ঘিরে রেখেছে ছোট ফেনী নদী। গ্রামের স্কুল-মাদরাসা ও কলেজগামীসহ হাজারও মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন দড়িটানা নৌকায় নদী পার হয়ে ফেনী সদরে যাতায়াত করেন। নদী পার হতে গিয়ে মাঝে মাঝেই তাদের দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এই নদী পার হওয়া অনেক ঝুঁকিপূর্ণ।

গ্রামবাসীর জন্য উপজেলা ও জেলা শহরে যাতায়াতের সহজ পথ হচ্ছে এটি। বর্ষা মৌসুমে এই নদীতে স্রোত বেশি থাকায় মাঝি দড়ি টেনে পারাপারে রাজি হন না। ফলে ঝড়, বৃষ্টিতে এলাকাবাসীকে চরম কষ্ট পোহাতে হয়। এমনকি রাতে মাঝি না থাকায় নৌকা আরেক পাড়ে থাকে বলে পারাপারে ভোগান্তি পোহাতে হয় গ্রামবাসীকে।

ফলে প্রায় ৪ কিলোমিটার ঘুরে রাজাপুর বাজার হয়ে বিকল্প সড়ক দিয়ে বাড়ি যেতে হয়। এটি গ্রামবাসীর জন্য চরম কষ্টের ও ভোগান্তির।

নদীতে সেতু না থাকায় নৌকাই তাদের পাপাপারের একমাত্র ভরসা। সেতুর অভাবে এলাকার লোকজন আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত প্রায়। একটি মাত্র সেতু বদলে দিতে পারে দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়ন ও ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের বিরলী গ্রামের মানুষের জীবন এবং জীবিকা।

স্থানীয়রা দীর্ঘদিন যাবত সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বর্ষা মৌসুমে নৌকা দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকার শিক্ষার্থী ও সাধারণ লোকজনকে।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা সেতুর জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন। অনেকেই সেতুর তৈরি করে দেওয়ার কথা বলে, কিন্তু আশ্বাসের প্রতিফলন হয় না।

জমির ফসল আবাদ করে পারাপারের অভাবে সঠিক সময় শহরের হাট-বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারেন না কৃষকরা। অসুস্থ হলে দ্রুত সময়ে হাসপাতালেও নেওয়া যায় না। রাতের বেলা পড়তে হয় মহা বিপদে। ঘটে যায় বড় দুর্ঘটনাও।

স্থানীয় বাসিন্দা কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, একটি  সেতুর অভাবে মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসলেও তা পূরণ হচ্ছে না। টনক নড়ছে না নীতি নির্ধারণী মহলের।

আইয়ুব আলী নামে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, প্রতিদিন হাজার মানুষ পার হয় ঘাটের দড়িটানা ছোট নৌকাটি দিয়ে। এভাবে পারাপারের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

রাসেল আবেদীন নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, নদীটির উপরে একটি সেতু নির্মাণ হলে খুব সহজেই পারাপার হওয়া যেত। এতে সময়ের সঙ্গে কমবে দুর্ভোগও।

আলাউদ্দিন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, সবচেয়ে কষ্ট করতে তাদের। অনেক ছোট শিশু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন নদী পার হয়ে স্কুলে আসা যাওয়া করেন।

এ ব্যাপারে ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান বলেন, উন্নায়নের বড় নিয়ামকই হচ্ছে যোগাযোগ। যোগাযোগের ফলে উন্নয়ন তরান্বিত হয়। ওই এলাকার জনগণ যেটি চাচ্ছেন সেটি অবশ্যই একটি বিবেচনার বিষয়। এ বিষয়ে আমি স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলব এবং যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ফেনী সদরের পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক লিটন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকার মানুষ একটি সেতুর জন্য দাবি করে আসছে। কিন্তু এর স্বপক্ষে কোনো অগ্রগতি দেখা যায় না। আশা করি এবার এ বিষয়টির অগ্রগতি হবে। আমি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলব এবং জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
এসএইচডি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।