ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

জাল রুপি পাকিস্তান-বাংলাদেশ হয়ে ভারতে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২
জাল রুপি পাকিস্তান-বাংলাদেশ হয়ে ভারতে

ঢাকা: মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ জেলার সরকারি গাড়ি চালক আমানুল্লাহ ভুইয়া আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত। তিনি পাচার চক্রের মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে ভারতীয় জাল রুপির সুপার নোট বাংলাদেশে এনে ভারতে পাচার করতেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, চক্রটি খেলনা, শুঁটকি মাছ, মোজাইক পাথরসহ বিভিন্ন পণ্যের ভেতরে ভারতীয় জাল রুপির সুপার নোট কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জে আনতো। এরপর সেগুলো কৌশলে সংগ্রহ করে তাদের চক্রের সদস্যের মাধ্যমে ভারতে পাচার করত।

বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, প্রতি ১ লাখ ভারতীয় জাল রুপির সুপার নোট ৩৮ হাজার টাকায় কিনে ৪০-৪২ হাজার টাকায় বিক্রি করতো তারা। গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ডেমরা ও হাজীবাগ এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে ১৫ লাখ ভারতীয় রুপির জাল সুপার নোটসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ জেলার সরকারি গাড়ি চালক আমানুল্লাহ ভুঁইয়া (৫২), তার দ্বিতীয় স্ত্রী আইনজীবী কাজল রেখা (৩৭), ইয়াসিন আরাফাত কেরামত (৩৩), নোমানুর রহমান খানকে (৩১) গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ।

অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ২০২১ সালের নভেম্বরে খিলক্ষেত থানায় দায়ের হওয়া সাত কোটি ৩৫ লাখ ভারতীয় জাল রুপি পাচারের একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি পুরাণ ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোড এলাকা থেকে নোমানুর রহমান খানকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ।

হাফিজ আক্তার বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসামি নোমান জানায়, পাকিস্তানে অবস্থানকারী তার ভাই মো. ফজলুর রহমান ওরফে ফরিদ বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তান থেকে আকাশ ও সমুদ্রপথে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর সঙ্গে ভারতীয় জাল রুপির সুপার নোট বাংলাদেশে পাঠাতেন। সাম্প্রতি সময়ে পাচার করা জাল রুপির বড় চালানের একটি অংশ পূর্বে গ্রেফতার হওয়া নোমানের ভাই সাইদুর রহমান, ইম্পোর্টার তালেব, চক্রের সমন্বয়কারী ফাতেমা আক্তারের কাছে ছিল। তবে তাও গ্রেফতারের সময় জব্দ হয়। ওই চালানের বাকি অংশ রাখা ছিল হাজারীবাগে আমানুল্লাহ ভুইয়া ও তার স্ত্রী কাজল রেখার কাছে।

তিনি বলেন, তদন্তে গ্রেফতার নোমানের তথ্য বিশ্লেষণ করে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার ২১নং মনেশ্বর রোড থেকে ইয়াসির আরাফাত ওরফে কেরামত এবং আমানউল্লাহ ভূঁইয়াকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে ১২ লাখ জাল রুপি উদ্ধার করা হয়। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে আমানুল্লাহর স্ত্রী কাজল রেখার বাসায় অভিযান চালিয়ে আরও ৩ লাখ ভারতীয় জাল রুপিসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গোয়েন্দা পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আসামিরা জানায়, তারা পাকিস্তান থেকে আন্তর্জাতিক চক্রের মাধ্যমে ভারতীয় জাল রুপির সুপার নোট (৫০০/১০০০) কৌশলে সংগ্রহ করত। সেগুলো বিভিন্ন পণ্যের ভেতরে দিয়ে অথবা ব্যক্তি বা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকা দিয়ে ভারতে পাচার করত।

তিনি আরও বলেন, তদন্তে আমরা জানতে পারি, জাল রুপি পাচারকারী এ চক্রের কেন্দ্রে আছে মূলত দুইটি পরিবার। মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানা এলাকায় একটি পরিবার থাকে। এই পরিবারের অধিকাংশ সদস্য এক সময় পাকিস্তানের বসবাস করতো। বর্তমানে এই পরিবারের সদস্য ফজলুর রহমান পাকিস্তানের করাচিতে বসবাস করেন। তিনি পাকিস্তান কেন্দ্রিক মাফিয়াদের কাছ থেকে উন্নত মানের জাল রুপি সংগ্রহ করে বিভিন্ন উপায়ে সমুদ্রপথে বাংলাদেশ পাঠাতেন।

হাফিস আক্তার বলেন, তদন্তে জানা গেছে জাল রুপি পাচারের কাজে ফজলুর রহমানের ভাই সাইদুর রহমান, নোমানুর রহমান এবং ভগ্নিপতি শফিকুর রহমান সহায়তা করত। তারা ইম্পোর্টারদের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে শ্রীলঙ্কা হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এসব রূপি আনত।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এসব জাল রুপি খালাস করে গোডাউনে মজুদ করে ডিলারদের কাছে ডিস্ট্রিবিউশন করা হতো। সেই সঙ্গে জাল রুপি বিক্রির অর্থ বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে সংগ্রহ করে পরবর্তীতে হুন্ডির মাধ্যমে পাকিস্তানের ফজলুর রহমানের কাছে পাঠানো হতো।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, এটি আন্তর্জাতিক চক্র, এই চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন পাকিস্তানি নাগরিকের নাম পেয়েছি। এই চক্রের দেশি-বিদেশি সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

জব্দ হওয়া জাল নোটগুলোকে কেন ‘সুপার’ জালনোট বলা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই নোটগুলো মূলত ভারত থেকে আসেনি। নোটগুলো এসেছে পাকিস্তান থেকে। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি এগুলো এতোটাই সূক্ষ্মতার সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে যে, আসল নোটের প্রায় কাছাকাছি। তাই এগুলোকে ‘সুপার’ জালনোট বলা হচ্ছে।

জাল রুপি পাচারে শুধুমাত্র রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোড ব্যবহার করা হয় নাকি অন্য কোন রোডও ব্যবহার করা হয়, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের তদন্তে এ রুটেরই সন্ধান পেয়েছি।

এই জাল নোট চক্রের সঙ্গে জঙ্গিদের কোনো সংশ্লিষ্টতা ডিবি তদন্তে পেয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এদের কোনো জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আমরা পাইনি। এরা জাল নোটের বিনিময় অস্ত্র-মাদক ও চোরাই মোবাইল দেশে নিয়ে আসতে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২২
এসজেএ/এসআইএস /জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।