ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মেয়েকে ফিরে পেতে বাবার আকুতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২২
মেয়েকে ফিরে পেতে বাবার আকুতি সংবাদ সম্মেলন। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা:  স্ত্রী অন্য জায়গায় বিয়ে করেছে, লম্পট শালা ও স্ত্রী হাত থেকে বাঁচানোর জন্য মেয়েকে নিজের কাছে রাখতে চেয়ে আকুতি জানিয়েছে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এক অসহায় বাবা।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, মিথ্যা মামলা-হামলায় আমি জর্জরিত।

আমি এসবের কোন বিচার চাই না। আমার কোটি টাকার ব্যবসা নষ্টেরও কোন বিচারই চাই না। আমি শুধু আমার সন্তানকে ফিরে পেতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে হাত জোড় করে একটাই অনুরোধ, তিনি যেন আমার মেয়েকে ফিরে পেতে সহায়তা করেন। আমি এক অসহায় পিতা।

মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে এক সংবাদ সম্মেলন কান্না জড়িত কন্ঠে এ আকুতি জানান রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি থানার সোনাপুরের পাইকারি পোশাক কারখানার ব্যবসায়ী মো. দেলোয়ার হোসেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০১২ সালে মহাখালীর ওয়ারলেস গেটের বাইতুল আমান জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন মাওলানা মাঈনুদ্দিনের মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। তার এক বছর পর আমার মেয়ের একটি কন্যা সন্তান জন্ম হয়। ওর নাম সানজিদা আক্তার। বর্তমান বয়স ৮ বছর। বিয়ের প্রায় ৪ বছর পর ২০১৬ সালে আমি হজে যাই। আমার মেয়ের বয়স তখন তিন বছর। হজে যাওয়ার আগে কেরাণীগঞ্জ ইসলাম প্লাজা মার্কেট ২৮ লাখ টাকা দিয়ে একটি দোকান কিনি। সেই দোকান বায়না সূত্রে ৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়, বাকি টাকা পরিশোধ করার আগে আমার ফ্লাইট হয়ে যায়। ২০ লাখ টাকা আমার এক বন্ধুর কাছে রাখা ছিল। তাই আমার এক বন্ধু ও শ্বশুরকে বলি দুই জন মিলে দোকান মালিককে টাকাটা দিয়ে দলিল করে নিতে। আমার শ্বশুর আমার বন্ধুর কাছ থেকে টাকাটা নিয়ে বলে যে, আমার কাছে রেখে যাও তোমার কষ্ট করতে হবে না। আমি নিয়ে দিয়ে আসবো। সরল মনে আমার বন্ধু টাকাটা রেখে চলে যায়।

তিনি বলেন, আমি প্রায় দুই মাস পর হজ থেকে এসে শুনতে পাই আমার দোকান কেনা হয়নি, আমার শ্বশুর টাকা খরচ করে ফেলেছে। আমার টাকাটা আমাকে না জানিয়ে তার ছোট মেয়ে তামান্নাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয় নিয়ে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে জীবনের প্রথম কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। অনেক তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও টাকা ফেরত না পেয়ে একপর্যায়ে আমি আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হই। পরবর্তীতে টাকা দেওয়ার কথা বলে মাওলানা মাঈনুদ্দিন সাহেব তার মেয়েকে বাসায় নিয়ে যান। মেয়েকে বাসায় নেওয়ার পর থেকে তারা আমার সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আমি আমার মা, বড় ভাই, ভাবি, ছোট বোন, বোন জামাইসহ বহুবার তাদের বাসায় যাই, যোগাযোগের চেষ্টা করি। কিন্তু তারা ঘরের গেট না খুলে বরং আমার শালা সাব্বির আহমেদসহ কিছু এলাকার উচ্ছৃঙ্খল ছেলেদের দিয়ে আমার মা-ভাবিকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় এবং স্থানীয় প্রভাবশালীর মাধ্যমে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বলে, যদি আমি এখানে থাকি তাহলে পুলিশের মাধ্যমে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা দেবে। আমরা ভয় পেয়ে তখন নিজ বাড়িতে চলে যাই। তারপর এক সপ্তাহ পরে আমার স্ত্রী ডিভোর্সের চিঠি পাঠান আমাকে।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, অন্যদিকে মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য আমাকে ও আমার আইনজীবীকে বিভিন্নভাবে চাপ দিতে থাকেন। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের আইনজীবী পরিকল্পিতভাবে মীমাংসা করার কথা বলে আমাকে মামলাগুলো তুলে নেওয়ার জন্য বলে। আমি সরল মনে তাদের কথা বিশ্বাস করে মামলাগুলো তুলে নেই। কিন্তু তারা কোন মীমাংসায় না এসে বরং আমার নামে একের পর এক মিথ্যা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট ৬টি মামলা দায়ের করে। আমার স্ত্রী চলে যাওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত আমার একমাত্র মেয়ে সানজিদা আক্তারের সঙ্গে একটিবারও আমার কোন যোগাযোগ করার সুযোগ দেয়নি। আমি আমার মেয়ে সানজিদা আক্তার এবং সমস্যা নিরসনের জন্য বিভিন্ন মহলে আবেদন করতে থাকি। কিন্তু আমার মেয়ের মুখটি একবার দেখার জন্য কেউ কোন ব্যবস্থা করতে পারেনি। আমি মেয়েকে দেখার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছি। কি করবো বুঝতেছি না। আমার কলিজার সঙ্গে আমার ৫ বছর কোন কথা বলা ও দেখার সুযোগ হয়নি এবং আমি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আমার মেয়ের জন্য কাপড়-চোপড়, বই-খাতা, কলম ইত্যাদি পাঠাই সেগুলো রিসিভ না করে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। তারা কেন এমন করছে জানি না। আমার মেয়ে আদৌ কি বেঁচে আছে? নাকি মেরে ফেলেছে তাও বুঝতে পারছি না।

তিনি বলেন, আমি এক নির্যাতিত হতভাগা পিতা। মেয়েকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিন। আমি কোন টাকা পয়সা চাই না। আমার মেয়েকে আমার বুকে পেতে চাই।

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে তিনি বলেন, আমি এসবের কোন বিচারও চাই না। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হাতজোড় করছি, আমার সন্তানকে ভিক্ষা চাই। আমি এক অসহায় বাবা। তিনি যেন আমাকে ন্যায়বিচার পেতে এবং আমার মেয়েকে ফিরে পেতে সহায়তা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২২
এমএমআই/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।