ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সাকরাইনে ঘুড়ি উৎসবে মাতবে পুরান ঢাকা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২২
সাকরাইনে ঘুড়ি উৎসবে মাতবে পুরান ঢাকা

ঢাকা: পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারে চলছে ঘুড়ি, সুতা আর নাটাই বিক্রির ধুম। দিন ফুরোলেই পৌষের শেষ দিন বা ‘পৌষসংক্রান্তি’।

এই ‘সংক্রান্তি’ শব্দই লোকমুখে হয়ে গেছে ‘সাকরাইন’। আর রাজধানীর পুরান ঢাকায় এই দিনটির অন্যতম অনুষঙ্গ ঘুড়ি ওড়ানো বা ঘুড়ি উৎসব।

শাঁখারীবাজার বাদেও পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, কোতোয়ালি, বংশাল, ওয়ারী, গেন্ডারিয়া, লালবাগ থানা এলাকার মানুষ প্রতিবছর এ উৎসব উদযাপন করে। তাই উৎসবের রং লেগেছে সেখানেও। তাইতো উৎসব সামনে রেখে এসব এলাকাগুলোতে এখন চলছে ঘুড়ি কেনা, ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য সুতা যাচাই-বাছায় আর দরদামের পর নাটাই কেনার পালা।

বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) এসব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পৌষসংক্রান্তি উপলক্ষে পুরান ঢাকার বাড়িতে বাড়িতে চলবে ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন। এ উপলক্ষে ঘুড়ি বিক্রি হচ্ছে ধুমসে। সাকরাইনের আগের দিনে দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়। ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য সুতা যাচাই করছেন কেউ, কেউ আবার বেছে নিচ্ছেন নাটাই। তবে কাঠের নাটাইয়ের থেকে এখন ধাতব নাটাইয়ের চল বেশি বলে জানালেন দোকানদররা।

শাঁখারীবাজারে বিভিন্ন দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাকরাইন উপলক্ষে এবার- চোখদার, পানদার, বলদার, দাবাদার, লেজওয়ালা, পতঙ্গ নামের বাহারি সব ঘুড়ি পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোর মূল্য ধরা হয়েছে ৫ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। আর এসব ঘুড়িতে বাহারি রঙিন ডিজাইনসহ উঠে এসেছে সমসাময়িক বিষয়ও। করোনা মহামারির এ সময়ে ঘুড়ির নকশায় উঠে এসেছে কোভিড-১৯ শব্দটি। ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’-এর আদলে নকশায় আছে ‘নো মাস্ক, নো কাইট’ও।

শাঁখারিবাজার ঘুরে দেখা যায়, এই বাজারের অলিতে গলিতে এখন শুধু ঘুড়ির পসরা। শিশু-কিশোরসহ সেসব ঘুড়ি কিনতে মেতে উঠতে দেখা গেছে বড়দেরও। উৎসাহের কমতি নেই কারও মধ্যেই। অনেককেই আবার বিকেলে বাড়ির ছাদে ঘুড়ি উড়িয়ে ঘুড়ি উৎসবের প্রস্তুতি নিতেও দেখা গেছে।

আমিনুর রহমান নামে এই এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, এক সময় ঘুড়ি, নাটাই আর মাঞ্জাতে সীমাবদ্ধ থাকলেও সাকরাইনের পরিসর এখন ব্যাপক। দিনের প্রথম পর্বে চলে ঘুড়ি কাটাকাটির প্রতিযোগিতা, গোত্তা খাওয়া ঘুড়ি এবং 'ভোকাট্টা' রবের সঙ্গে সাউন্ড সিস্টেমের তালে তালে গানবাজনার মাধ্যমে আনন্দ-উল্লাস চলতে থাকে শীতের মিষ্টি বিকেল জুড়ে। সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয়ে যায় চোখ ধাঁধানো আতশবাজির প্রদর্শনী। লেজার শো আর 'ডিস্কো লাইট' এর পাশাপাশি কেউ কেউ কেরোসিন মুখে মশালে ফুঁ দিয়ে অগ্নিকুণ্ড তৈরি করে। সন্ধ্যার আকাশে ঘুড়ির জায়গা নেয় রঙিন ফানুস। আলোর ঝলকানিতে ঢেকে যায় পুরান ঢাকার সম্পূর্ণ আকাশ ।

মামুন নামের একজন বলেন, সাকরাইন আমাদের কাছে আবেগের নাম। ছোটবেলা থেকে কখনো সাকরাইন পালন না করে থাকিনি আমরা। তবে এবার মহামারীর জন্য অনেকেই কিছুটা আর্থিক সমস্যায় রয়েছেন। তারপরেও উৎসব উদযাপনে পুরান ঢাকা কখনো পিছিয়ে থাকে না। তাই সাকরাইন এবারও অন্যবারের মতোই জমজমাট হবে বলে আশা করছি।

৫০ বছরেরও বেশি সময় জুড়ে শাঁখারিবাজারে ঘুড়ি বিক্রি করে আসছেন সমন নন্দী।

শঙ্খ নিকেতনের এই কর্ণধার জানালেন, বিক্রিবাট্টায় করোনার প্রভাব তেমন নেই। মহামারী চললেও শিশু কিশোরদের সাকরাইন উৎসব পালন বন্ধ নেই। বরং এবার সাকরাইন হবে আরও বড় পরিসরে।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে অন্যান্যবার সাকরাইন উপলক্ষে বিভিন্ন আয়োজন করা হলেও এবার করোনা মহামারীর কারণে সিটি কর্পোরেশনেরে পক্ষ থেকে কোন আয়োজন হচ্ছে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের জানান, সাকরাইন উপলক্ষে আয়োজনের চিন্তাভাবনা থাকলেও তা করোনার জন্য এবার হচ্ছে না। এবার সাকরাইনের প্রস্তুতি মোতাবেক বুধবার (১২ জানুয়ারি) এই উৎসব নিয়ে আমাদের একটি সংবাদ সম্মেলনও হওয়ার কথা ছিল। এবার আমাদের আয়োজনটা ছিল লালবাগ কেল্লায়। কিন্তু কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় কেবিনেট থেকে যখন প্রজ্ঞাপন জারি হলো যে- জনসমাবেশ করা যাবে না, তখন এটি বাতিল করা হয়েছে। তবে ব্যক্তি উদ্যোগে পুরান ঢাকার বিভিন্ন ছাদে এই উৎসব পালন করা হবে বলেও এসময় মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২২
এইচএমএস/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।