ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যে কোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন আব্বাস

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২১
যে কোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন আব্বাস

রাজশাহী: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটূক্তির অভিযোগে রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীকে নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা এক মামলায় তাকে গ্রেফতার করতে খুঁজছে পুলিশ।

ইতোমধ্যে গ্রেফতারের বিষয়টি জানিয়ে রাখার জন্য জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে পুলিশ।

তার অবস্থান নিশ্চিত হতে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহায়তাও নেওয়া হচ্ছে। ফলে যেকোনো মুহূর্তে গ্রেফতার হতে পারেন মেয়র আব্বাস। মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারন চন্দ্র বর্মন এ তথ্য জানিয়েছেন।

রাজশাহী মগানগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারন চন্দ্র বর্মন বাংলানিউজকে বলেন, ছড়িয়ে পড়া অডিওটি মেয়র আব্বাস আলীর কি না- তা নিশ্চিত হতে একজন বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) মেয়র নিজেই ফেসবুক লাইভে এসে অডিওটির সত্যতা স্বীকার করেছেন। এতে তার দোষ প্রমাণিত হয়। তাকে গ্রেফতারের জন্য আমরা খুঁজছি। তার অবস্থান নিশ্চিত হতে সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মোমিন বাদী হয়ে বোয়ালিয়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছেন। বুধবার (২৪ নভেম্বর) মামলাটি গ্রহণ করা হয়। এই ধরনের মামলায় মেয়রকে গ্রেফতারের জন্য কোনো পূর্বানুমতির প্রয়োজন নেই। তবে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসককে একটি চিঠি দিয়ে জানিয়ে রাখা হয়েছে৷ আর কোনো প্রক্রিয়া নেই। আশা করছি দ্রুতই তাকে গ্রেফতার করতে পারব।

এর আগে, মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) রাতে মেয়র আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নগরীর বোয়ালিয়া, রাজপাড়া  ও চন্দ্রিমা থানায় মামলার এজাহার দায়ের করা হয়। পরে পুলিশ সদর দফতরের অনুমোদন সাপক্ষে বুধবার (২৪ নভেম্বর) বোয়ালিয়া থানায় মামলা গ্রহণ করা হয়। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আব্দুল মোমিন বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি আমলে নিয়ে বোয়ালিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহাবুল আলমকে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন রাজপাড়া থানায় এবং মহানগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমন চন্দ্রিমা থানায় এজাহার দিয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের জন্য মামলা দু'টি বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এর আগে মেয়র আব্বাস আলী একটি ঘরোয়া বৈঠকে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের কাটাখালী পৌরসভার অংশের উন্নয়নকাজ নিয়ে কথা বলার সময় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে কটূক্তি করেন।

সোমবার (২২ নভেম্বর) রাত থেকে মেয়র আব্বাসের এমন দুটি অডিও রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে। এ ঘটনার অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁসের পর তিনিও ফেঁসে যান।

অডিওতে মেয়র বলেন, ‘একটু থাইমি গেছি গেটটা নিয়ে, একটু ডিজাইন চেঞ্জ করতে হচ্ছে। বড় হুজুরের সঙ্গে আমাদের এক লোক বসেছিলে, বসি যে ম্যুরালটা দিছে বঙ্গবন্ধুর, এটা ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক সঠিক না। এজন্য আমি ওকে থুব না। সব করব, যা কিছু আছে, খালি শেষ মাথাতে মানুষ যেটা মাইন্ড করবে না ওড্যাই। আমি দেখতে পাচ্ছি যে, ম্যুরালটি ঠিক হবে না দিলে। আমার পাপ হবে। তো কেন দিব? দিব না, আমি তো কানা লোক না, আমাক বুঝাই দিছে। এজন্য আমি ওটাকে চেঞ্জ করছি। '

১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপটিতে মেয়র আব্বাসকে বলতে শোনা যায়, ‘ওই গেটটি দ্রুত নির্মাণ হবে। তবে আমরা যে ফার্মকে কাজটি দিয়েছি, তারা গেটের ওপরে বঙ্গববন্ধুর যে ম্যুরাল বসানোর ডিজাইন দিয়েছে, সেটি ইসলামি দৃষ্টিতে সঠিক না। তাই আমি সেটিকে বাদ দিতে বলেছি। ’

মেয়র বলেন, ‘যেভাবে বুঝাছে তাতে আমার মুনে হইছে যে, ম্যুরালটা হইলে আমার ভুল হয়্যা যাবে। এজন্য চেঞ্জ করছি। এই খবরটাও যদি আবার যায় তো আবার রাজনীতি শুরু হয়ে যাবে। ওই বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল দিতে চাইয়া দিচ্ছে না! বঙ্গবন্ধুক খুশি করতে যাইয়া নারাজ করব নাকি? এইডা লিয়েও রাজনীতি করবে কিন্তু আমি সিওর। ’

অডিও ফাঁস হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজশাহী। দাবি উঠেছে গাজীপুরের মেয়রের মতো মেয়র আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা তাকে দলীয় ও মেয়র পদ থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করছেন।

বিতর্কের ঝড় ওঠায় ইতোমধ্যে কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের পদ থেকে আব্বাস আলীকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ ও দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করতে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া মেয়রের পদ থেকে  অপসারণ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছেন পৌরসভার ১২ জন কাউন্সিলর। ফলে তিনি মেয়রের পদ হারাতে পারেন বলেও গুঞ্জন উঠেছে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২১
এসএস/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।