ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বরিশালে সুগন্ধার ভাঙনে দিশেহারা মানুষ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২১
বরিশালে সুগন্ধার ভাঙনে দিশেহারা মানুষ

বরিশাল: বরিশালে সুগন্ধা নদীর ভাঙনে তীরবর্তী বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের বাসিন্দারা শঙ্কায় দিন-রাত পার করছেন। এরইমধ্যে গত কয়েকবছরের অব্যাহত ভাঙনে ফসলি জমি, বসতিবাড়িসহ বহু স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. হানিফ জানান, রোববার থেকে আবার আকস্মিক ভাঙন শুরু হয়। তবে ভাঙনের গতি আগের থেকে এখন কিছুটা ধীরগতি থাকলেও শঙ্কায় রয়েছেন নদী তীরবর্তী মানুষ।

তিনি জানান, গত রোববারের ভাঙ্গনে একটি মসজিদ, একটি ঈদগাহ, ৫টি বাড়িসহ বেশকিছু ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তবে এবারে বর্ষার শুরুর দিকের অবস্থা দেখে বুঝেছিলাম তেমন একটা ভাঙন হবে না নদীর এপারে। কিন্তু বর্ষার শেষ দিকে এসে ভাঙন শুরু হলো বলে জানান তিনিসহ গ্রামের একাধিক বাসিন্দা।

গ্রামের বাসিন্দা সেলিম ও শাহিন বলেন, বছরের পর বছর ভাঙনের মুখে ভূমি হারিয়ে বহু পরিবার অন্যত্র চলে গেছেন। ভুক্তভোগী বেশিরভাগেই কোন ধরণের সাহায্য সহযোগীতা পাননি। আর বর্তমান ভাঙনেও যাদের সামর্থ্য ছিল তারা অন্যত্র চলে গেছেন, আর যাদের নেই তারা কোনভাবে আশপাশে আশ্রয় নিয়েছেন।
তারা আরও জানান, ভাঙন রোধে তেমনভাবে সরকারি পদক্ষেপ দেখা যায়নি এ এলাকায় একবার কাজে এসে কিছু ব্লক বানিয়েই চলে গেছেন ঠিকাদারের লোকজন। মূলত ব্লকের কাজ শুরুর পরও সঠিকভাবে মনিটরিংয়ের অভাবে সেগুলো নিয়মানুযায়ী নদীতে না ফেলায় ভাঙন রোধ করা আর যায়নি বলে দাবি তাদের।

রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরোয়ার মাহমুদ বলেন, নদীভাঙন বাবুগঞ্জের মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। সুগন্ধা, আড়িয়াল খাঁ, সন্ধ্যা এ তিন নদীবেষ্টিত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিবছরই ভাঙন দেখা দেয়। বহু পরিবার এতে নিঃস্ব হয়েছে, আর বর্তমান অবস্থান কারণেও অনেক পরিবার নিঃস্ব হওয়ার পথে।

এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমীনুল ইসলাম বলেন, ভাঙনের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সেখানে সহায়তা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। যাদের নিয়মানুযায়ী সহায়তা করা হবে।

অপরদিকে মানিকসহ গ্রামবাসীর দেয়া তথ্যানুযায়ী, এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে বরিশালের একমাত্র বিমানবন্দরটিও হুমকির মুখে পরবে। কারণ নদীর ভাঙন এরইমধ্যে বিমানবন্দরের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আর এ ভাঙন রোধ করতে হলে এখন প্রয়োজন নদী শাসনের মাধ্যমের পানির স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন করা।

তবে ভাঙনে বিমানবন্দরের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক আ. রহিম তালুকদার।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশল বিভাগ বলছে, সুগন্ধা নদীর বাহেরচর পয়েন্টের ভাঙন ঠেকাতে ব্লক বা বালুর বস্তা ফেলে সমাধান করা যাবে না। প্রয়োজন দীর্ঘ পরিকল্পনায় স্থায়ী সমাধান।

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল বলেন, ভাঙনের খবর পেয়েই আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ওখানে ১৫০ মিটার ধরে ভাঙছে। মূলত সুগন্ধা নদীর যে স্থানে ভাঙছে সেখানে গভীরতা এত বেশি যে সাময়িক কোন পদক্ষেপ যেমন ব্লক বা বালুর বস্তা ফেলে প্রতিহত করা যাবে না।

তিনি বলেন, বাবুগঞ্জে সুগন্ধা ও সন্ধ্যা নদী খুবই প্রমত্তা, এর ৭ পয়েন্টে ভাঙন চলছে। ভাঙন ঠেকাতে মন্ত্রণালয়ে দুটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। যারমধ্যে সাতটি পয়েন্টে ভাঙন ঠেকাতে ১ হাজার ২৫৫ কোটি টাকার একটি প্রস্তাব এবং ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের কোলঘেষে বয়ে যাওয়া সুগন্ধা নদীর মাঝে জেগে ওঠা বাহেরচর ড্রেজিংয়ের জন্য ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প পাস হয়ে এলে কাজ শুরু হবে।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বরিশাল কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ সাংবাদিকদের জানান, গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ভাঙন রোধে বাবুগঞ্জ উপজেলায় ৪০ লাখ টাকার কাজ করা হয়েছিল। বর্তমানে উপজেলার মীরগঞ্জ, বরিশাল বিমানবন্দরের উত্তর অংশ ও বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের গ্রামের বাড়ির এলাকা ভাঙন থেকে রক্ষা করতে প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২১
এমএস/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।