ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মুহিবুল্লাহ হত্যা

২ মিনিটে ৪ গুলি, কিলিং মিশনে ১৯ জন

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২১
২ মিনিটে ৪ গুলি, কিলিং মিশনে ১৯ জন

কক্সবাজার: রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার দুই দিন আগে উখিয়ার লম্বাশিয়া মরকজ পাহাড়ে বৈঠক করে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ীই গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে।

এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন ১৯ জন, যাদের পাঁচজন ছিলেন অস্ত্রধারী। এদের মধ্যে তিন অস্ত্রধারী মুহিবুল্লাহকে দুই মিনিটে চারটি গুলি করেন।

শনিবার (২৩ অক্টোবর) ভোরে আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) হাতে গ্রেফতার হওয়া আজিজুল হকের স্বীকারোক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে ১৪ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের  অধিনায়ক পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ নাইমুল হক এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান, আজিজুল হকসহ শুক্রবার ভোরে গ্রেফতার হওয়া মো. রশিদ প্রকাশ মুরশিদ আমিন, মো. আনাছ ও নুর মোহাম্মদ সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নেন।  

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের আজিজুল হকের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে এসপি নাইমুল হক জানান, মুহিবুল্লাহকে হত্যার দুই দিন ২৭ সেপ্টেম্বর রাত দশটার দিকে উখিয়ার লম্বাশিয়া মরকজ পাহাড়ে একটি মিটিং হয়। মিটিংয়ে কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া আজিজুল হকসহ আরও চারজন উপস্থিত ছিলেন। মিটিংয়ে আলোচনা হয়, তাদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মুহিবুল্লাহকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ, মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের বড় নেতা হয়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরানোর জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করায় দিনে দিনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়ে উঠেছেন। তাকে থামাতে হবে। মিটিংয়ে এসব আলোচনার পরই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

সেদিন (২৯ সেপ্টেম্বর) এশার নামাজের পর মুহিবুল্লাহ তার ঘরে ফিরে গেলে  মুরশিদ আমিন প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কথা বলার জন্য কয়েকজন লোক এসেছে বলে তাকে ঘর থেকে আরসার (আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস) অফিসে ডেকে আনেন। এরপর মহিবুল্লাহর অফিসে অবস্থানের খবর মো. আনাছ ও নুর মোহাম্মদকে জানান মুরশিদ আমিন।

তারা এ খবর জানিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তদের ঘটনাস্থলে আসার সংকেত দেন। দুর্বৃত্তদের দলটি আগে থেকেই পরিকল্পিত স্থানে অবস্থান করছিল। সংকেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্বৃত্তরা ক্যাম্প-১ ডি-৮ ব্লকের রাস্তা ব্যবহার করে মহিবুল্লাহর অফিসে চলে আসে। এ দলে মুখোশধারী ছিল ৭ জন, তাদের মধ্যে অস্ত্রধারী ছিল পাঁচজন। তারা মুহিবুল্লাহর অফিস কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করে।

এ সময় মো. আনাছ, নূর মোহাম্মদ এবং অস্ত্রধারী আজিজুল হক ও অপর একজনসহ চারজন মুহিবুল্লাহর অফিস কক্ষে প্রবেশের দরজায় অবস্থান নেন। অফিসে মুহিবুল্লাহ ১০/১৫ জন লোকসহ অফিস রুমে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসেছিলেন। এ সময় অস্ত্রধারীদের একজন তাকে চেয়ার থেকে দাঁড়াতে বলে  প্রথম দুর্বৃত্ত একটি, দ্বিতীয়জন দুটি এবং তৃতীয় দুর্বৃত্ত একটিসহ মোট চারটি গুলি  করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মুহিবুল্লাহ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আজিজুল হক, মো. আনাছ এবং নূর মোহাম্মদসহ দুর্বৃত্তরা মুহিবুল্লাহর অফিস সংলগ্ন পিছনের রাস্তা দিয়ে পেঁপে বাগান হয়ে পালিয়ে যায়।

১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক নাঈমুল হক আরও জানান, ক্যাম্প-১ ইস্টের বাসিন্দা মোহাম্মদ আজিজুল হককে শুক্রবার লম্বাশিয়া পুলিশ ক্যাম্প এলাকার লোহার ব্রিজ এলাকা থেকে একটি ওয়ান শুটারগানসহ গ্রেফতার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি মতে ক্যাম্প ১/ইস্টের বাসিন্দা আব্দুল মাবুদের ছেলে মো. রশিদ প্রকাশ মুরশিদ আমিন, ক্যাম্প-১ ওয়েস্টের বাসিন্দা ফজল হকের ছেলে মো. আনাছ এবং একই ক্যাম্পের বাসিন্দা নুর সালামের ছেলে নূর মোহাম্মদকে গ্রেফতার করা হয়।

আরও পড়ুন:
মুহিবুল্লাহ: কিলিং স্কোয়াডের আজিজুলসহ গ্রেফতার ৪
দুই মিনিটেই শেষ মুহিবুল্লাহ হত্যা মিশন!

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২১
এসবি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।