ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

সাম্প্রদায়িক হামলায় বিশিষ্ট নাগরিকদের ক্ষোভ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২১
সাম্প্রদায়িক হামলায় বিশিষ্ট নাগরিকদের ক্ষোভ

ঢাকা: সাম্প্রদায়িক হামলা ও প্রতীমা ভাঙচুরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার বিশিষ্ট নাগরিকরা।

একই সঙ্গে সাম্প্রদায়িক হামলা ও প্রতীমা ভাঙচুরের বিরুদ্ধে তারা রাষ্ট্র ও জনসমাজকে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানায়।

সোমবার (১৮) সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এ ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার সঙ্গে লক্ষ্য করলাম যে, দেশের হিন্দু সম্প্রদায় তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব সার্বজনীন দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে পারলো না।

বিভিন্ন পূজামণ্ডপে হামলা, প্রতীমা ভাঙচুর, কোথাও কোথাও বাড়ি ঘরে হামলা করে এমন এক ভীতিকর ন্যক্কারজনক পরিবেশ তৈরি করা হলো, যা মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত বাংলাদেশে কারোর জন্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

আমরা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। অবিলম্বে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ও এর পেছনের হোতাদের চিহ্নিত, গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। একই সঙ্গে নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনের ব্যর্থতার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।

গত ১৩ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার নানুয়ার দীঘির পাড়ে এক পূজামণ্ডপে ‘পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননা’ করা হয়েছে বলে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে হামলা ও প্রতীমা ভাঙচুর করা হয়, যা গভীর ষড়যন্ত্রমূলক ।

অতীতেও দেখা গেছে, নানা সময়ে ধর্মকে ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়িয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশে হামলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ফায়দা লোটা হয়েছে। ওই সব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়নি। এমনকি কোথাও কোথাও রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এ বিচারহীনতা আবার অপরাধ সংগঠিত করতে মদদ জুগিয়েছে ।

এসব অপশক্তি এখনও তৎপর। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে আইনগত ব্যবস্থার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সংগ্রাম জোরদার করে মানবিকতার সংগ্রামকে সামনে আনা হয়নি। শুধু বাংলাদেশ নয় প্রতিবেশী দেশগুলোকেও আজকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য নিরাপদ আবাসভূমি হিসেবে গড়ে তোলা যায়নি।

ধর্মকে অপব্যবহারের যে কোন ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিদ্বেষী সব অপশক্তিকে প্রশ্রয় না দেওয়া, জঙ্গি ধর্মভিত্তিক শক্তির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে নীতিনিষ্ঠভাবে সংগ্রাম পরিচালনা করা জরুরি হয়ে পড়ছে। রাষ্ট্র ও জনসমাজকে সম্মিলিতভাবে আজ এ কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ৫০ বছরের বাংলাদেশকে আমরা পেছনের দিকে নিয়ে যেতে দিতে পারি না। তাই এধরনের  অপশক্তির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ, গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং দেশের সর্বত্র মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতির পক্ষের সব অসম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল শক্তি, ব্যক্তি ও প্রকৃত ধর্মপ্রাণ মানুষদের সমন্বিত উদ্যোগ গড়ে তোলার আহ্বান জানাই। ’

বিবৃতি প্রদানকারী নাগরিকরা হলেন, মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলি, নিজেরা করি এর সভানেত্রী খুশী কবীর,  নাট্য ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার,  শিক্ষাবিদ আবুল মোমেন, শিক্ষাবিদ অধ্যাপিকা মাহ্ফুজা খানম, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. সেলিম জাহান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা রাশেদা  কে চৌধুরী, সাবেক বিএমএ সভাপতি ডা. রশিদ ই মাহবুব, ড. মইনুল ইসলাম, সাবেক ইউজিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাত, সিপিডি সম্মানিত ফেলো  দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য,  বীর এর নির্বাহী পরিচালক মেঘনা গুহঠাকুর্তা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো উপাচার্য ড. তাজুল ইসলাম, অধ্যাপক এ এন রাশেদা, সিপিডির সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক ড. সুশান্ত কুমার দাশ, অধ্যাপক বদিউর রহমান, অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবুল কাশেম, এলআরডি নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মাহমুদ সেলিম, চিকিৎসক ও  খেলাঘরের বিশিষ্ট নেতা ডা. লেনিন চৌধুরী, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট হাসান তারিক চৌধুরী ও অধ্যাপক এম এম আকাশ।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২১
আরকেআর/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।