ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শম্পা হত্যার ৬ বছর পর ঘাতক প্রেমিক গ্রেফতার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১
শম্পা হত্যার ৬ বছর পর ঘাতক প্রেমিক গ্রেফতার শম্পা

ঢাকা: গাবতলী বাস স্ট্যান্ডে ঈগল পরিবহনের একটি বাসের ট্রাঙ্ক থেকে অজ্ঞাতনামা এক নারীর লাশ উদ্ধার করে দারুস সালাম থানা পুলিশ। ঈগল পরিবহনের বাসটি ছিল চট্টগ্রাম-ঢাকাগামী রুটের।

ঘটনাটি ঘটে ছয় বছর আগে ২০১৫ সালের ০৩ মে।  

তখন নিহত তরুণীর নাম-পরিচয় খুঁজে না পেয়ে অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাফন করা হয়। এই ঘটনায় দারুস সালাম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহানুর আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাত নাম উল্লেখ করে ২০১৫ সালের ০৩ মে একটি মামলা দায়ের করেন।

এই মামলাটি দারুস সালাম থানা পুলিশ তিন মাস তদন্ত করে। পরে তদন্তভার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) দেওয়া হয়। দীর্ঘ চার বছর তদন্ত করে সিআইডি। কিন্তু লাশের পরিচয় শনাক্ত এবং হত্যা রহস্য কোনোটাই উদঘাটন করতে পারেনি কেউ। মামলাটির চুড়ান্ত রিপোর্ট (ফাইনাল রিপোর্ট) আদালতে দাখিল করে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি।

দুই বছর তদন্তের পর অজ্ঞাত নারীর পরিচয় শনাক্তসহ ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত এক আসামিকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

নিহত এই নারীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর চট্টগ্রাম থেকে ঈগল পরিবহনের একটি বাসের ট্র্যাঙ্কে তুলে দেওয়া হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি রেজাউল করিম স্বপনকে শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভোরে কুমিল্লার ইপিজেড এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে গ্রেফতার করে পিবিআই। এদিকে আসামি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানিয়েছে পিবিআই।

শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে পিবিআই সদর দপ্তরের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পিবিআই প্রধান ও ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।

নিহত নারীর নাম শম্পা বেগম। খুলনা দৌলতপুর থানার দেওয়ানা উত্তরপাড়ার ইলিয়াস শেখের মেয়ে ভুক্তভোগী এই নারী।
তদন্তকালে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানায় ২০১৫ সালের ৬ জুন দায়ের করা একটি নিখোঁজ সংক্রান্ত সাধারণ ডায়েরি (জিডি)র সূত্র ধরে ভুক্তভোগীর পরিচয় শনাক্ত ও হত্যাকারীকে গ্রেফতার করে পিবিআই।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান ও ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ২০১৫ সালের ০৩ মে সকাল ৯টার দিকে চট্টগ্রামে কে খান মোড়ে ঈগল পরিবহনের কাউন্টারে টিকেট কেটে একজন ব্যক্তি একটি ট্রাঙ্কে তুলে দেয় বাসের বক্সে। বাসের হেলপারকে বলে, সামনের ভাটিয়ারী কাউন্টার থেকে ওই টিকেটের যাত্রী উঠবে। কিন্তু পরের ওই কাউন্টার থেকে যাত্রী না ওঠায় বাসটি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করে এবং বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটের দিকে বাসটি গাবতলী এসে পৌঁছায়। এরপর বাসের সব যাত্রী তাদের জিনিসপত্র নিয়ে নেমে যায়। ট্রাঙ্কটি দেখতে পান বাসের হেলপার।

তখন বাসের ড্রাইভার-হেলপার মিলে ট্রাঙ্কটি নামিয়ে দেখে এটি খুব ভারী। তাদের সন্দেহ হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে দারুস সালাম থানায় খবর দিলে থানা পুলিশ এসে ট্রাঙ্কটি খুলে একজন অজ্ঞাতনামা নারীর লাশ দেখতে পান। লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন৷

তিনি বলেন, পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) ইউনিটের তদন্তকারী কর্মকর্তারা  অজ্ঞাত নারীর পরিচয় শনাক্ত করতে সব ধরনের পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। এরপর চট্টগ্রাম শহর ও জেলা এলাকার সব থানায় ২০১৫ সালে নিখোঁজ জিডির অনুসন্ধান শুরু হয়। সেখানে ১০-১২টি নিখোঁজ জিডির তথ্য উদঘাটন করা হয়।

জিডিগুলোর মধ্যে ২০১৫ সালের ১০ জুন তারিখের একটি ৫৯৯ নম্বর জিডিতে দেখা যায় শম্পা বেগম চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানা এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। ওই ঘটনায় নিহত শম্পা বেগমের ভগ্নিপতি আব্দুল মান্নান পাহাড়তলী থানায় জিডিটি করেন।

পিবিআই প্রধান আরও বলেন, ওই জিডির সূত্র ধরে তদন্তকারী কর্মকর্তা জিডিকারী আব্দুল মান্নান ও নিহত শম্পা বেগমের বাবা ইলিয়াস শেখের (অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য) সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, ২০১৩ সালে রেজাউল করিম স্বপন (অবসরপ্রাপ্ত নৌ বাহিনী সদস্য) খুলনা তিতুমীর নৌঘাঁটিতে কর্মরত থাকাকালীন শম্পা বেগম একটি হাসপাতালে মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজ করতেন। ওই হাসপাতালে ইলিয়াস শেখের স্ত্রীর চিকিৎসার সুবাদে শম্পার সঙ্গে রেজাউলের পরিচয় হয়।

পরিচয়ের একপর্যায়ে প্রথমে প্রেম হয়। পরে শম্পা বিয়ের জন্য চাপ দিলে রেজাউল বদলি হয়ে চট্টগ্রামে চলে যায়। ভুক্তভোগী শম্পাও কিছুদিন পরে তার এক ফুফুর বাসায় চলে যায়। এরপর ফয়েস লেক এলাকায় একটি হোটেলে কিছুদিন অবস্থান করে তারা। তারপর পাহাড়তলী থানাধীন উত্তর নিভিউ আবাসিক এলাকায় একটি টিনশেড বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে সাবলেট হিসেবে বসবাস শুরু করেন দুজনে। এভাবে তারা ২০১৪-২০১৫ সালের মে মাস পর্যন্ত বসবাস করেন। কিন্তু তারা বিয়ে করেননি।

তিনি বলেন, দুইজনের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রায় মনোমালিন্য দেখা দিত। ২০১৫ সালের ২ মে গভীর রাতে মনমালিন্য হলে শম্পাকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে রেজাউল করিম স্বপন। এরপর আসামি লাশ গোপন করতে একটি ট্রাঙ্কে ভরে ঢাকাগামী ঈগল পরিবহনের একটি বাসে তুলে দেয় ঘাতক স্বপন। এদিকে শম্পার বাবাকে সে তখন জানায় যে, শম্পাকে খুলনার বাসে তুলে দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু শম্পা তার বাবার বাড়িতে আর পৌঁছায় না। একে তারা বিভিন্ন স্থানে খোঁজা-খুঁজি করে না পেয়ে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানায় একটি জিডি করেন শম্পার ভগ্নিপত্তি আব্দুল মান্নান। এরপর ভুক্তভোগীর বাবা ২০১৫ সালের ২৭ মে আসামি রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে নৌবাহিনী চট্টগ্রাম অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
তিনি বলেন, গোপন তদন্তের ভিত্তিতে জানা যায়, আসামি রেজাউল করিম স্বপনের বিষয়ে তার বাহিনী তদন্তে করে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গো সংশ্লিষ্টতার কারণে ২০১৯ সালে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য আদালত ২০১৯ সালে তদন্তের জন্য পিবিআইকে দেন। পিবিআই ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে এবং কাজ শুরু করা হয় বলে জানান পুলিশে এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১
এসজেএ/এসআইএস 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।