ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

লাল শাপলার বিলে নৌকা ভাসিয়ে ভালো আছেন তারা

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১
লাল শাপলার বিলে নৌকা ভাসিয়ে ভালো আছেন তারা

বরিশাল: পঞ্চাশোর্ধ জব্বার মাঝি, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা গ্রামের বাসিন্দা। তার নেতৃত্বে ওই গ্রামের আরও বেশ কয়েকজন বর্ষার এমন সময়টাতে বাড়ির পাশের বিলের পানিতে নৌকা ভাসিয়ে অর্থ উপার্জন করছেন।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখের দিনও কাটাচ্ছেন। ওই বিলটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা বরিশালের ‘লাল শাপলার বিল’ হিসেবেই পরিচিত।

সুখের দিনগুলোর কথা তুলে ধরে জব্বার মাঝি বাংলানিউজকে বলেন, বিলের সীমানায় থাকা পাকা রাস্তার পাশেই আমার বাড়ি। ২০১৩-১৪ সালের দিকে যে রাস্তা মাটিরই ছিল। তখন বরিশাল থেকে আরিফুর রহমান নামে যুবক বয়সী এক ভাই আসতেন লাল শাপলার বিলের পানিতে নৌকায় চরে ঘুরে বেড়ানোর জন্য। কিন্তু তখন আমার নৌকা ছিল না। আমি অন্যের নৌকা নিয়ে তাকে নিয়ে বিলের পানিতে ভেসে বেড়াতাম।  

জব্বার বলেন, আরিফুর রহমান বিল আর লাল শাপলার বহু ছবি তুলেছেন। পরে জানলাম তিনি একজন সাংবাদিক। তার কিছুদিন পরেই আরও সাংবাদিক আসতে শুরু করলে। তাদের নিয়ে কখনও আমি কখনও আমার ছেলে বিলের পানিতে নৌকা ভাসাতাম। তখন ভালোবাসার খাতিরে তাদের নিয়ে ঘুরতাম।

তিনি আরও বলেন, ধীরে ধীরে এখানে সাধারণ মানুষের যাতায়াত বাড়তে থাকে, অনেকেই লাল শাপলার এই বিলে নৌকাতে ঘুরে বেড়িয়ে জোর করে খুশি হয়ে পারিশ্রমিক দিত। বিলের বাগধারের এ অংশের সঙ্গে সঙ্গে সাতলার অংশেও ঘুরে বেড়ানোর জন্য নৌকার চাহিদা বাড়তে থাকে। ফলে নৌকাই উপার্জনের পথ হয়ে যায় কিছু মানুষের।  

এই মাঝি বলেন, গোটা লাল শাপলার বিলে এখন প্রায় শ খানেক নৌকা আছে, যেগুলো শুধু পর্যটকদের ঘোরাঘুরির জন্য। আর এসব নৌকা চালিয়ে শ খানেক মাঝি বর্ষার এ সময়টাতে জীবিকা নির্বাহ করে সংসার চালাচ্ছেন।

জব্বার মাঝি বলেন, ২-১ বছর হলো বাড়ির সামনে বিলের অংশে একটা ঘাটের মতো করেছেন। আকর্ষণের জন্য বিভিন্ন রঙের পতাকা দিয়ে সেটি সাজানো হয়েছে। এরপর নিজেসহ আরও কয়েকজন মিলে পাঁচটি নৌকার সমন্বয়ে একটি টিম করেছেন। ধারণক্ষমতা অনুযায়ী নৌকা ছোট ও বড় রয়েছে, সেই সঙ্গে বৃষ্টি ও রোদ থেকে রক্ষা পেতে সামিয়ানারও ব্যবস্থা রয়েছে। এই টিমের মাঝিরা সবসময় চেষ্টা করেন ঘুরতে আসা পর্যটকদের লাল শাপলার বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করাতে এবং আনন্দ দিতে।

জব্বার মাঝি নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, শাপলার বিলে পর্যটকদের জন্য নৌকা চালিয়ে ৫ সন্তান নিয়ে আগের থেকে ভালো আছি। জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধ ও মামলার কারণে কিছু দেনা হলেও আয়-রোজগার ভালো থাকায় তা নিয়া চিন্তা নাই। তবে জোর করে কিংবা রেট বেঁধে দিয়ে কাউকে জিম্মি করে উপার্জন করি না। কারও যদি ঘুরে ১০০ টাকা দিতে মন চায় তা-ও নেই। আবার কারও ২০০ মনে হলে তা-ও নেই। আগামী বছর নিজের নৌকার সংখ্যা যেমন বাড়ানোর ইচ্ছা আছে, তেমনি নৌকার সঙ্গে ট্রলার গড়ার চিন্তাও আছে।

অপর মাঝি ফজলুল হক বলেন, মোগো এই বিলে যে হাপলা অয় (শাপলা হয়), হেইহানেই হুগনার কালে (শুকনো সময়) ইরি ধানের আবাদ হয়। তয় আগে বর্ষায় মোগো (আমাদের) গ্রামের মানষে মাছ ধরা আর শাপলা তুইল্যা (তুলে) বাজারে বিক্রি হরা (করা) ছাড়া কোনো কাম হরতে পারতে না। আর হ্যাঁ দিয়া যে টাহা (টাকা) অইতো, হ্যাতে (তাতে) সোংসার চলতে না। য্যার লইগ্যা (যার জন্য) অনেকে অভাবের ঠ্যালায় (জন্য) দেনায় পরতো আবার অনেকে ভিনদ্যাশে গিয়ে বদলার কাম হরতে। তয় এহন এই শাপলার বিলে ঘুরাইয়াও টাহা কামায় অনেকে। এতে ইনকাম ভালো হওয়ায় নেত্য নেত্য (দিন দিন) নৌকা আর মাঝির সংখ্যা বাড়তাছে। আর এহন যারা মোরা আছি, হ্যারা নৌকা চালাইয়া ভালোই আছি। আবার পানি নাইম্যা গ্যালে জমি চইতে নামমু।

রবিউল ইসলাম নামের এক যুবক বাংলানিউজকে বলেন, উজিরপুরের সাতলা এলাকার শুরু থেকে আগৈলঝাড়ার বাগধার এ অংশ পর্যন্ত রাস্তার পাশে বিলধরে ৫-৭টি স্পটের মতোই গড়ে উঠেছে। যেসব জায়গায় বিভিন্ন ধরনের নৌকা রয়েছে। এসব নৌকায় প্রতিদিন শত শত পর্যটক বিলের পানিতে ভেসে বেড়ান। যেখানে লাল শাপলার মাঝ দিয়ে ছুটে চলে আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন। কিছু কিছু জায়গায় নৌকা নিতে দাম-দরের প্রয়োজন হয় আবার কিছু জায়গাতে নির্দিষ্ট করাই আছে।

এছাড়া এসব স্পটকে ঘিরে খাবারের দোকানসহ বাজারের মতো গড়ে উঠেছে বলেও জানান তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১
এমএস/জেএইচটি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।