ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আজও আসছেন শ্রমিকরা, দুর্ভোগের অন্ত নেই তাদের

সাভার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০২১
আজও আসছেন শ্রমিকরা, দুর্ভোগের অন্ত নেই তাদের

সাভার (ঢাকা): ‘কঠোর লকডাউন' এর ভেতর রোববার (০১ আগস্ট) থেকে রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানাগুলো খুলে দিয়েছে সরকার। হঠাৎ এই সিদ্ধান্তের পর কাজে যোগ দিতে গতকাল (৩১ জুলাই) সকাল থেকে শ্রমিকরা বিভিন্ন জেলা-থানা থেকে ঢাকামুখী আসতে শুরু করেছে।

রোববার সকালে কারখানা খোলার দিনও ঈদে বাড়ি ফেরা শ্রমিকদের ঢাকায় আসার সেই স্রোত সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে।

এদিকে গতকাল সারাদিন দুর্ভোগে যাত্রা শেষে সন্ধ্যায় গণপরিবহন খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কোনো কাজে লাগেনি অসহায় শ্রমিকদের। এখনো তারা মাইক্রোবাস-ট্রাকে করেই কর্মস্থলে আসছেন।

গাইবান্ধা থেকে আজ সকালে মাইক্রোবাসে করে আশুলিয়ায় এসেছেন মাদেজা ও তার মেয়ে সনিয়া। তারা দুজনই আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। সকালে মাইক্রোবাস থেকে নেমে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় আরএস টাওয়ারের নিচে বসে আছেন তারা। সারা পথ এতো কষ্ট করে গাদাগাদি করে আসতে পারলেও এখন আর গাড়ি পাচ্ছেন না।

বাড়ি থেকে ঢাকায় আসার বিষয়ে কথা হয় মাদেজার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমারা জানি আমাদের কারখানা ৫ আগস্ট খুলবে। সেই কারণে আমরা গাঁ ছেড়ে বসেছিলাম। হঠাৎ করে গত শুক্রবার মোবাইলে মেসেজ দিছে ১ তারিখ কারখানা খোলা। পরে সেদিন রাতেই আসবো কিন্তু গাড়ি পাইনি। গতকাল রাতে আবার গাড়ি পেয়েছি তবে ৩০০ টাকার ভাড়া ২০০০ টাকা দিয়ে আসলাম। এসে কি হলো তারপরেও আমরা কারখানায় যেতে পারলাম না। আজ আমাদের দুই জনেরই অ্যাবসেন্ট।

পাশে বসে থাকা আরেক নারী শ্রমিক সুফিয়া। তিনি আশুলিয়ার কাঠগড়ার চালার বাজার এলাকায় এক পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, যাওয়ার ব্যবস্থা তো ঠিক করে দিয়েছিলেন, আসার সময় এতো কষ্ট করালেন কেন। সরকার জানে না শ্রমিকরা দেশে চলে যাবে। আর শ্রমিকদের পোলাপান আছে বাপ-মা আছে তাদের সঙ্গে আমরা ঈদ করবে। আর যদি নাই যেতে দিত আগে থেকেই সেই ব্যবস্থায় নিত। আসার ব্যবস্থা করে দিলো না কে। কত কষ্ট করে আসলাম অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে তাউ আবার আধা রাস্তায় নামায় দেয়। অফিস অ্যাবসেন্ট হয়ে গেল।
নওগাঁ থেকে ট্রাকে এসেছেন মিলন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, 'হঠাৎ করে কারখানা খোলা, এটা কোনো কথা। আমারও তো মানুষ। তড়িঘড়ি করে ট্রাক দিয়ে ডবল ভাড়া দিয়ে আসলাম।

এদিকে খোঁজ নিয়ে ও বিভিন্ন পোশাক কারখানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক শ্রমিক কারখানায় উপস্থিত হতে পারেনি। গড়ে ধরলে ৭০ শতাংশ শ্রমিক কারখানায় এসেছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগ ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক সারোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এখনো অনেক শ্রমিক রাস্তায় পরে আছে। কারখানা চালু হলেও শ্রমিকদের অনুপস্থিতিতে ঠিক ঠাক কাজ হচ্ছে না। হঠাৎ করে এভাবে সমন্নয়হীন সিদ্ধান্তে শ্রমিকরা পরেছে চরম দুর্ভোগে। তারা আর্থিক ও মানুসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। অনেকেই চাকরি হারানোর আতঙ্কে যেভাবে পেরেছেন ঢাকায় এসেছেন। যারা দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করাটা আসলেই দুঃখজনক।

সড়কের নিরাপত্তার বিষয়ে সাভার ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ (টিআই এডমিন) আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, কাল সারাদিন কোনো গণপরিবহন সড়কে চলেনি। আজ সকাল থেকে কিছু কিছু পরিবহন চলছে। সড়কে কোথাও যানজট নেই। তবে বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের জটলা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।