ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাবা-মা-বোনকে খুন করে ৯৯৯ নম্বরে ফোন, বাকিদের খুনের হুমকি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৮ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২১
বাবা-মা-বোনকে খুন করে ৯৯৯ নম্বরে ফোন, বাকিদের খুনের হুমকি মেহেজাবিন মুন

ঢাকা: প্রচণ্ড ক্ষোভের জেরে পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী বাবা-মা ও বোনকে খুন করেন মেহজাবিন মুন। এরপর নিজেই জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে খুন করার তথ্য জানান পুলিশকে।

পুলিশ যেতে দেরি হলে নিজ স্বামী-সন্তানকেও খুনের হুমকি দেন তিনি।

শনিবার (১৯ জুন) সকালে খবর পেয়ে রাজধানীর কদমতলীর মুরাদপুর এলাকার একটি বাসা থেকে বাবা-মা ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন- মাসুদ রানা (৫০), তার স্ত্রী মৌসুমী ইসলাম (৪০) ও মেয়ে জান্নাতুল (২০)।

এ ঘটনায় সংকটাপন্ন অবস্থায় মেহজাবিন মুনের স্বামী শফিকুল ইসলাম ও তাদের শিশু সন্তান ইফতিয়াকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে শফিকুলকে মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে ওই শিশুটি আশঙ্কামুক্ত রয়েছে, তাকে ঢামেকের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে মেহজাবিন মুনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে, মুন নিজেই এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছেন।

মেহজাবিন মুনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ জানায়, শুক্রবার (১৮ জুন) দিনগত রাতের কোনো এক সময় খাবারের সঙ্গে পরিবারের সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ার মুন। মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ওষুধে সবাইকে অচেতন করে বাবা-মা ও বোনের হাত-পা বাধা হয়। এরপর শ্বাসরোধ করে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করেন মুন।

শনিবার সকাল ৮টায় খুনি মেহজাবিন মুন নিজেই জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে খুনের বিষয়টি জানায়। ফোনে তিনি পুলিশকে বলেন, আমি আমার বাবা, মা ও ছোট বোনকে খুন করেছি। আপনারা দ্রুত আসুন, আসতে দেরি করলে আমার স্বামী ও মেয়েকেও মেরে ফেলবো। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কদমতলী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৩টি মরদেহ উদ্ধারসহ মুনকে আটক করা হয়। একইসঙ্গে মুনের স্বামী ও সন্তানকে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।

কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর বলেন, সকালে পুলিশ ৯৯৯ নম্বর থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। আটক মুন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিজেই ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বাবা-মা ও বোনকে হত্যার কথা জানিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন। প্রাথমিকভাবে তিনি আমাদের কাছে এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, আটক মুনের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, বাবা-মা-বোন ও তার স্বামীর প্রতি প্রচণ্ড ক্ষোভ থেকে সে নিজেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তার এমন ক্ষোভের কারণ বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।

নিহতদের স্বজনরা জানান, আটক মেহজাবিন মুনের স্বামী শফিকের সঙ্গে তার ছোট বোন জান্নাতুলের অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। এ ঘটনায় প্রায়ই তাদের পারিবারিক কলহ লেগে থাকতো। এ নিয়ে কয়েকবার বিচার-সালিশও হয়েছে। এ কারণে মেহজাবিন পরিবারের লোকদের খুন করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শফিকুল ইসলাম জানান, তাদের বাসা কদমতলীর বাগানবাড়ি এলাকায়। শুক্রবার রাত ৯টার দিকে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে শ্বশুড়বাড়ি যান। যাওয়ার সময় আম-কাঁঠাল কিনে নেন। রাতে মেহজাবিন মুন তাদের সবাইকে নুডুলসসহ অনেক কিছু খেতে দেয়। বাসার সবাই খেয়েছে, কিন্তু পরে কি হয়েছে এ বিষয়ে তার কিছুই স্পষ্ট নয়। স্ত্রী মুনের সঙ্গে গত ৩ মাস ধরে তার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিলো না। মুনের সঙ্গে তার বাবা-মায়েরও সম্পর্ক ভালো ছিল না বলে জানান শফিকুল।

এর আগে পুলিশ জানায়, মরদেহগুলো হাত-পা বাধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বিষাক্ত কিছু প্রয়োগের আলামত পাওয়া গেছে। আলামতগুলো পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করেছে পুলিশের ক্রাইম সিন ইউনিট।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কদমতলী মুরাদনগর এলাকায় একটি বাসায় মাসুদ রানা তার স্ত্রী ও এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন। অপর মেয়ে বিবাহিত মুন বাগানবাড়ি এলাকায় স্বামী ও ৫ বছরের মেয়েকে নিয়ে বাসায় বসবাস করতেন।

আরও পড়ুন>>একই পরিবারের ৩ জনের মরদেহ: ধারণা পারিবারিক কলহের জের

বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২১
এজেডএস/পিএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।