ঢাকা, বুধবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ মে ২০২৪, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

শহীদদের নিয়ে কটূক্তি

তিন ঘণ্টা খালেদার বাড়ি ঘেরাও

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
তিন ঘণ্টা খালেদার বাড়ি ঘেরাও ছবি : শোয়েব মিথুন/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে কটূক্তি করায় বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বাসভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি পালন করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল সোয়া দশটা থেকে বেলা সোয়া একটা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার এ ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ নির্মূল কমিটির নেতাকর্মীরা।



ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানান, খুব শিগগিরই জাতীয় সংসদে ‘মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার অপরাধ আইন’ প্রণয়নের প্রস্তাব করা হবে। এতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যারা বিভ্রান্তিকর তথ্য দেবেন বা কথা বলবেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

সকাল থেকেই হাজারো মুক্তিযোদ্ধা-জনতা গুলশান-২ গোল চত্বরে অবস্থান নিয়ে ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে কটূক্তি করায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা।

পাশাপাশি চলে সমাবেশ।

সমাবেশে তারানা হালিম আরও বলেন, খালেদা জিয়া ও তার নেতাকর্মীরা ক্রমাগতভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন। আমরা অনেক সহ্য করেছি। আর সহ্য করার সময় নেই।

ঘেরাও সমাবেশে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিএনপির নেতারা যে কটূক্তি করেছেন, তার জন্য তাদের জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতাকে যারা অস্বীকার করেন, তারা বাংলাদেশকেই অস্বীকার করেন। এজন্য আইন তৈরি করে এই দেশদ্রোহীদের বিচারের আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হবে।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কিন্তু ৩০ লাখ শহীদের রক্ত অস্বীকার করেছে বিএনপি। তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হওয়া উচিত। এ অপরাধের জন্য জনগণের কাছে তারা ক্ষমা না চাইলে আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি দেবো।

মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী বলেন, খালেদাকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি না। তিনি পাকিস্তানের প্রেতাত্মা। খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন না। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও দেশদ্রোহের মামলা হওয়া উচিত।

দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই খালেদা জিয়া নাকি আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি আমাদের দেশের অনেক অপূরণীয় ক্ষতি করেছেন। দেশের জনগণ তাকে বর্জন করেছে।

একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ বলেন, ‘স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে আমরা সবাই এখানে একত্রিত হয়েছি। আমরা চাই, এ ইতিহাস বিকৃতির অবসান ঘটুক’।
 
তিনি বলেন, ‘যারা মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করেন, তাদের জন্য একটি অপরাধ আইন প্রণয়ন করা হোক। সেই আইনেই তাদের বিচার হবে।
 
তিনি বলেন, ‘দেশের যেকোনো জায়গা থেকে একমুঠো মাটি নিয়ে চিপড়ালেই শহীদদের রক্ত পাওয়া যাবে। এমন একটি আবেগের জায়গা হচ্ছে বাংলাদেশ’।
 
‘বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম রাষ্ট্র, যেটি আত্ননিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠা করে স্বাধীন হয়েছে। অর্থাৎ আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছি। এই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে কেউ যদি এই মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের নিয়ে বাজে কথা বলেন, তাদের সংখ্যা নিয়ে কেউ যদি প্রশ্ন তোলেন, তবে আমাদের জাতীয় আবেগকে নাড়া দেয়’।
 
শহীদদের সংখ্যা নিয়ে কটূক্তির দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আজাদ ভার্সেস ডেভিড বার্গম্যানের মামলার উল্লেখ করে তুরিন আফরোজ বলেন, এ মামলার বিষয়ে তখনকার ট্রাইব্যুনাল-২ বলেছিলেন, ‘সংখ্যা দিয়ে আসলে মামলার মেরিট কোনোভাবেই প্রভাবিত করা সম্ভব নয়। গণহত্যা একজন মানুষকে হত্যা করলেও হয়। আঘাত একজনকে করলেও মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়’।
 
‘কিন্তু এটি হচ্ছে আমাদের জাতীয় আবেগের জায়গা। বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রে তাদের শহীদদের সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা বলা সম্ভব নয়’- বলেন তিনি।  

৩০ লাখ শহীদদের সংখ্যার বিষয়ে যারা বলেন, বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ গবেষণা হওয়া উচিত, তাদের আমি বলবো, এই গবেষণা করার জায়গাটি কোথায়?
 
‘১৯৮১ সালে ইউএন হিউম্যান রাইটস কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ১২ হাজার মানুষ শহীদ হয়েছেন। আমরা ২৬৭ দিন যুদ্ধ করেছি। ২৬৭ দিন যদি ১২ হাজার করে মানুষ মারা যান তবে অংক কষে দেখলেই এর ফল পাওয়া যাবে। সেখানে শহীদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩২ লাখ’।
‘সুতরাং এই সহজ বিষয়টি একজন ৮ম শ্রেণি পাস করা নারী কেনো বুঝতে পারছেন না, এটা আমার বোধগম্য নয়’- বলেও উল্লেখ করেন তুরিন আফরোজ।
 
ঘেরাও সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বক্তব্যে প্রমাণিত হয়, তিনি পাকিস্তানের একজন এজেন্ট। তাকে এই দেশে কোনোভাবেই থাকতে দেওয়া উচিৎ নয়। খালেদা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অস্বীকার করেছেন। তিনি ও তার নেতাকর্মীরা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি, পাকিস্তানের দালাল’।
 
খালেদা জিয়াকে আইএস, জেএমবি ও জামায়াতের আমির আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘খালেদা বাংলাদেশে বসে জঙ্গিদের মদদ দিচ্ছেন। তিনি দেশবিরোধী ও রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ করছেন। তাকে বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি’।

গত ২১ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া। পাশাপাশি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানসহ পুরো মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই নানা কটূক্তি করেন তিনি।

ঘেরাও সমাবেশকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে ডিএমপি কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে রাখে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গুলশান-২ গোল চত্বর মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়। রাস্তার দুই পাশে তিন স্তরে অবস্থান নেন পুলিশ সদস্যরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
এসজেএ/জেডএফ/আরএম/এএসআর

** সংসদে ‘মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার অপরাধ আইন’ প্রণয়নের প্রস্তাব করা হবে

** পুলিশের তিন স্তরের নিরাপত্তা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।