ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২১ রবিউস সানি ১৪৪৭

জাতীয়

নিয়োগ–দুর্নীতি–রেশনিংসহ ১৩ দাবি রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৩০, অক্টোবর ১৪, ২০২৫
নিয়োগ–দুর্নীতি–রেশনিংসহ ১৩ দাবি রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির

বাংলাদেশ রেলওয়ের চলমান অব্যবস্থাপনা, কর্মকর্তা–কর্মচারী ও পোষ্যদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা, নিয়োগে স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ, টিএলআর ও প্রকল্পের গেটকিপারদের চাকরি স্থায়ীকরণ, ইঞ্জিন–কোচ সংকট মোকাবিলা, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য রেশনিং ও ঝুঁকি ভাতা প্রদান এবং আউটসোর্সিং বাতিলসহ ১৩ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব দাবি জানানো হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান মনির।

সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী রেলওয়ে শ্রমিক কর্মচারী দলের সাধারণ সম্পাদক এম. আর. মঞ্জু, বাংলাদেশ রেলওয়ে কারিগর পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এস. কে. বারি, বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন, রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির উপদেষ্টা মো. ইউসুফ রশিদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে আজ শুধু যাতায়াতের মাধ্যম নয়— এটি লাখো পরিবারের জীবনের সঙ্গে জড়িত একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। তাই এর সংস্কার, স্বচ্ছতা এবং মানবিক পুনর্গঠন এখন সময়ের দাবি।

বক্তারা বলেন, একসময় দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সেবাখাত ছিল রেলওয়ে। অথচ বর্তমানে এটি প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা, জনবল সংকট, ইঞ্জিন–কোচ ঘাটতি ও নীতিগত অনিশ্চয়তায় ভুগছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং তাদের পরিবার এখনো ন্যায়সংগত নিয়োগ ও সামাজিক সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত।

তারা আরও বলেন, রেলওয়ের সংকট কেবল প্রশাসনিক নয়—এটি মানবিক ও নৈতিক সংকটও। রেলওয়ে পুনরুজ্জীবনে প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাপনা, যোগ্য নেতৃত্ব ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা জরুরি। রেলওয়ে কর্মচারীদের অধিকার, পোষ্যদের ভবিষ্যৎ এবং প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকার জন্য জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য।

তারা রেলওয়ে পুনর্গঠনে ‘ন্যায়ভিত্তিক সংস্কার ও মানবিক পুনর্জাগরণ আন্দোলন’ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির ১৩ দফা দাবি:

১. নিয়োগে স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ: নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও জটিলতা বন্ধ করে স্বচ্ছ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
২. কর্মকর্তা–কর্মচারী ও পোষ্যদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা: রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হিসেবে তাদের অধিকার নিশ্চিত করা।
৩. নিয়োগ বিধিমালা ২০২০ সংশোধন: সংশোধন কমিটি গঠনের পরও পুরনো বিধিমালা দিয়ে নিয়োগকে ‘মালাফাইড ইন্টেন্ট’ হিসেবে গণ্য করার আহ্বান।
৪. কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী কর্মচারীর পোষ্যদের নিয়োগ: মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক দায়িত্ব হিসেবে তৃতীয়–চতুর্থ শ্রেণিতে সরাসরি নিয়োগের দাবি।
৫. অডিট আপত্তি নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ বন্ধ: তদন্তের আগেই অডিট আপত্তিকে দুর্নীতি হিসেবে প্রচার বন্ধে আইনি পদক্ষেপের দাবি।
৬. ইঞ্জিন সংকট নিরসন: পরিকল্পিত রক্ষণাবেক্ষণ, যন্ত্রাংশ আমদানি ও স্বচ্ছ ক্রয় প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের দাবি।
৭. রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর রেশনিং ও ঝুঁকি ভাতা: অবিলম্বে বাস্তবায়নের আহ্বান।
৮. সংশোধনাধীন বিধিমালা প্রয়োগের বৈধতা প্রশ্ন: কমিটি গঠনের পর পুরনো বিধিমালা কার্যকর রাখা প্রশাসনিক অসঙ্গতি।
৯. কর্মচারীবান্ধব নতুন বিধিমালা প্রণয়ন: যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও মানবিক দিক বিবেচনায় নতুন নীতিমালা তৈরির দাবি।
১০. বদলি ও পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা: সংশোধন কমিটি গঠনের পরও বদলি–নিয়োগ অব্যাহত রাখা আইনি ঝুঁকিপূর্ণ।
১১. অপেক্ষমাণ তালিকার নামে নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ: প্রকাশ্য বিজ্ঞপ্তি ও লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগের দাবি।
১২. টিএলআর ও প্রকল্পের গেটকিপারদের চাকরি স্থায়ীকরণ: দীর্ঘদিনের কর্মীদের মানবিক বিবেচনায় স্থায়ী করার আহ্বান।
১৩. আউটসোর্সিং প্রক্রিয়া বাতিল: আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগের কারণে বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে রেলওয়ে— এ প্রক্রিয়া স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি।

ডিএইচবি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।