সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে দেশে বর্তমানে কোনো ধরনের জঙ্গিবাদ নেই, তাহলে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) মতো প্রতিষ্ঠান থাকার কোনো যৌক্তিকতা আছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. রেজাউল করিম বলেছেন, নেই বললে আগামীতে কেউ করবে না, এটার নিশ্চয়তা কি আমরা কেউ দিতে পারি? সে ক্ষেত্রে আমাদের এখানে স্টপ থাকার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের আরও সিরিয়াসলি কাজ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক জোনে এটিইউ’র সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) নবনিযুক্ত প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি রেজাউল করিম বলেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয়, সহনশীল মুসলিম দেশ, যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী।
জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদ, মাদক এবং বিশেষ করে যুবকদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অনলাইন ও সাইবার অপরাধ থেকে দেশকে মুক্ত করার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশের মাটি ও মানুষ সবার—তাই এসব সমস্যা মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে বিশেষায়িত ইউনিটের ভূমিকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি জনসাধারণের সহযোগিতা, বিশেষ করে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সাধারণ মানুষকে সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে ‘ইনফোমেট’ অ্যাপ এবং একটি যোগাযোগ নম্বর চালু করা হয়েছে, যেখানে তথ্যদাতার গোপনীয়তা সর্বোচ্চ গুরুত্বে রাখা হবে।
রেজাউল করিম আরও উল্লেখ করেন, একটি মাত্র সন্ত্রাসী ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
স্বল্পশিক্ষিত ও বিভ্রান্ত মানুষ কীভাবে ভুল আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়—২০০৫ সালের সিরিজ বোমা হামলার উদাহরণ দিয়ে তিনি তা ব্যাখ্যা করেন। তার ভাষ্যে, সব ধর্মই শান্তির শিক্ষা দেয়; কোনো ধর্মই উগ্রবাদ বা সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না। এ প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যমকে সঠিক বার্তা প্রচার এবং ধর্মকে অপব্যবহারকারী বিভিন্ন গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করার আহ্বান জানান তিনি।
সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে দেশে বর্তমানে কোনো ধরনের জঙ্গিবাদ নেই, তাহলে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের মতো প্রতিষ্ঠান থাকার কোনো যৌক্তিকতা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বলেন, নেই বললে আগামীতে কেউ করবে না, এটার নিশ্চয়তা কি আমরা কেউ দিতে পারি? সে ক্ষেত্রে আমাদের এখানে স্টপ থাকার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের আরও সিরিয়াসলি কাজ করতে হবে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এটিইউ প্রধান বলেন, আমাদের দেশের মানুষ উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাসী নয়। তবে কখনো কখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে বা ভেজাল কোনো ব্যক্তির খপ্পরে পড়ে কিংবা দেশি-বিদেশি চক্রান্তে পড়ে কেউ কেউ বিচ্যুত হতে পারে, এই আশঙ্কা থেকেই যায়। সে কারণে এসব বিষয়কে আমরা নজরদারিতে রাখব, যাতে করে ভবিষ্যতে কোনো ধরনের সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের সৃষ্টি না হতে পারে।
বর্তমান সরকার বলছে বিগত সরকারের আমলে জঙ্গি দমনের নামে নাটক হতো, এটিইউ’র অনেক অফিসার পলাতক আছেন এসব কারণে, দেশে জঙ্গিবাদ বর্তমানে আছে কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, পেছনে কী হয়েছে না হয়েছে আপনারাও (সাংবাদিক) জানেন, আমরাও জানি। আমরা বলতে চাচ্ছি, সত্য সত্যই আর মিথ্যা মিথ্যাই। সেই জায়গাটায় আমরা অবিচল থাকব। কেউ অপরাধ করে থাকলে সেই অপরাধের কোনো ছাড় নাই। আমরা জঙ্গিবাদ নিয়ে দেশে এরকম কিছু এখনো দেখি নাই। কেউ যদি স্বপ্রণোদিত হয়ে কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে বিপথে চলে যায়, সে জায়গায় আমাদের কাজ করার সুযোগ আছে। সেটাই আমরা নজরদারি করব কেউ হঠাৎ করে বিপথগামী হয়ে যাচ্ছে কি না। পেছনে না যেয়ে আমরা ভবিষ্যতের দিকে এগোতে চাই। আমি সিলেটে মহানগরের কমিশনার থাকাকালীন কোথাও উগ্রবাদ কিংবা সন্ত্রাসবাদ দেখি নাই।
বর্তমানে নির্দেষ্ট করে জঙ্গিবাদের অবস্থান কী ও মালোশিয়াতে গ্রেপ্তার ৩৬ জনের বিষয়ে জানতে চাইলে এটিইউ প্রধান বলেন, প্রত্যেককে আমরা আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা সবাই কিন্তু শ্রমিক শ্রেণির মানুষ। জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জেনেছি, তারা কেউ ওইরকমভাবে জড়িত ছিলেন না। তারা মনে করেছিলেন দুঃস্থ ও অসহায় আনুষজনকে সহযোগিতা করতে হবে। সেই জন্য মালয়েশিয়ার সরকারও তাদের ক্লিয়ার করে দিয়েছে। তবে এর পেছনে কারা এসব বিষয়ে জানতে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলমান রয়েছে।
জঙ্গিবাদের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি তো মনে করি বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় ও সম্প্রীতির দেশ। এদেশে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের কোনো স্থান নেই। আমরা যতটুকু পর্যালোচনা করি তাতে মনে হচ্ছে, দেশে এরকম কোনো কাজ কেউ করছে না। তারপরও আমরা সতর্ক আছি, কোথাও যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনার উদ্ভব ঘটতে না পারে।
এমএমআই/এমজেএফ